জেনারেল এনেসথেসিয়া

Looks like you've blocked notifications!
সিনহা আবুল মনসুর

এনেসথেসিয়া শব্দের অর্থ চেতনাহীনতা। বিভিন্ন অপারেশনের আগে রোগীকে এনেসথেসিয়া দেওয়া হয়। এ নিয়ে অনেক মানুষের মধ্যেই ভীতি কাজ করে। আজ শনিবার (১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৪৬ পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্কের কুইন্স হাসপাতালের বিশিষ্ট এনেসথেসিওলজিস্ট ডাক্তার সিনহা আবুল মনসুর।

প্রশ্ন : এনেসথেসিয়া কোন কোন ধরনের হয়?

উত্তর : এনেসথেসিয়া শব্দটির যদি প্রতিশব্দ খোঁজা হয় তাহলে সেটা হবে চেতনাহীনতা, অচেতনতা বা ব্যথাহীনতা। এনেসথেসিয়া বলতে সাধারণত জেনারেল এনেসথেসিয়া বোঝানো হয়। এই জেনারেল এনেসথেসিয়া থেকে বেরিয়ে এসেছে এনেসথেসিয়া। এখন এনেসথেসিয়া বলতে বিভিন্ন ধরনের এনেসথেসিয়াকে বোঝানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে, জেনারেল এনেসথেসিয়া,  রিজনাল এনেসথেসিয়া, সিডেইশন এনেসথেসিয়া, সারফেজ এনেসথেসিয়া ইত্যাদি।

প্রশ্ন : রোগীদের মধ্যে এনেসথেসিয়া করা নিয়ে একটি ভীতি কাজ করে। এর পেছনে আসলে যুক্তি কী? এই বিষয়ে কী পরামর্শ দেবেন?

উত্তর : ভীতিটার পেছনে যৌক্তিকতা রয়েছে। এর ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, এনেসথেসিয়ার বিষটির যখন উন্নতি ঘটছে, প্রাথমিক ওষুধ থেকে যখন আরো কিছু ওষুধ আবিষ্কৃত হচ্ছে তখন একটি সময় ছিল কারো যদি সার্জারি করা হতো তখন রোগীটি তার আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসত। ভাবত সে হয়তো নাও ফিরতে পারে, শঙ্কিত থাকত। এই  ভীতির  পেছনে যৌক্তিক কারণও ছিল।

সেই সময় যখন রোগীকে এনেসথেসিয়া দেওয়া হতো তখন পূর্ণ পর্যবেক্ষণ করা হতো না। অর্থাৎ রোগীকে যখন এনেসথেসিয়ার ওষুধ দেওয়া হতো তখন হৃদযন্ত্র, মস্তিস্ক, কিডনি, ফুসফুস, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রতঙ্গগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না সেটি পর্যবেক্ষণ করা যেত না। কালের বিবর্তনের সঙ্গে এখন পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি খুবই উন্নত হয়েছে।

প্রশ্ন : এই পর্যবেক্ষণের বিষয়টি আসলে কী? এর মধ্য দিয়ে আপনারা কী দেখেন?

উত্তর : আমরা মূলত দেখি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না। এগুলোর কাজ তো আমরা সরাসরি বুঝতে পারব না। এগুলো বোঝার জন্য কিছু নিয়ামক আছে। এর মধ্যে আমরা দেখি রোগীর রক্তচাপ, হার্টবিট, মাঝে মাঝে রোগীর মস্তিস্কের কাজ। কিডনির কাজ ঠিক আছে কি না দেখার জন্য রোগী প্রস্রাব কী রকম হচ্ছে সেটি দেখা হয়। এ ছাড়া রক্তের সব বিষয়গুলো ঠিক আছে কি না দেখার জন্য ব্লাড গেস এনালাইসিস করি। এই বিষয়গুলো এখন বেশ উন্নত হয়েছে।

প্রশ্ন : জি এ ফিটনেস বা প্রি এনেসথেটিক চেকাপের মাধ্যমে আপনারা কী দেখেন?

উত্তর : জি এ ফিটনেস একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। রোগীর যদি কোনো সাধারণ সার্জারি  করা হয়  তাকে এনেসথেসিওলজিস্টের সাথে দেখা করার জন্য এনেসথেসিয়া ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এনেসথেসিওলজিস্ট তার সাথে কথাবার্তা বলে ঠিক করে দেন রোগীটির এনেসথেসিয়ার ঝুঁকিটা কত বেশি বা কম রয়েছে। 

তবে বিষয়টি নির্ভর করে ওই রোগীর মেডিকেল ইতিহাসের ওপর- তার আগে সার্জারি হয়েছে কি না, সেখানে কোনো সমস্যা হয়েছিল কি না, এখন যেই সার্জারি হতে যাচ্ছে সেটা কত বড় ধরনের সার্জারি, ওখানে রক্তপাতের আশঙ্কা কতটুকু, জটিলতার আশঙ্কা কতটুকু- এসব বিষয় দেখে এগুলো ঠিক করা হয়।

প্রশ্ন : রোগী এনেসথেসিয়া নেওয়ার জন্য উপযুক্ত (ফিট) কি না, সেটি বোঝেন কীভাবে?

উত্তর : সেটি বোঝার জন্য প্রথম রোগীর সাথে কথা বলতে হবে। তার মেডিকেল ইতিহাস জানতে হবে। যেসব রোগ নিয়ে আমরা বেশি চিন্তিত সেই সমস্যাগুলো যদি রোগীর ইতিহাসে থাকে তাহলে একভাবে চিন্তা করতে হবে। যদি না থাকে তাহলে আরেক ভাবে চিন্তা করতে হবে। এসব রোগের মধ্যে রয়েছে রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের সমস্যা , কিডনির সমস্যা বা স্ট্রোক ইত্যাদি।

যখন সমস্যা থাকে তখন রোগীকে তার নিয়মিত কাজকর্মের ওপর ভিত্তি করে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।  তখন ইকেজি করা হয়। আরো সমস্যা থাকলে স্ট্রেস ইকেজি করা হয়। আমরা দেখার চেষ্টা করি রোগীটি কোন অবস্থায় আছে। সার্জারির চাপ নেওয়ার মতো তার মানসিক অবস্থা আছে কি না। চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা আগে থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। এটি রোগী ও চিকিৎসকদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন : অনেক ক্ষেত্রে  ইর্মাজেন্সি কোনো কারণে বা দুর্ঘটনার জন্য সার্জারি করা দরকার হয় বা জেনারেল এনেসথেসিয়া করতে হয়। সে ক্ষেত্রে এই জি এ ফিটনেস করার সময় পান কি? 

উত্তর : ইমার্জেন্সি কোনো নিয়ম মানে না। তখন আমরা চিন্তা করি এটি একটি যুদ্ধের মতো অবস্থা। এখানে আমাদের যুদ্ধ করতে হবে এবং যুদ্ধে জয়ী হতে হবে। রোগী এখানে জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি লাড়াই করছে । এই রোগীর ইতিহাস আমরা জানি না। তার কোনো ধরনের শারীরিক সমস্যা ছিল কি না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জানা যায় না। তখন আমরা সবোর্চ্চ ব্যবস্থা নেই। ধরে নেই এই রোগীর সব ধরনের সমস্যা আছে। এটি  ধরে এগোলে কোনো ধরনের সমস্যা হলেও সেটি মোকাবিলা করা সম্ভব। 

প্রশ্ন : চেতনহীন রোগীটাকে আবার চেতনায় নিয়ে আসতে আপনারা কী করেন? এই ব্যাপারেও অনেকের ভীতি কাজ করে। চিকিৎসকের মনেও একটি ভয় কাজ করে রোগীটি আবার ফিরে আসবে কি না- এই বিষয়ে কিছু বলুন।

উত্তর : রোগীটি এনেসথেসিয়ার কারণে ঘুমিয়ে পড়ছে সেখানে আসলে ভয়ের কিছু নেই। ভীতি হচ্ছে সে আবার ফিরে আসবে কি না। তবে আধুনিক এনেসথেসিয়ায় পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি অনেক উন্নত। যখন আমরা দেখি সার্জারিটা শেষ হচ্ছে তখন এনেসথেসিয়াটি কমিয়ে আনি। এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে আসি যে কিছুক্ষণের ভেতর রোগী তার চেতনা ফিরে পাবে।

এর মধ্যে অনেক সময় দেখা যায় কারো কারো ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে। এই দেরি হওয়াটা খুব খারাপ বিষয়, তেমনটা নয়। এটা হতে পারে রোগীটা হয়তো বয়স্ক রোগী। যে ওষুধগুলো সে পাচ্ছে তার মেটাবলিজম সে হয়তো তাড়াতাড়ি করতে পারছে না। আবার একটি শিশুর ক্ষেত্রেও হয়তো এ ব্যাপারে সমস্যা হচ্ছে। 

আবার রোগীর হয়তো এমন কিছু রোগ আছে যার ফলে চেতনা ফিরে আসতে দেরি হয়।  হয়তো দেখা গেল তার কিডনির সমস্যা আছে। যে ওষুধগুলো আমরা দিচ্ছি সেগুলো শেষপর্যন্ত কিডনি দিয়ে প্রস্রাবের সাধ্যমে বেরিয়ে যায়। সেটা হয়তো ওখানে একটু দেরি হচ্ছে। সেগুলো আমরা আগে থেকে ধারণা করি। সেভাবে আমরা পরিকল্পনা করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা সফল হয়।