বিষণ্ণতায় প্রতি ১০ জনে একজন আত্মহত্যার দিকে যায়

Looks like you've blocked notifications!

বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি লোক বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। এদের মধ্যে অনেকেরই আত্মহননের প্রবণতা থাকে। এনটিভির নিয়মিত আয়োজন ‘স্বাস্থ্য প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানের  ২৭০১তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. মোজাহেরুল হক। তিনি দীর্ঘদিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রশ্ন : বিশ্ব স্বাস্থ্য দিব্স উপলক্ষে সাধারণত কী ধরনের কর্মসূচি নেওয়া হয় সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য।

উত্তর : এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, পশ্চিমা দেশগুলোতে যে পরিমাণ লোক বিষণ্ণতায় ভোগে, তার মধ্যে অর্ধেক লোকই জানে না বা তাদের আত্মীয়স্বজন জানে না তারা বিষণ্ণতায় ভুগছে। এটি নির্ণয়হীন থেকে যায়। ২০০৫ থেকে ২০১৫ প্রতিবছর দেখা গেছে, ১৮ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বিষণ্ণতা রোগী। পশ্চিমা দেশগুলোতে যেখানে রোগনির্ণয়ের সুবিধা আছে, সেখানেই এটা ঘটছে। আর সেভাবে যদি আমরা একটি আন্ডারডেভেলপ দেশের মধ্য থেকে বিষয়টি চিন্তা করি, একটি ভয়াবহ চিত্র হয়তো উঠে আসতে পারে। আমাদের এই জন্য গবেষণা করা উচিত।

এখন যদি বলি কেন এই বিষণ্ণতা হচ্ছে? বিষণ্ণতার কিন্তু বিভিন্ন কারণ রয়েছে। এই যে দুঃখবোধ। পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া থেকে এটি হতে পারে। একটি সামাজিক ব্যবস্থা প্রতি দেশেই আছে।

সেখানে যখন দেখা যায়, লেখাপড়া করেছে, মেধা আছে, পরীক্ষায় ভালো করে এসছে। তবে এখন সে চাকরি পাচ্ছে না। তার কিন্তু গুণ আছে। তাহলে তার মধ্যে একটি বিষণ্ণতা কাজ করবে। কিন্তু এখন যখন সে চাকরিতে যাচ্ছে, প্রতিযোগিতায় দেখছে মেধার মূল্যায়ন হচ্ছে না, তার চেয়ে অল্প মেধার লোকজন হয়তো চাকরি পেয়ে যাচ্ছে অথচ তবে সে পাচ্ছে না, তখন তার মধ্যে কিন্তু বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। তেমনিভাবে অন্য পরীক্ষার যে পদ্ধতি আছে, সেখানে সে হয়তো তার মেধা নিয়ে ভালো ফল করতে পারত, তবে দেখা গেল কোনো কারণে, সে ভালো ফল না করে অন্য কেউ ভালো ফল করছে। তখন তার মধ্যে কিন্তু একটি বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে। এরপর দেখেন, এই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিষয়টি যদি আমরা চিন্তা করি, একটি লোক সৎভাবে যা আয় করে, সে যদি তার পরিবার চালাতে না পারে এবং সব সময় একটি টানাপড়েনের মধ্যে থাকে এবং এটা নিয়ে যখন সে চিন্তা করে, তখনো তার মধ্যে একটি বিষণ্ণতা চলে আসতে পারে। নানা রকম অস্থিরতা তৈরি করে।

এরপর দেখেন এই সামাজিক অস্থিরতা থেকে যে বের হয়ে আসবে, সে সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না কোনোভাবে। এটা তার বিষণ্ণতাকে আরো দীর্ঘমেয়াদি করে ফেলে। যখন দেখা যায় এই বিষণ্ণতা থেকে সে বেরিয়ে আসতে পারে না, তখন বিষণ্ণতা থেকে আরো খারাপ অবস্থা হতে পারে। যখন সে বিষণ্ণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না, এটার মধ্যেই থাকছে, তখন তার মধ্যে একটি জিনিস কাজ করে। সেটি হলো এই বিষয়টি থেকে সে পরিত্রাণ চায়। পরিত্রাণ চাইতে গিয়ে তার যে আউটবার্স্ট সেটা বিভিন্ন রকম হতে পারে। একটি হতে পারে, সে আত্মহননের দিকে যেতে পারে। প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকবে। আত্মহত্যা করবে।

এবার যদি আমরা এর পুরো বিষয়টি চিন্তা করি, এই আত্মহননের বিভিন্ন দিক আছে। এখন আমরা যদি বলি আমাদের সমাজে যে আত্মাহুতি দিচ্ছে, একটি প্রতিবাদ থেকে বা বিশ্বাসের দিক থেকে, যারা বিষণ্ণতায় ভোগে, তারা কিন্তু এই ধরনের পন্থা অবলম্বন করতে পারে আত্মহননের ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন : আমাদের সংস্কৃতির পরিবর্তন, ব্যক্তিগত সম্পর্কে পরিবর্তন এসবও এতে প্রভাব ফেলতে পারে?

উত্তর : বিষণ্ণতায় যারা ভুগছে তাদের মধ্যে কিন্তু একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সে যে খাপ খাওয়াতে পারছে না এই বিষয়টিকে সে ব্যর্থতা মনে করে। সুতরাং এই নেতিবাচক প্রভাব তার মধ্যে ফেলবে। আমাকে দিয়ে খাপ খাওয়ানো সম্ভব হবে না। এটি তার মেজাজ ও অ্যাকশনের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এই নেতিবাচক প্রভাবের কারণে এখান থেকে তার বের হয়ে আসার একটি প্রচেষ্টা থাকতে পারে। তবে এর জন্য কথা বলতে হবে। আমাদের প্রথমে নির্ণয় করতে হবে যে সে বিষণ্ণতায় ভুগছে। তখন তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশেষভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাই।

এখন কথা হলো কীভাবে আমরা বুঝব। এটা একটা সমস্যা পরিবারের মধ্যে থাকতে পারে বা সমাজের মধ্যে থাকতে পারে। আমরা অনেক সময় দেখি অনেকে আগে সিগারেট খেত না, এখন সে ধূমপান করছে। আগে সে মাদকাসক্ত ছিল না, এখন সে মাদকাসক্তিতে ঝুঁকে পড়েছে। কোনো একটি দিকে ঝুঁকে পড়া, এটা কিন্তু বিষণ্ণতার একটি ফল। তার খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। কীভাবে সে ঘুমাত। সে এখন ভিন্নভাবে ঘুমাচ্ছে। এখন সে কোনো কিছুতে আর আগ্রহ বোধ করছে না। আগে সে হয়তো অনেক সময় পর্যন্ত  ফেসবুকে থাকত। এখন সে আর ফেসবুকেও থাকছে না। আগে হয়তো সে কোনো অনুষ্ঠান দেখত। সেই অনুষ্ঠানের প্রতি তার আকর্ষণ চলে গেছে। তার স্বাভাবিক জীবনধারা থেকে তার যেই আচরণ দেখব তখন আমাদের ভাবতে হবে সে বিষণ্ণতায় ভুগছে। পরিবার থেকে কিন্তু বিষয়টি ধারণা করা সম্ভব। সমাজ থেকেও সম্ভব। আগে হয়তো একটি ছেলে বাসায় থাকত, ভালোভাবে লেখাপড়া করত, নামাজ পড়তে যেত, খেলতে যেত—এই সমস্ত স্বাভাবিক জায়গা থেকে যখন সরে আসে তখন কিন্তু এটা ঝুঁকিপূর্ণ।