সঞ্জীবনী

হৃদরোগের চিকিৎসায় হার্ট ফাউন্ডেশন

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : সংগৃহীত

এ দেশের হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য ১৯৭৮ সাল থেকে কাজ করছে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ও সাহায্যপুষ্ট অলাভজনক, সেবামূলক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এই ফাউন্ডেশন World Heart Federation (WHL) এবং World  Hypertension League (WHL)- এর সদস্য। এ ছাড়া World Health Organization (WHO) হাসপাতালের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে থাকে। হাসপাতালটিতে হৃদরোগের উপসর্গ নিরাময়,ভবিষ্যৎ জটিলতার ব্যাপারে সাবধানতা, প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও রোগীদের পুনর্বাসনের ওপর কাজ করা হয়।

এই হাসপাতালে সর্বাধুনিক ও বিশ্বমানের হৃদরোগের সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হার্টের অপারেশন ও ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিউর ন্যশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে হয়ে থাকে।

শুরুর কথা
হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আবদুল মালিক বলেন, 'হৃদরোগের পরীক্ষা- নীরিক্ষা ও চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আমার সব সময় মনে হতো, সরকারের পক্ষে এককভাবে হৃদরোগের সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। আমাদের উদ্যোগী হয়ে সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে জনগণের সেবা করা দরকার। এ জন্য কয়েকজন ডাক্তার এবং অন্যান্য পেশার সমাজ সেবকদের নিয়ে ১৯৭৮ সালের অক্টোবর মাসে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন গঠন করার উদ্যোগ নেই। সেসময় সৈয়দ এ বি মাহমুদ হোসেন সভাপতি এবং আমি মহাসচিব হয়ে ১৯৭৮ সালের ১২ অক্টোবর আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। এভাবে পথ চলা শুরু। মাহমুদ হোসেন সে সময় ছিলেন প্রধান বিচারপতি।' 

প্রাথমিকভাবে এএনএইচ বারি ট্রাস্টের আর্থিক সহায়তায় চলনসই একটি ভবনে কাজ শুরু করে হার্ট ফাউন্ডেশন। এরপর সরকারি সহযোগিতায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি)-এর আওতায় ভবনটি ৩৩০ শয্যার একটি হাসপাতালে উন্নীত করা হয়। 

চিকিৎসাসেবা
হাসপাতালের পরিচালক কর্নেল ডা. মো. শামসুল আলম বলেন, 'এখানে আন্তর্জাতিক মানের হার্টের চিকিৎসা করা হয়। এটি একটি অলাভজনক, সেবামূলক, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সরকার, দেশি বিদেশি দানশীল ব্যক্তি ও সংস্থার সাহায্য সহাযোগিতায় এবং হাসপাতালের নিজস্ব আয়ে পরিচালিত হয়।'

এখানে শুধু হৃদরোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা দেওয়া হয়। এখানে রয়েছে কার্ডিওলজি, কার্ডিয়াক সার্জারি, প্যাথলজি, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং, এপিডেমিওলজি-রিসার্চ অ্যান্ড প্রিভেনশন বিভাগ।

আউটডোরে সকাল  ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রোগী দেখা হয়। আর  জরুরি বিভাগ ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকে। ইনডোরে বর্তমানে প্রায় ৩০০ জন রোগী সেবা নিতে পারে। সাধারণ বেড ৬০০ টাকা।  নন এসি কেবিন দুই হাজার ২০০ টাকা এবং এসি কেবিন দুই হাজার ৭০০ টাকা।  

চিকিৎসকের সংখ্যা ১৫৮ জন। প্রায় ৭৮৪ জন কর্মকর্তা কর্মচারী রয়েছেন। বাইরের কোনো চিকিৎসক নেই। 

লক্ষ্মীপুর থেকে এসেছেন সামাদ চৌধুরী (৫৮)। হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এরপর হার্টে রিং পরানো হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসা বেশ ভালোই হয়।

বুকে ব্যথার সমস্যা নিয়ে প্রিকেয়ার ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন মো. লতিকুল্লাহ (৫০)। তিনি বলেন, এখানে চিকিৎসাসেবা ভালো। খরচও কম হয়।      

বিশেষ বৈশিষ্ট্য
হার্ট ফাউন্ডেশন হৃদরোগীদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল। সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হৃদরোগের সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসা করা হয়।

শতকরা ৩০ ভাগ গরিব হৃদরোগীর বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। ফ্রি চিকিৎসাসেবার আওতায় রোগীর বিছানা ভাড়া, ডায়েট এবং ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্টাফদের সেবা ও প্রয়োজনীয় মৌলিক পরীক্ষা যেমন : প্যাথলজি, এক্সরে, ইসিজি এবং ওষুধ দেওয়া হয়।

এখানে নিয়মিতভাবে ডাক্তার, নার্স ও প্যারামেডিকসদের জন্য বিভিন্ন কোর্স চালু রয়েছে এবং নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এই হাসপাতালে এমডি (কার্ডিওলজি), এমএস (কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি) কোর্স চালু রয়েছে।

এই হাসপাতালের সাথে বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের চুক্তির মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম রয়েছে। এ ছাড়া হৃদরোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে জনগণকে শিক্ষিত ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য এই ফাউন্ডেশনে বিভিন্ন গণমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বিভিন্ন সময়ে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োজিত ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিশেষ অবদান রাখছে।

ছড়িয়ে পড়ছে কার্যক্রম
এই ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুধু ঢাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৩৫টি স্থানে এর এফিলিয়েটেড বডি (অধিভুক্ত সমিতি) করা হয়েছে।

হৃদরোগে ও  স্বাস্থ্য  বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এখানে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম করা হয়। বর্তমানে দেশের সব জায়গায় এই প্রোগ্রামগুলো ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

বেসরকারি পর্যায়ে এটি একটি বিশেষায়িত হৃদরোগ হাসপাতাল। আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হৃদরোগের চিকিৎসা করা হয়। হাসপাতালের সর্বাধুনিক কার্ডিয়াক ক্যাথল্যাবে নিয়মিতভাবে এনজিওকার্ডিওগ্রাফি, সিটি এনজিওগ্রাম, এনজিওপ্লাস্টি, ভালভোপ্লাস্টি, পেসমেকার প্রতিস্থাপন, ডিভাইস ক্লোজার, রেনাল ডিনারভেশনসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়। কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে জন্মগত হৃদরোগ, করোনারি হৃদরোগ, ভালভ সংযোজন, বিটিং হার্ট সার্জারিসহ বিভিন্ন ধররের জটিল হার্টের অপারেশন অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে করে হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হার্টের অপারেশন এবং ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিউর ন্যশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে হয়ে থাকে। শুধু দেশে নয় আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও হাসপাতালটি পরিচিতি লাভ করেছে। 

অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডা. আবদুল মালিক বলেন, 'হার্ট ফাউন্ডেশন কেবল হৃদরোগের সেবা নয়, হৃদরোগ প্রতিরোধে সচেতনতামূলক সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমেও অংশ নেয়। বাংলাদেশের জনগণের হৃদরোগের সেবা দিতে আরো ভালো অবস্থানে যাওয়ার আশা করি আমরা।' 

ঠিকানা
প্লট ৭/২ 
সেকশন ২, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬
ফোন : ৮৮-০২-৮০৫৩৯৩৫-৬