মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গ্রহণ কি ভালো?

Looks like you've blocked notifications!
মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতি করে। ছবি : সংগৃহীত

প্রাচীন মিসরীয়রা মনে করত হৃদপিণ্ডই হচ্ছে চিন্তাশক্তির কেন্দ্র, আর মস্তিষ্কের কাজ হচ্ছে শরীরকে ঠান্ডা রাখা। রোমানদের মধ্যে বদ্ধমূল বিশ্বাস ছিল খারাপ বা অসুস্থ ইউটেরাস বা জরায়ু হচ্ছে হিস্টিরিয়া রোগের কারণ। যদিও পরে এবং এখন হিস্টিরিয়া একটি মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত। এর সঙ্গে জরায়ুর অসুস্থতার কোনো সম্পর্কই নেই। এ রকম অনেক ভুল বিশ্বাস প্রাচীন যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত ছিল।

শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সেই সব ভুল ধারণার কিছু কিছু এখনো চালু রয়েছে আজকের এই কম্পিউটার যুগেও। সমাজের অনেক জ্ঞানী লোকের মুখেও মাঝেমধ্যে উচ্চারিত হতে শোনা যায় সেই সব ভ্রান্ত তত্ত্ব এবং যুক্তির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা অবৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো। যেমন, অ্যান্টি অক্সিডেন্টের কথা খুব ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বলা হয় অনেক সময়।

শরীরে উপস্থিত ফ্রি রেডিক্যালগুলোর বিরুদ্ধে অ্যান্টি অক্সিডেন্টকে দাঁড় করানো হচ্ছে নায়কের ভূমিকায়। আসলে ব্যাপারটা কিন্তু ততটা নয়।সাধারণভাবে বলতে গেলে ফ্রি রেডিক্যাল হলো এমন একটি অণু, যার রয়েছে একটি বেজোড় ইলেকট্রন। এই বেজোড় ইলেকট্রনের কারণে এটি অতিমাত্রায় প্রতিক্রিয়াশীল করে তোলে। যদিও কোষের মাইটোকন্ড্রিয়ায় শক্তি উৎপন্নের প্রক্রিয়ায় এই ফ্রি রেডিক্যাল বেশ ওতপ্রোতভাবেই জড়িত।

এ ছাড়া হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ফ্রি রেডিক্যালস শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউন সিস্টেমের একটি সহায়ক উপাদান হিসেবে স্বীকৃত। কাজেই মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের চলমান স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।

কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষেত্র বিশেষে শরীরের ক্ষতি করে। অনেক সময় অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যেমন, ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন শরীরে ইতিমধ্যে বেড়ে ওঠা ক্যানসার কোষকে মদদ জোগায়। ভিটামিন ই  ছাড়া অন্য কোনো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উচ্চ মাত্রায় শরীরে গ্রহণ করলে বিশেষ কোনো উপকার হয় বলে জানা যায়নি। তারপরও ভিটামিন ই এর কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সবসময় ‘হতে পারে’ শব্দটি বেশ জোড়েসোরেই উচ্চারিত হয়ে আসছে। এটি ভিটামিন ই এর গুরুত্বকে কিছুটা ম্লান করে দিচ্ছে।

অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে আধুনিক এই যুগেও কেউ কেউ মনে করেন রোগের পেছনে জীবাণু নয় বরং শারীরিক অসমতা অথবা নেতিবাচক শক্তি দায়ী। এজন্য অরীক্ষিত হার্বাল মেডিসিন ব্যবহার করে থাকেন। সাধারণত পশ্চাদপদ দেশ এবং ব্যক্তিদের মধ্যেই এ ধরনের অপরীক্ষিত হার্বল মেডিসিনের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি। ভুলে গেলে চলবে না কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষ সারা পৃথিবীতেই রয়েছে, ফন্দিবাজ মানুষও রয়েছে বিশ্বজুড়ে। সুতরাং রোগ নিরাময়ের সহজলভ্য আশ্বাসে বিমোহিত বোকা মানুষগুলো ফন্দিবাজ মানুষের ফাঁদে পা দেবে এটাই তো স্বাভাবিক। একবিংশ শতাব্দীতেও কেউ যদি বিজ্ঞানের সুফল গ্রহণ করতে ব্যর্থ হন কিংবা বিজ্ঞানের আশীর্বাদ থেকে অজ্ঞানতাবশত নিজেকে বঞ্চিত রাখেন তাহলে তাঁর জন্য করুণা ছাড়া আর কী-বা করার আছে!

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলিফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ