ব্যক্তিত্বের সমস্যা হলে যেভাবে বুঝবেন

Looks like you've blocked notifications!
মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার জটিল মানসিক রোগ। ছবি : ইমেজ

মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার বা অনেক ব্যক্তিত্বের সমস্যা একটি মানসিক রোগ। এই রোগে আক্রান্তদের চিন্তার ধরন একটু অস্বাভাবিক হয়। এই অস্বাভাবিকতা তখনই হবে, যখন একজন ব্যক্তির মাঝে একই সময় একাধিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি থাকবে। আর সব ব্যক্তিত্ব সমানভাবে কাজ করতে থাকবে, এতে উচ্ছৃঙ্খলতা, হতাশা, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, অকারণে ভয় ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় ঘটতে থাকবে।

মাল্টিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের কারণ এখনো জানা নেই, তবে ধারণা করা হয় এর পেছনে জিনগত ও পরিবেশগত কিছু বিষয় রয়েছে, যা ব্যক্তিত্বে প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন : ছোটবেলায় কোনো মানসিক আঘাতের কারণে পরবর্তী জীবনে ঘটতে পারে ব্যক্তিত্বের সমস্যা।

বিভিন্ন ধরনের পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার আছে। তাই এসব ক্ষেত্রে দেখা দেয় বিভিন্ন রকম উপসর্গ।

* মন ভালো না থাকা

* অযথা অপরাধবোধ জন্মানো

* কিছুতে আগ্রহ না পাওয়া   

* কোনো কিছুতে আনন্দ না পাওয়া

* ঘুমে সমস্যা হওয়া

* ক্লান্তি ও অবসাদে ভোগা

* চিন্তা করার সামর্থ্য কমে যাওয়া

* মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়া

* সবসময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা

* ক্ষুধা কমে যাওয়া

* পেটের সমস্যা দেখা দেওয়া

* শরীর দুর্বল লাগা

* শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা অনুভূত হওয়া

* আত্মহত্যার প্রবণতা

* রোগীর চিন্তাশক্তি নষ্ট হয়ে যাওয়া

* রোগী সামাজিক পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে পারে না এবং সমাজ থেকে আলাদা হয়ে যায়।

* মানসিক জীবন খণ্ডিত হয়

* অন্যদের প্রতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবিশ্বাস জন্মায়

* মানসিকভাবে অস্থিতিশীল হয়

* অন্যদের গতিবিধির ওপর সন্দেহমূলক নজর রাখে

* এরা ব্যক্তিগত সম্পর্ক রাখতে অনীহা বোধ করে, সামাজিক কর্মকাণ্ড থেকেও নিজেকে দূরে রাখে।

* এ ধরনের মানুষ অন্যকে খুব রূঢ়ভাবে বিদ্রুপ করে। অন্যের কাছ থেকে কোনো কথা না শুনেই তাদের নিজের মতামত চাপিয়ে দেয়।

* এ ধরনের মানুষ প্রায়ই নিজের মধ্যে শূন্যতা অনুভব করে। কোনো সংকটময় সময়কে তারা ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে না। অনেক সময় নিজের ওপর অত্যাচার করে। এটি পরে তার জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।

* এরা অন্যদের কাছ থেকে বেশি মনোযোগ পেতে চায়। এজন্য অভিনয়েরও আশ্রয় নিতে পারে। সহজেই অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তিরষ্কার ও প্রত্যাখ্যান সহ্য করতে পারে না।

* এ ধরনের মানুষ মনে করে, তারা অন্যদের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তারা অন্যের কাছ থেকে বাহবা পেতে চায়, কিন্তু তারা নিজেরা কাউকে বাহবা দিতে নারাজ।

* তারা হীনম্মন্যতায় ভোগে। তারা মনে করে, অন্যকে আকৃষ্ট করার মতো কিছুই তার নেই। তাই অন্যদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। নতুন বন্ধু তৈরিতেও এরা আগ্রহী নয়।

* এ ধরনের মানুষ অন্যের ওপর দারুণভাবে নির্ভরশীল। এরা একা থাকতে চায় না। যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে বারবার সে বিষয় নিয়ে চিন্তা করে বা ভাবে।

* এ ধরনের মানুষ নিজের প্রয়োজনটা ভালো বোঝে।

রোগ নির্ণয়

সঠিক রোগ নির্ণয় অতটা সহজ নয়, বিশেষ করে আমাদের সমাজে। দুজন ডাক্তার মিলে এটি নির্ণয় করতে হবে; প্রথমে পারিবারিক ডাক্তার, তারপর মানসিক রোগের ডাক্তার।

চিকিৎসা

বেশির ভাগ  রোগীরই চিকিৎসা করা হয় না, কারণ, তারা বুঝতে পারে না যে তাদের এই সমস্যা হয়েছে। চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের লক্ষণ ও উপসর্গের ওপর। এখানে মনোরোগ  চিকিৎসকের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি আলোচনার মাধ্যমে, কথা দিয়েই বুঝিয়ে দেবেন, কীভাবে নেতিবাচক চিন্তা থেকে বের হয়ে স্বাভাবিক জীবনে  আসা যায়।

 

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ, সাভার।