চোখ শুকিয়ে গেলে কী করবেন

Looks like you've blocked notifications!
ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান।
 

বিভিন্ন কারণে আমাদের চোখ শুষ্ক হয়ে যায় বা চোখে পানি কমে যায়। এর প্রতিকারে প্রাথমিক অবস্থা থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। আজ ১৫ জুন এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৬৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন অকুনোভা আই হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক ডা. মো. সিদ্দিকুর রহমান।

প্রশ্ন : চোখ শুকিয়ে যাওয়া কী এবং কেন হয়?

উত্তর : চোখকে সতেজ রাখতে হলে আমাদের পানি দরকার। এই পানি যদি কমে যায়, তাহলে চোখ শুকিয়ে যায়।

এই পানির নিঃসরণ হয় ল্যাকরিমাল গ্ল্যান্ড থেকে। এটাকে ঠিকঠাকমতো রাখার জন্য খেয়াল করতে হয় পাপড়ি যেন ঠিকমতো লেগে থাকে।

চোখের গঠনগুলোর অসুবিধা হলে এ সমস্যা হতে পারে। যেমন—কর্নিয়া, কর্নিয়াটিবিন গ্ল্যান্ডস, লিব মার্জিন ইত্যাদি গঠনগুলোর অসুবিধায় চোখ শুকিয়ে যায়।

এ ছাড়া টিউমার যদি হয়, এর জন্য হতে পারে। ডায়াবেটিসের জন্য হতে পারে।

প্রশ্ন : শুকিয়ে যাওয়ার এ সমস্যায় একজন রোগী কী অনুভব করে? শুরুটা কীভাবে হয়?

উত্তর : জিনিসটা হচ্ছে চোখের পানিটাকে যদি আপনি কেমিক্যাল কম্পোনেন্ট বলেন, তাহলে এর মধ্যে তিনটা ভাগ থাকে। প্রথমটি লিপিড স্তর, আসলটি ওয়াটারি স্তর। নিচে থাকে মিউকাস স্তর। কোনো কারণে যদি এর যেকোনো স্তর ভেঙে যায়, তাহলে পানিটা বেরিয়ে যাবে। পানিটি বের হয়ে গেলে চোখে শক্ত ভাব আসবে, খসখসে হবে, জ্বালাপোড়া হবে, ব্যথা হবে।urgentPhoto

যদি আপনি প্রখর আলোতে কাজ করেন, যেমন—কম্পিউটার, ল্যাপটপ, আগুনের কাছে, তখন এগুলো হতে পারে। যেভাবে হোক না কেন, পানিটা যদি না থাকে তবে পানি গড়িয়ে পড়ে যায়। পানি না থাকলে চোখ জ্বালাপোড়া করে, কর্নিয়ায় ঘা হয়। এ ধরনের সমস্যা তৈরি করে।

এগুলোর জন্য প্রথমে ঘন ঘন পানি দিয়ে চোখ ধোয়া উচিত। কৃত্রিম টিয়ার ব্যবহার করা হয়। আর যদি অবস্থা আরো খারাপ হয়, তবে কৃত্রিম টিয়ারের পরিমাণটা বেড়ে যেতে পারে। এ ছাড়া রাতের বেলা লাগানোর জন্য একটি মলম পাওয়া যায়, সেটা দেওয়া যেতে পারে।

তবে যদি টিউমারের কারণে হয়, চিকিৎসা করতে হবে। এ ছাড়া কতগুলো সিস্টেমিক রোগ আছে, তার মধ্যে প্রধান হচ্ছে ডায়াবেটিস। তখন আমরা বলি, আপনি চেক করে আসেন ডায়াবেটিস আছে কি না, এ বিষয়ে।

প্রশ্ন : সে ক্ষেত্রে কি ডায়াবেটিসটা নিয়ন্ত্রণ হলে আবার আগের অবস্থানে ফিরে যায়। নাকি আপনাদের ওষুধও লাগে?

উত্তর : ডায়াবেটিস তো আমরা সম্পূর্ণ মুক্ত করতে পারি না। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন, চারটিখানি কথা নয়। রোগীকে বলা যত সহজ, মেনে চলা তত কঠিন। সে জন্য আমরা বলি, যদি আপনার সামর্থ্য থাকে, তবে কৃত্রিম পানি ব্যবহার করতে থাকেন। আর যদি না সম্ভব হয়, তবে ঘন ঘন পানি দিয়ে চোখটা ধুয়ে ফেলুন, যাতে চোখটা শুষ্ক না হয়। কারণ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি।

প্রশ্ন : জটিলতা আসলে ঠিক কতখানি হতে পারে যদি চিকিৎসা ঠিকমতো না নেওয়া হয়?

উত্তর : ঝুঁকি অল্প থেকে অনেক হতে পারে। যখন বেশি সমস্যা হবে, তখন ব্যথা হবে। তার পরে যখন কর্নিয়া শুকিয়ে যাবে, এখানে ঘা হবে। অনেকে আবার কনট্যাক্ট লেন্স ব্যবহার করেন। তার জন্যও এটি হতে পারে। তখন আমরা চোখে ঘন ঘন পানি দিতে বলি। যদি দেখি এতে কমছে না, তখন কৃত্রিম টিয়ার দিই। আরো বলি অ্যান্টিহিসটামিন জাতীয় ওষুধ যেন না ব্যবহার করে। অনেক অ্যান্টিহিসটামিন চোখের পানিটা শুকিয়ে দেয়। বলি, এ ধরনের ওষুধ পারতপক্ষে না খাওয়াই ভালো। অনেকে হরমোন বাড়ানোর জন্য ইনট্রোজেন দেয়। ইসট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে গেলেও এ সমস্যা হয়।

প্রশ্ন : চোখ শুকিয়ে যাওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে?

উত্তর : চোখের বিষয়টি হচ্ছে একটা বয়স পর্যন্ত এটা সতেজ থাকে। তার পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চোখের পানির নিঃসরণও কমে যায়। সেখানে চোখের যত্নে পানি দিয়ে বারবার ধোবেন। যদি অনেকক্ষণ ধরে কম্পিউটারে কাজ করেন, মোবাইল টিপছেন অথবা টেলিভিশন আলো পড়ছে চোখের ওপর—এ রকম যেন বেশি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় ধরে যারা কনট্যাক্ট ল্যান্স ব্যবহার করে, সেটা হবে না। এর ফলে ইসকেমিয়া হয়। হলে চোখটা শুকিয়ে যায়, সংক্রমণ হয়। সে জন্য আমাদের দেশের জলবায়ুতে কনট্যাক্ট ল্যান্স চার থেকে ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করা ভালো।