কোলোনস্কোপি কেন করা হয়

Looks like you've blocked notifications!
কোলোরেক্টাল সার্জন অধ্যাপক রাকিবুল আনোয়ার।

বৃহদান্ত্রে কোনো জটিল সমস্যা রয়েছে কি না এ জন্য কোলোনস্কোপি করা হয়। আজ ৪ জুলাই এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২০৮৬তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন দ্য রয়েল কলেজ অব সার্জনস অব ইংল্যান্ডের পরামর্শক কোলোরেক্টাল সার্জন অধ্যাপক রাকিবুল আনোয়ার।

প্রশ্ন : কোলোনস্কোপি বিষয়টি কী?

উত্তর: কোলোনস্কোপি হলো একটা এন্ডোস্কোপ। একটা নলের মতো যন্ত্র, এটা দিয়ে পুরোপুরি কোলন বা বৃহদান্ত্রের ভেতর দেখা যায়। এতে ফাইবার অপটিক থাকে, যাতে লাইট থাকে। এটি কোলনে প্রবেশ করানো হলে এই দৃশ্যগুলো আমরা টেলিভিশনের মাধ্যমে দেখতে পারি। এটি বৃহদান্ত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ব্যবহার করা হয়।

প্রশ্ন : কোলোনস্কোপির প্রয়োজনীয়তা কখন হয়?

উত্তর : কোলোনস্কোপির প্রয়োজনীয়তা হয়, বাউয়েল ক্যানসার বা প্রদাহজনিত কোনো জটিল মল-মূত্রের সমস্যা হচ্ছে কি না, সেটা দেখার জন্য। জটিল সমস্যা হতে পারে বাউল ক্যানসার থেকে, এ ছাড়া প্রদাহজনিত পেটের সমস্যা। যেমন আলসারেটিভ কোলাইটিস, টিউবার  কোলোসিস সেই সমস্ত ক্ষেত্রে কোলোনস্কোপি করে দেখতে হয় এ ধরনের কোনো রোগ আছে কি না।urgentPhoto

 উপসর্গ হতে পারে, রেক্টাল রক্তপাত, মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন আসলে, এ ছাড়া যদি এনিমিয়া হয়, যদি তলপেটের ব্যথা হয়, পেটে ব্যথা হয়- এই জিনিসগুলো পরীক্ষা করার জন্য কোলোনস্কোপি করতে হয়।

প্রশ্ন : যেই রোগীর জন্য কোলোনস্কোপি করার পরামর্শ দেন, এই রোগী নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখেন?

উত্তর : রোগীর বয়স কেমন, উপসর্গগুলো কী রকম- সেটা কি নির্দিষ্ট করে তার ক্যানসার হয়েছে। পারিবারিক ইতিহাসও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : পারিবারিক ইতিহাসে আপনারা কী দেখেন?

উত্তর : ক্যানসারের বা প্রদাহজনিত বাউয়েল রোগের কোনো ইতিহাস আছে কি না। ইতিহাসটি কেমন সেটি দেখি।

প্রশ্ন : এই কোলোনস্কোপি নিয়ে অনেকের মনে ভীতি কাজ করে? এই ভয় দূর করতে তাদের কীভাবে পরামর্শ দিয়ে থাকেন?

উত্তর : কোলোনস্কোপিতে ভয় পাওয়ার কোনো কিছু নেই। তবে কিছু কিছু জটিলতা, যা অন্যান্য পরীক্ষাগুলোতেও হয় সেগুলো থাকতে পারে। আর কোলোনস্কোপি সম্বন্ধে একটা ভীতি আমি বাংলাদেশে দেখছি। আমার মনে হয় এই ভীতিটা নির্দিষ্টভাবে কোলোনস্কোপি করার জন্য থাকে। একজন রোগী অনেক সময় ধরে নেয় কোলোনস্কোপি করা মানেই হয়তো তার ক্যানসার থাকবে। এর জন্য একটু সাইকোথেরাপির প্রয়োজন পড়ে। একটু বলতে হয় এতে ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই, ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অনেকে ভাবে খুব বেশি ব্যথা হতে পারে। তবে ব্যথা খুব বেশি হওয়ার কথা না। সিডিয়েশনের নিয়ন্ত্রণে করা হয়। কিছুটা ঘুম ঘুম লাগে, কিন্তু পুরোপুরি ঘুম পাড়ানো হয় না। যাতে করে ব্যথাটা অনুভব করলেও বলতে পারে। কারণ যদি ব্যথা দেওয়া হয় তবে ঠিকমতো কোলোনস্কোপি হচ্ছে না। তখন যে কোলোনস্কোপি করছে  তাকে বলতে হবে।

এটা বলা ভুল হবে যে কোলোনস্কোপিতে কোনো জটিলতা নাই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো হাজারে একজনের, যখন পলিপ সরানো হয় তখন হয়তো রক্তপাত হতে পারে। তবে এগুলো খুব কম।

প্রশ্ন : যত তাড়াতাড়ি রোগটা ধরা পড়বে সেটা ভালো হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে-এটা রোগীদের বোঝা উচিত...

উত্তর : বাউয়েল ক্যানসারের চারটা ভাগ আছে। এ বি সি এবং ডি। এ-তে ধরা পড়লে অস্ত্রোপচার করে ভালো হওয়ার হার ১০০ শতাংশ।  আর ডি তে ধরা পড়লে বেঁচে থাকার হার হয়তো ১০ শতাংশের বেশি নয়। সুতরাং কোন পর্যায়ে ধরা পড়বে এর ওপর নির্ভর করবে রোগীর ভবিষ্যৎ কী হবে। এটার জন্য খুব জরুরি যে আমরা যেন কোলন ক্যানসার সম্বন্ধে সচেতন হই। এটা বেশ প্রচলিত। বাঙালি সমাজে আস্তে আস্তে বাড়ছে। সতুরাং এ সম্বন্ধে সাবধান হওয়ার প্রয়োজন আছে এবং ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন আছে। তাই রোগ দ্রুত নির্ণয়ের জন্য কোলোনস্কোপি করা প্রয়োজন।