চোখের আধুনিক চিকিৎসায় লেসিক
লেসিক চোখের আধুনিকতম একটি চিকিৎসা। চশমার পরিবর্তে লেজারের মাধ্যমে চোখের দৃষ্টি শক্তি ঠিক করার চিকিৎসা এটি। আজ ৩ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৮৫ তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন দেশের খ্যাতনামা লেসিক বিশেষজ্ঞ হারুন আই ফাউন্ডেশনের হাসপাতালের পরামর্শক ডা. সৈয়দ এ হাসান।
প্রশ্ন: লেসিক বিষয়টি কী?
উত্তর: লেসিক হলো লেজার ভিশন কারেকশন। লেজার দিয়ে দৃষ্টির যে সমস্যা তা সমাধান করা। চোখে দেখতে সমস্যা হলে চোখে পাওয়ার যোগ করতে হয় চশমার মাধ্যমে। পাওয়ার ছাড়া দেখা যায় না। অনেকে হয়তো অনেক বেশি পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করছেন। কিন্তু একটা পর্যায়ে হয়তো আর চশমা পড়তে চাচ্ছেন না। তখন আমরা লেজারের মাধ্যমে দৃষ্টিটা ঠিক করে দিই।
লেজার করে কর্নিয়ার সামনের দিকের অংশটাকে এমনভাবে অবস্থার পরিবর্তন করা হয় যেভাবে গেলে আলোটা গিয়ে রেটিনাতে পড়বে। কোনো পাওয়ার ছাড়াই সে দেখতে পারবে। শূন্য পাওয়ারে সে দেখতে পাবে। লেসিকের মাধ্যমে আসলে এটাই করা হয়।
প্রশ্ন: একজন মানুষের চোখের পাওয়ারের তারতম্য সেটা ঠিক করা হয় বা করা হতো চশমা দিয়ে । কেউ যদি চশমা পড়তে না চান তার বিকল্প ব্যবস্থা এটি। চশমার বেলায় একটি বিষয় আসে তার কিছু দিন পরপর পাওয়ার সমন্বয় করার প্রয়োজন হয়। লেসিকের বেলায় কী হয়?
উত্তর: জন্মের পর থেকে যাদের সমস্যা থাকে ১৮ বছর পর্যন্ত তাদের চোখের পাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে। এজন্য আমরা ১৮ বছরের আগে লেসিক সাধারণত করি না। ১৮ বছরের আগে কখনো কখনো মাঝে মধ্যে করা হয়। যদি দেখা যায় দুই চোখে এত বেশি পাওয়ারের ভারসাম্যের সমস্যা হচ্ছে কোনোভাবেই সেটা ঠিক করা যাচ্ছে না। তখন হয়তো লেসিক করে দৃষ্টি শক্তিটাকে ধরে রাখা হয়।
এছাড়া ১৮ বছরের পরেই করা হয়। ধরেন, একটা রোগী আমরা দেখতে পাচ্ছি তার পাওয়ার লাগে ছয়। তবে সে চার দিয়েই দেখতে পারছে। চশমা দিলে সাধারণত দেওয়া হয়, কত কম পাওয়ারের সমস্যা সে কত বেশি দেখতে পারছে। ১৮ বছরের পরে হয়তো পাওয়ার ছেড়ে দিতে পারে। এজন্য আমরা ১৮ বছর পর্যন্তই হয়তো জেনে যাই সঠিক পাওয়ারটি কত।
প্রশ্ন: এ ক্ষেত্রে লেসিক করলে তার কী অন্য কোনো জটিলতা বা সংক্রমণের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর: এটা তেমন কোনো জটিলতা নাই। আর অনেক দ্রুত ভালো হওয়া যায়। লেসিক হওয়ার পর হয়তো চার পাঁচ ঘণ্টা ঘুম দিলেন এরপর উঠে সব দেখতে পাচ্ছেন।
প্রশ্ন: এই অস্ত্রোপচারের জন্য কী রোগীকে অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয়? হাসপাতালে কী থাকার প্রয়োজন হয়?
উত্তর: লেসিকের জন্য রোগীকে ভর্তি হতে হয় না। ইনজেকশন লাগে না, ড্রপ দিয়ে করা হয়। সহজ অস্ত্রোপচার।
প্রশ্ন: রোজার মধ্যে যদি কেউ লেসিক করতে চান সেটা কী করা সম্ভব?
উত্তর: আমারতো মনে হয় কোনো বাধা নেই। কারণ ড্রপ দিতে তো কোনো বাধা নেই। যেহেতু রোজায় ড্রপ দেওয়া যায়, তাহলে লেজারও করা যায়। এখানে রক্তপাতের কোনো বিষয় নেই। তবে যদি কোনো রোগী ভাবে রোজার মাসে করব না। তাহলে হয়তো করল না। এটাতো খুব জরুরি না। একমাস পরেও করতে পারবে। তবে করতে চাইলেও কোনো বাধা নেই।
প্রশ্ন: যদি কোনো কারণে লেসিক কাজ না করে তবে কী সে আবার চাইলে সেটা ঠিক করতে পারে?
উত্তর: লেসিক করা যেতে পারে। তবে আমরা চাই না। লেসিক করার আগে চোখ ভালো করে পরীক্ষা করতে হবে, লুকানো কোনো রোগ আছে কি না দেখতে হবে। যদি না থাকে লেসিক কার্যকর হওয়ার কথা। সমস্যা হওয়ার কথা না।
তবে লেসিকের যে বড় জটিলতা বলা হয়, সেটা হলো লেসিক হওয়ার পরে পাওয়ার বেড়ে যাওয়া। তাই লেসিক করার আগে পরীক্ষা করতে হবে। যদি পাওয়ার বেড়ে যায় তবে সাথে সাথে পরীক্ষা করে দেখতে তার চোখে কোনো সমস্যা আছে কি না। যদি দেখা যায় সমস্যা আছে তবে একধরনের রেডিয়েশন চিকিৎসা আছে করলে ঠিক করে দেওয়া যায়। এটাতো একটা কম্পিউটার ভিত্তিক সার্জারি। কম্পিউটারে যদি কিছু ভুল হয়, যদি দেখা যায় যে কিছু পাওয়ার বাকি রয়ে গেছে সেক্ষেত্রে আবার করা যায়।
প্রশ্ন: লেসিক কী চাইলে সবাই করতে পারে ? ধরেন যাদের পদ্ধতিগত রোগ আছে ডায়াবেটিস সেই ক্ষেত্রেও কী লেসিক করা যায়?
উত্তর: এই ধরনের রোগ যাদের রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয়না। এসব নিয়েও লেসিক করা যেতে পারে।