ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ কেন হয়
বিভিন্ন কারণে গর্ভধারণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়। এর ফলে মা ও শিশু উভয়ের জীবনই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। আজ ১০ মে এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৬২তম পর্বে এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের প্রসূতি এবং ধাত্রী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস মহল রুনি।
প্রশ্ন : সাধারণত একজন মা যখন গর্ভধারণ করেন, তখন বিভিন্ন বিষয় পরীক্ষা করে আপনারা নিশ্চিত করেন এটা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ কি না। বিষয়টি আসলে কী? কাদের, কখন আপনারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভধারণ বলছেন?
উত্তর : গর্ভধারণ মানেই একটি ঝুঁকি। মায়ের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান। এর পরেও আমরা উচ্চ ঝুঁকি বলতে বুঝি, মায়ের বয়স যদি ১৬ বছরের নিচে হয় অথবা একজন মা যদি ৩০ বছরের পরে হন। অথবা একজন মায়ের যদি ডায়াবেটিস থাকে। কিংবা তাঁর রক্তচাপ অনেক বেশি। কিংবা ওই মায়ের যদি বেশি ওজন হয়। তার পর অনেক সময় দেখা যায়, সেই মায়ের আগে চারটি কিংবা পাঁচটি বাচ্চা রয়েছে, হৃদরোগ আছে মায়ের। এ ধরনের অনেক কারণ আছে, যাকে আমরা বলি উচ্চ ঝুঁকি গর্ভধারণ।urgentPhoto
প্রশ্ন : আমরা সুনির্দিষ্টভাবে দুটি বিষয়ে জোর দিতে চাই। একটি ডায়াবেটিস মেলাইটাস, আরেকটি হাইপার টেনশন। যদি কোনো মায়ের ডায়াবেটিস থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে তাঁদের আপনারা ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন কেন?
উত্তর : প্রথমে বলি গর্ভাবস্থার ডায়াবেটিসের কথা। একজন মাকে দুটো ধরনে ভাগ করেছি। যে গর্ভাবস্থায় প্রথম তাঁর ডায়াবেটিস ধরা পড়েছে, যেটার নাম দিয়েছি আমরা জেসটেশনাল ডায়াবেটিস। সাধারণত এটা গিয়ে ধরা পড়ে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে। দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাগে তাঁর হয়তো ধরা পড়েছে, তখন একটা মাত্রার ওপরে গেলে তাকে আমরা বলছি ডায়াবেটিস।
আরেকটি হলো আগে থেকে তাঁর ডায়াবেটিস ছিল, সে হয়তো নিয়ন্ত্রণ করেছে, তখন তাঁর গর্ভধারণ হয়েছে।
এর ঝুঁকিটা হলো, এটা কিছুটা বাচ্চার ওপর প্রভাব পড়ে। কিছু মায়ের ওপর প্রভাব পড়ে। বিশেষত, যে মায়ের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে, তাঁদের বেলায় দেখা যায়, তখন অস্বাভাবিক শিশু জন্মগ্রহণের অনেক আশঙ্কা থাকে। যদি ডায়াবেটিস থাকে, মায়ের তখন দেখা যায়, এই বাচ্চা হয়তো অনেক বড় হচ্ছে, প্রায় চার কেজির মতো। বাচ্চার সঙ্গে তার পেটে হয়তো প্রচুর পানি। এই মায়ের গর্ভধারণের সময় অনেক কষ্ট হয়। প্রসবের সময় বিরাট একটা ঝুঁকির ব্যাপার। প্রসবের সময় বাচ্চাটা আটকে যেতে পারে। অথবা প্রসব হয়তো করানো হচ্ছে সিজারের মাধ্যমে, বাচ্চা হয়তো দেখতে বড়। কিন্তু ব্যবহার স্বাভাবিক শিশুর মতো হয় না। দেখা গেল হয়তো চার কেজি ওজনের একটি বাচ্চা প্রসব করালাম। কিন্তু বাচ্চা অনেক বড়, তবুও শ্বাস নিচ্ছে না। তার এসপেকসিয়া হয়েছে, ফুসফুস পরিপক্ব হয়নি।
তাহলে যদি কোনো মায়ের ডায়াবেটিস থাকে, তবে আগে ভালোভাবে একে নিয়ন্ত্রণ করে তার পরে তাঁর গর্ভধারণ করা উচিত। কিংবা যদি তাঁর ডায়াবেটিস পরবর্তী সময়ে ধরা পড়ে, তাহলে সে ক্ষেত্রে ডায়েট, কিছু ডায়াবেটিস এজেন্ট, কখনো কখনো ইনসুলিন দিয়ে মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হয়। এবং সাধারণত এই গর্ভধারণগুলো আমরা নির্দিষ্ট তারিখের ১৫ দিন আগ পর্যন্ত নেওয়ার চেষ্টা করি। তাহলে বাচ্চার আচরণটি ভালো থাকে, বাচ্চার জন্মের পর তার কোনো জটিলতা সৃষ্টি হবে না। এবং অবশ্যই এই বাচ্চাগুলোর প্রসব করানো উচিত এমন একটি সেন্টারে, যেখানে ভালো অবসটেটিশিয়ান, অ্যানেশথেটিস, নিউনেটোলজিস্ট থাকবে। সব সুবিধা যেখানে থাকে, সেখানে প্রসবের ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রশ্ন : মায়ের আগে থেকে ডায়াবেটিস থাকুক বা গর্ভধারণের পরে ডায়াবেটিস ধরা পড়ুক, আপনারা কী ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি বেশি ব্যবহার করেন?
উত্তর : খাওয়ার পর রক্তে শর্করা ১৪০ মিলিগ্রাম পারডিল যদি হয়, খাওয়ার পরে তাহলে আমরা বলি, মাত্রাটা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে আছে। সে ক্ষেত্রে আমরা তাঁদের ডায়েটের ওপর জোর দিই। পাশাপাশি তাঁকে কিছু ব্যায়াম করতে বলি। আগে আমরা বলতাম, এ অবস্থা হলেও হয়তো আমাকে ইনসুলিন দিতে হবে। তবে আজকাল নতুন নতুন অনেক পদ্ধতি এসেছে, যেগুলো আমরা মুখেও ব্যবহার করতে পারি। তবে যদি দেখি এতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না, তবে অবশ্যই আমরা ইনসুলিনে যাব। কারণ, ইনসুলিনটা ডায়াবেটিসকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
প্রশ্ন : যদি গর্ভধারণের সময় ডায়াবেটিস ধরা পড়ে, তবে পরবর্তী সময়ে এই ডায়াবেটিসের কত সংখ্যক এমনিতে ভালো হয়ে যায় আর কত সংখ্যক আবারো ডায়াবেটিসের ঝুঁকিতে পড়েন?
উত্তর : যে মায়েদের জেসটেশনাল ডায়াবেটিস দেখা যায়, ৫০ শতাংশ রোগী প্রসবের পরে তাঁরা স্বাভাবিক হয়ে যান। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটা আবার হতে পারে। দেখা যায়, একটা বয়সের পর ৩০ বছরের পরে ১০ শতাংশের নতুন করে আবার ডায়াবেটিসে চলে যেতে পারে।
প্রশ্ন : একজন গর্ভবতী মায়ের উচ্চ রক্তচাপ হলে তাঁদের বেলায় ঝুঁকিটা কী হয়?
উত্তর : আমাদের একটি সংজ্ঞা আছে। পাঁচ মাসের পর কোনো গর্ভবতী মায়ের রক্তচাপের একটি সীমা করে দিয়েছি আমরা। ১৪০/৯০ কিংবা তার চেয়েও বেশি। সেই চাপের সঙ্গে সঙ্গে যদি দেখা যায় প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন আসছে, তার সঙ্গে হয়তো পায়ে পানি থাকতে পারে বা না থাকতে পারে। পাঁচ মাস পর যদি কোনো মায়ের এ সমস্যা থাকে, তাকে আমরা কেবল হাইপার টেনশন বলি না, বলি প্রেগন্যান্সি ইনডিউজড হাইপার টেনশন। এর একটি ফলাফল হলো, প্রি-একলামশিয়া। প্রি-একলামশিয়া এত ঝুঁকির একটি বিষয় যে, এটাকে যদি বন্ধ না করি, পরের পর্যায়টি একলামশিয়ার দিকে চলে যাবে। তার মানে যদি খিঁচুনি শুরু হয়ে যায়, এটা ঝুঁকির। গ্রামে অনেকেই ভাবেন, নারীটিকে বোধ হয় ভূতে ধরেছে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চা ও মা উভয়েরই ভীষণ রকম ঝুঁকি থাকে।