নাকের যত সমস্যা
আমাদের নাকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে নাকের বাঁকা হাড়, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, সাইনোসাইটিস ইত্যাদি। আজ ৫ জুন এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৫৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক-কান-গলা বিভাগের হেড নেক সার্জারি ইউনিটের পরামর্শক ডা. সৈয়দা শারমিন জামাল।
প্রশ্ন : সাধারণত কী কী ধরনের সমস্যা নিয়ে রোগীরা আপনাদের কাছে আসেন?
উত্তর : বেশির ভাগ রোগী অভিযোগ নিয়ে আসেন নাকের মধ্যে পলিপাস হয়েছে। আসলে বিষয়টি তা নয়, নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়ার সময় কোনোরকম বাধা পেলেই তাঁরা সচেতন হয়ে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে আসেন। সাধারণত যে সমস্যাগুলো নিয়ে আসেন, এর মধ্যে নাকের মধ্যভাগের হাড়টি বাঁকা, যেটাকে ‘সেপটার্ম’ বলা হয়, এটা কোনো একদিকে বাঁকা হয়ে আছে। একদিকে যদি নাকের হাড়টা বাঁকা থাকে, অন্যদিকে মাংসপেশিগুলো ফুলে যায়, যেটাকে আমরা ‘হাইপার ট্রোফিটারপিনাইট’ বলি। এ দুটো মিলিয়ে রোগীরা নাক বন্ধ ভাব অনুভব করেন। এটা একটা কারণ।
আরেকটি কারণ হচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে অনেকের নাকে অ্যালার্জিজনিত হাঁচি, সর্দি এসব সমস্যা লেগে থাকে। এটাকে সাধারণত আমরা বলি, ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’। এই রাইনাইটিসের জন্য নাকের মধ্যে যে স্বাভাবিক মিউকোসাল সারফেজগুলো থাকে, সেগুলো ফুলতে থাকে। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় কিছু পলিপয়েড টিস্যু, যাকে ‘নেজাল পলিপ’ বলি, সে ক্ষেত্রে আমরা হয়তো অন্যভাবে চিকিৎসা করি। কিন্তু প্রাথমিকভাবে দেখা যায় যে রোগীর শ্বাস বন্ধ লাগছে। রোগীরা বলেন, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না, সব সময় সর্দি থাকে, হাঁচি হয় অথবা ধুলোবালিতে গেলে হাঁচি হয়। আর মাথাব্যথা হয়।’ এটা হচ্ছে সেকেন্ডারি। দীর্ঘদিন নাক বন্ধ থাকলে, আমাদের সাইনাস যেগুলো থাকে, যেখানে বাতাস থাকার কথা, সেখানে ইনফেকশন হয়ে যায়। ইনফেকশন হলে আমরা সাইনোসাইটিস বলি। এ জাতীয় সমস্যাগুলো নিয়ে রোগীরা বেশি আসেন।urgentPhoto
প্রশ্ন : রোগীরা যখন আপনাদের কাছে আসেন, প্রাথমিকভাবে আপনারা কী কী সমস্যা দেখে নিশ্চিত হন তাঁর কোন ধরনের সমস্যা হয়েছে?
উত্তর : প্রাথমিকভাবে যদি নাক বন্ধ ভাব হয়, তখন প্রথম পরীক্ষাতেই আমরা দেখি এটাকে হাপার ট্রোফিটারমিনেট, নাকের মাংসপিণ্ডগুলো ফুলে বড় হয়ে গেছে, নাকি নাকের পর্দাটা মাঝখানে বাঁকা। এর পরে আমরা একটি এক্স-রে করাই। সাধারণ একটা এক্স-রে করলে যেকোনো সমস্যাই বোঝা যায়। তবে সমস্যা যখন জটিল হয়ে যায়, তখন আলাদা বিষয়। সে ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান, ফাংশনাল এন্ডোস্কোপি, সাইনাস সার্জারির দিকেও যেতে হতে পারে।
প্রশ্ন : জটিলতার বিষয়টি বলছিলেন, কোন কোন ক্ষেত্রে জটিলতাগুলো হতে পারে?
উত্তর : প্রথমত, যদি নাকের পার্টিশনটা বাঁকা হয়, সেটা ঠিক করে দিলে রোগী অনেকটাই ভালো হয়ে যায়। আরেকটি হচ্ছে ক্রনিক সাইনোসাইটিস। তাঁর বারবার বাইরের ধুলা থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে অ্যালার্জির যেমন বিভিন্ন স্প্রে আছে, অ্যান্টিহিসটামিন আছে, ওই সব চিকিৎসায় যাই। যখন এই চিকিৎসাগুলো করার পরও কাজ না করে, সে ক্ষেত্রে ফাংশনাল এন্ডোস্কোপি সাইনাস সার্জারি করি। এটাও সহজ, এটাকে আমরা তেমন জটিল বলব না। তবে এটি একটি বিশেষায়িত অস্ত্রোপচার। এটা করে সাইনোসাইটিস ভালো করা সম্ভব। আর যদি একিউটস পর্যায়ে থাকে সাইনোসাইটিস, সে ক্ষেত্রে সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে দিই। এগুলো দিলে দেখা যায়, রোগটা হয়তো ক্রনিকের দিকে যাচ্ছে না।
যাঁদের ধুলাবালিতে অ্যালার্জি, তাঁদের মাস্ক ব্যবহার করতে বলি। একটু গরম পানি দিয়ে নাক ধুয়ে ফেলতে হবে। এমনকি একটি ছোট পাত্রে হালকা গরম পানি নিয়ে একটু ভাপ দিলেও রোগী ভালো বোধ করবেন। এটি ঘরে বসেই করা যায়।
প্রশ্ন : বাঁকা নাকের সার্জারির ক্ষেত্রে অনেক ভয় কাজ করে। নাকের অস্ত্রোপচার করা ঠিক হবে কি না। এটা সারা জীবনের বিষয়, বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। আপনার কী পরামর্শ হবে এ ধরনের রোগীর ক্ষেত্রে?
উত্তর : সেপটাল ডেভিয়েশ অনেকেরই থাকে। তবে যতক্ষণ না বড় সমস্যা হয়, যেমন—সব সময় মাথাব্যথা করা, চোখ ব্যথা করা, মাড়ি ব্যথা করা বা দাঁত ব্যথা থাকা। এ ধরনের জটিলতা যদি কারো না থাকে, তবে সার্জারির দিকে যাই না। যদি দেখি অন্যান্য ফাংশনাল বিষয় কম থাকে, সে ক্ষেত্রে আমরা অস্ত্রোপচার করি। তবে অস্ত্রোপচারগুলো খুব জটিল হয় না। নাকের ভেতর দিয়ে করা হয়। সে ক্ষেত্রে বাইরের দিকে সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে, এ রকম ভয় পাওয়ার কিছু নাই; বরং অস্ত্রোপচারটি না করাতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা হতে পারে। যখন রোগী সমস্যা বোধ না করছে, তার আগে আমরা অস্ত্রোপচার করি না।
আর হাইপারট্রোফিটারমিনেট, যেখানে মাংসপিণ্ডটা বড় হয়ে যাচ্ছে, এখানে অনেক ভালো স্প্রে এসেছে, যেটাতে অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে। অ্যালার্জি নিয়ন্ত্রণ হলে স্বভাবতই হাইপারট্রোফি আর হচ্ছে না। আর যদি হয়েই যায়, তাহলে তাপ দিয়ে ফোলাটাকে কিছুটা ছোট করে দিতে পারি। এটা পাঁচ-দশ মিনিটের ব্যাপার। সেটা খুব বড় রকমের সার্জারি নয়। একদম যখন শেষ পর্যায়ে আসে, তখন সার্জারির পরামর্শ দিই।
প্রশ্ন : নাকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য যে মানুষ অপচিকিৎসকের কাছে যান, তাদের কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?
উত্তর : পলিপাসটা হলো এমন একটি জিনিস, যদি এটা হয়েই যায় তবে বিভিন্ন ধরনের কবিরাজি চিকিৎসা দিয়ে, ড্রপ দিয়ে নাককে ব্ন্ধ করে দেয়। এমনকি এমনও হয়েছে, এর ফলে একটি নাকের ফুটো বন্ধ হয়ে গেছে। তাই এ ধরনের চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসা নিলে জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন রোগীরা।
আরেকটি হলো অনেক প্রাথমিক চিকিৎসা তারা প্রথমেই দিয়ে দেবে, যাতে পলিপাস রোগটি না বাড়ে। আর এর প্রতিরোধে বিভিন্ন অ্যালার্জিজনিত কারণ, যার ফলে রোগটি হয়, সেগুলো রোগীদের এড়িয়ে যেতে হবে।