কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধানে করণীয়

Looks like you've blocked notifications!

বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য ২০১৭ – এর  প্রতিপাদ্য ‘কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য’। কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণে করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২৮৭২তম পর্বে  কথা বলেছেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ। 

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম বর্তমানে আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত এবং  ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

এনটিভি : কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা সম্ভব?

অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম : কর্মক্ষেত্রকে স্বাস্থ্যকর করতে হবে। কর্মচারীকে সীদ্ধান্ত নেয়ার সময় আপনি যদি যোগ দেওয়ান সামান্য ভাবেও, দেখা যায় কর্মদক্ষতা অনেক বেড়ে গেছে। তার মনকে যদি বোঝেন, তাকে উৎসাহ দেন, ‘খুব ভালো হয়েছে’ বা ‘আরে তুমিতো খুব সুন্দর করেছো’, তাহলে সে উৎসাহ পায়।

এনটিভি :  বিভিন্ন উন্নত দেশে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ ভালো রাখার জন্য কাউন্সেলর নিয়োগ দেওয়া হয়। আমার মনে হয় বিষয় খুব ভালো। আপনাদের মতামত কী?

সেলিনা ফাতেমা বিনতে শহিদ : ইন্ড্রাসট্রিয়াল সাইকোলজিস্ট এই কাজ করেন। আসলে বাইরের দেশে তো স্কুল সাইকোলজিস্ট, ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল সাইকোলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট রয়েছেন। আমি একটি কথা বলতে চাই, আসলে আমাদের কারণের ভেতর কিন্তু সমাধান নিহিত রয়েছে। পরিবেশ যদি ভালো না হয়, তাহলে সমস্যা হয়। পরিবেশ আমাদের ঠিক করতে হবে। পাশাপাশি যারা নতুন কর্মচারী ঢুকেছেন বা কর্মকর্তা ঢুকেছেন অনেক সময় দক্ষতার অভাবে বুঝে উঠতে পারেন না যে কীভাবে কাজটা করবেন। সেই জায়গায় যদি দক্ষতা তৈরির জন্য কিছু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন, পাশাপাশি সামাজিকি দক্ষতার প্রশিক্ষণ করেন, অ্যাসারটিভনেস প্রশিক্ষণ দেন তাহলে ভালো। এই জায়গার জন্যও কিন্তু অনেকে পিছিয়ে রয়েছেন। ওই কথাগুলোকে আমি কীভাবে ইতিবাচকভাবে নিতে পারব বা ইতিবাচকভাবে না নিলেও কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা যাবে, সেটা শিখতে হবে। এরপর মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা সেটি করতে হবে। মানসিক চাপ থাকবেই। কর্ম মানেই, কখনো কখনো বেশি চাপ, কখনো কখনো কম চাপ। সে সময় আমি কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবো সেটা শিখতে হবে। মানসিক চাপ একটি সময় ইতিবাচকও। 

অধ্যাপক মো. আজিজুল ইসলাম : মানসিক চাপ একজন মানুষকে বার্ন আউট করতে পারে। খুব বেশি হলে সমস্ত কর্মস্পৃহাকে নষ্ট করতে পারে, যদি সেটি খুব বেশি হয়ে যায়।

মাঝামাঝি মাত্রার মানসিক চাপ মানুষের কাজের জন্য ভালো। তবে যদি মাত্রাতিরিক্ত চলে যায় একটি মানুষকে পুরোপুরিভাবে সমন্বয়হীন করে দেয়।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলতে চাই, সোশ্যাল স্টিগমা বা এই যে কুসংস্কার এটি ক্ষতিকর। আমার যদি হার্টের রোগ হয় আমি সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলি। আমার মানসিক রোগ হলে কিন্তু আমি সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলি না। যার জন্য রোগের ব্যপ্তি আরো বেড়ে যায়।

কর্মক্ষেত্রে অনেকে যে দেরি করে আসেন বা অনুপুস্থিত, এর অধিকাংশ কারণ কিন্তু মানসিক। কিন্তু আমরা যখন কারণ জিজ্ঞেস করি, বলি যে শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম। কেউ কখনো বলবে না যে আমার মনটা খারাপ ছিল। আমার আসতে ইচ্ছে করছিল না। তাই কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে উচিত যে মানুষ যেন ভ্যান্টিলেট করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা। তার এই সমস্যা্র কথা যেন বলতে পারে। আলোচনা করতে পারে। আলোচনা করলে কিন্তু অন্য লাভও রয়েছে। আমার ভেতরে একটি অসুবিধা থাকতে পারে সেটি থেকেও কিন্তু আমি মুক্ত হতে পারি। সেই জন্য যারা কর্তৃপক্ষ তাদের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। আর এটা কিন্তু তার জন্য্ই ভালো। তার উন্নয়নের জন্য ভালো। তার কারখানার উন্নতির জন্য ভালো, লোকদের মনোবলের জন্য ভালো। তার লোকদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তার সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কারণ,তার লোকদের উন্নয়নের ওপর তার স্বাস্থ্যও নির্ভর করে।