মাতৃদুগ্ধ পান কেন বাধ্যতামূলক?

Looks like you've blocked notifications!

গত সপ্তাহে পালিত হলো ‘বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ’। একটি শিশুর জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো অবশ্যই জরুরি। এটি কেন এত জরুরি? এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮১৫তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা. ফাতেমা পারভীন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : আগস্ট মাসের ১ তারিখ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত সারাবিশ্বে মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ পালিত হয়। এই যে সপ্তাহজুড়ে একটি বিষয়কে এত গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা হচ্ছে, একে এত গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী?

উত্তর : আমরা একটি জাতির মেরুদণ্ড মনে করি শিক্ষা। আর একটি জাতির স্বাস্থ্যের মেরুদণ্ড যদি চিন্তা করি, সেটি হবে পুষ্টি। আর পুষ্টির মূল কেন্দ্র হিসেবে যদি কাজ করেন, তাহলে ‘মাতৃদুগ্ধ’ বিষয়টিতে কাজ করতে হবে। তাহলেই আমরা জনগণের পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারব।

প্রশ্ন : একটি নবজাতককে কত দিন পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করানো উচিত। সে ক্ষেত্রে এই শিশু ও মা কতটুকু উপকৃত হয়?

উত্তর : আমাদের একটি প্রচার আছে, একটি বাচ্চার জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এক ঘণ্টা সময়টা বলা মানে হলো মানুষকে সচেতন করার জন্য। বাস্তব বিষয় হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। কারণ, প্রথম যে দুধ বের হয়, শালদুধ, একে বলা হয় শিশুর প্রথম টিকা। যেহেতু সেটি লিভিং সেল হিসেবে বাচ্চার শরীরে যায়, এ ক্ষেত্রে একে আমরা জীবন্ত টিকাও বলতে পারি। এটি ওই শিশুটিকে অনেক রোগের হাত থেকে রক্ষা করে; রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে।

যে শিশু জন্মের পর থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৮০ দিন, শুধু মায়ের দুধের ওপর বেঁচে থাকবে, ওই শিশুর অনেক রোগ কম হয়। প্রথম হলো ডায়রিয়া। ওই শিশু সাধারণত ডায়রিয়ায় ভোগে না। কারণ, আমরা যদি ডায়রিয়ার কারণগুলো দেখি, তাহলে দেখব সব কিন্তু খাদ্য-সংক্রান্ত। তবে ওর জন্য খাবার তো লাগছেই না, এক ফোঁটা পানিও লাগছে না। সুতরাং প্রাকৃতিকভাবে তার একটি সুরক্ষা হয়ে গেল। মায়ের শরীরে দুধটা শিশুর জন্য এমনভাবেই তৈরি হয়, এটা সম্পূর্ণ পুষ্টিগুণসম্পন্ন। সব ধরনের খাবার এর মধ্যে রয়েছে। এ ছাড়া এর মধ্যে একটি বিশেষ প্রোটিন ও আমিষ আছে। এ জিনিসটি এখন পর্যন্ত সাপ্লিমেন্ট করা সম্ভব হয়নি।

মাতৃদুগ্ধের অনেক উপকার। প্রথম হলো শিশুর যেই পরিমাণ খাওয়ার দরকার, সে পরিমাণেই নেবে। বেশিও খাওয়াচ্ছি না, আবার খাবার কমও পড়ছে না। যেই মনোযোগে খাবে, সেটি ঠিক থাকছে। দ্বিতীয় হলো, সম্পূর্ণ রোগমুক্ত। সবচেয়ে বড় হলো আমাদের সামাজিক যে অবক্ষয়, এর একটি প্রধান প্রতিরোধক এটি। ওই মা ও বাচ্চার মধ্যে যে সম্পর্ক তৈরি হবে, পারিবারিক বন্ধন তৈরি হবে, সেই বাচ্চা তো খারাপ কাজ করতে পারবে না।

কারণ, আপনি যদি একটু ঘরের দিকে খেয়াল করেন, দেখবেন, কারো ছোট বাচ্চা যখন তৃপ্তি নিয়ে মায়ের বুকের দুধ খায়, তখন বিড়ালের বাচ্চার মতো মনে হয় লেজ নাড়াচ্ছে, এমন একটি আনন্দ করে। এটা কিন্তু একটি তৃপ্তি। প্রত্যেক বয়সে তার নিজের কিছু তৃপ্তির জায়গা রয়েছে। এটি কিন্তু ওই বাচ্চার জন্য একটি তৃপ্তির বিষয়।

এ ছাড়া তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তো বাড়লই, ওভার ফিডিংয়ের জন্য যে ওজন বাড়ার সমস্যাটা এখন আসছে, সেটিও হবে না। ওজনাধিক্যের একটি প্রধান কারণ বাজারজাত দুধ বা টিনজাত খাবার।