মোবাইল ফোন ব্যবহারে শুক্রাণু উৎপাদন কমে?

মোবাইল ফোন ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগে অনেক কথা বললেও ইদানীং ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর রিসার্চ অন ক্যানসারের এক গবেষণায় কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে, সেখানে দেখা গেছে আশঙ্কাজনক কিছু বিষয়।
এ জরিপে সাড়ে চার হাজার মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী অংশ নেয়। তাদের মধ্যে প্রান্তিকভাবে মাথার যেদিকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়, সেদিকে ব্রেন টিউমারের একটি ইতিবাচক আলামত দেখা যায়। একটি আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থার মতে, অতিমাত্রায় রেডিয়েশনের কারণে ব্রেইন ক্যানসার হতে পারে।
মোবাইল ফোন যেভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে
মোবাইল ফোন থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয় রশ্মির বা রেডিয়েশনের প্রভাবে মানবদেহের ক্ষতি হয়ে থাকে। মোবাইল ফোন হতে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তা তথা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন নির্গত হয়। এ রেডিয়েশনে এমন মাত্রায় বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় শক্তি আছে, যেটি থেকে অণু-পরমাণুকে বিচ্ছিন্ন করতে এবং মানবদেহের রাসায়নিক বিক্রিয়াকে প্রভাবিত করে। এতে কোষের স্বাভাবিক কার্যক্রম নষ্ট হয়। এ ছাড়া তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য কি করে।
মোবাইল ফোনের তাৎক্ষণিক স্বাস্থ্যঝুঁকি
১. মাথাব্যথা, মাথা ঘোরানো, মনোযোগ নষ্ট করে
২. চোখে ব্যথা, চোখ দিয়ে পানি পড়া
৩. কানের সমস্যা, কানে ঝিমঝিম করা, কানের ভেতরে ব্যথা
৪. সব সময় ক্লান্ত ভাব অনুভব করা
দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি
১. চোখের দৃষ্টিশক্তি নষ্ট করে
যে দূরত্বে আমরা বইয়ের লেখা পড়ি, যার কম দূরত্বে মোবাইলের লেখা বা ছবি দেখা হয়, যা সবার দৃষ্টি শক্তি নষ্ট করে।
২. ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে
রাতে শোয়ার সময় বালিশের নিচে অথবা বিছানায় মোবাইল নিয়ে শোবেন না। এতে মোবাইল দেহের অনেক কাছকাছি থাকে বলে দেহে এর প্রভাব পড়ে।
৩. মানসিক চাপ বাড়ায়
গবেষণায় দেখা গেছে, স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা ২৫ ভাগ পর্যন্ত বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভোগেন।
৪. হার্টের সমস্যা সৃষ্টি করে
মোবাইল ফোন শার্টের পকেটে রাখার কারণে হার্টের নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়।
৫. শুক্রাণুর গুণগত মান ও পরিমাণ হ্রাস
প্যান্টের পকেট বা বেল্টের কাছাকাছি মোবাইল ফোন রাখার কারণে ২৫ ভাগ শুক্রাণু বা স্পার্মের উৎপাদন কম হয়।
৬. শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া
চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, যাঁরা দৈনিক দুই-তিন ঘণ্টার চেয়ে বেশি ফোনে ব্যস্ত থাকেন, তাঁদের তিন থেকে পাঁচ বছরের মাথায় আংশিকভাবে শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে।
৭. মস্তিষ্কের ক্যানসার
মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে আমাদের মস্তিষ্কের একটা অংশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এতে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মগজেও থাকে তার প্রতিক্রিয়া। তাই ব্রেইন টিউমার, ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে।
স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধে যা করবেন
১. মোবাইল ফোনকে যতটা সম্ভব শরীর থেকে দূরে রাখতে হবে।
২. ঘুমানোর সময় মোবাইল মাথা থেকে দূরে রাখতে হবে।
৩. টানা দীর্ঘ সময় মোবাইলে কথা বলা উচিত নয়।
৪. কানের কাছে কথা না বলে স্পিকারে কথা বলুন।
৫. মোবাইলে কথা কম বলে বেশি মেসেজ ব্যবহার করুন।
৬. মোবাইল যতটা সম্ভব শিশুদের থেকে দূরে রাখা ভালো।
৭. বাসায় ল্যান্ডফোন ব্যবহার করুন।
৮. কথা বলার সময়ের দৈর্ঘ্য কমাতে হবে। অথবা বেশি সময় কথা বলার ক্ষেত্রে কান পরিবর্তন করে কথা বলতে হবে।
৯. একটানা অবশ্যই ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি কথা বলা ঠিক হবে না।
১০. প্যান্ট বা শার্টের পকেটে ফোন না রেখে হাতে রাখা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ।
১১. শিশুদের মোবাইল ফোনের অপকারী দিকগুলো বোঝাতে হবে এবং মোবাইল ফোনে দীর্ঘ সময় কার্টুন, গেমস দেখা থেকে বিরত রাখতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।