মাছ খাবেন নাকি মাংস?

Looks like you've blocked notifications!
মাংসের চেয়ে মাছ নিরাপদ। ছবি : সংগৃহীত

যদিও কথায় বলে, ভাতে-মাছে বাঙালি, তারপরও অভিজাত বাঙালিরা মাছের চেয়ে মাংসকেই মর্যাদার খাবার হিসেবে গণ্য করে থাকেন। মাংসের প্রতি বিশেষ দুর্বলতা রয়েছে অনেকেরই। মাংস মানেই বেশি পুষ্টি, বেশি শক্তি, বেশি আমিষ—এমন একটি জনশ্রুতি প্রচলিত রয়েছে।

মাছ খাবেন না মাংস খাবেন? পছন্দের এ প্রশ্নে অনেকেই হয়তো মাংসকেই বেছে নেবেন। কিন্তু খাদ্যশক্তি, আমিষ ও ক্যালসিয়াম ইত্যাদির কথা চিন্তা করলে মাংসের প্রতি এতটা দুর্বলতা দেখানোর কোনো কারণ নেই। সামান্য আলোচনাতেই বিষয়টি আরো পরিষ্কার হয়ে উঠবে।

মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খাদ্যশক্তি পাওয়া যায় ইলিশ মাছে। ইলিশের খাদ্যশক্তি (প্রতি ১০০ গ্রামে) ২৭৩ কিলোক্যালরি। এ জন্যই হয়তো ইলিশকে মাছের রাজা বলা হয়ে থাকে। এ ছাড়া পাঙ্গাশ ও সরপুঁটির খাদ্যশক্তি ১৬১ কিলোক্যালরি, কৈ মাছের ১৫৬ কিলোক্যালরি, বাইন মাছের ১৫৫ কিলোক্যালরি, ভাঙ্গন মাছের ১৫৪ কিলোক্যালরি এবং শিং মাছের ১২৪ কিলোক্যালরি।

অন্যদিকে, মাংসের মধ্যে হাঁসের মাংসের খাদ্যশক্তি সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ১৩০ কিলোক্যালরি রয়েছে। অন্যদিকে মুরগিতে রয়েছে ১০৯ কিলোক্যালরি, খাসির মাংসে ১১৮ কিলোক্যালরি, গরুর মাংসে ১১৪ কিলোক্যালরি এবং কচ্ছপ ও মহিষের মাংসে ৮৬ কিলোক্যালরি। কাজেই দেখা যাচ্ছে, মাংসের চেয়ে অনেক মাছেরই খাদ্যশক্তি বেশি রয়েছে। এবার আসা যাক আমিষ বা প্রোটিন প্রসঙ্গে। মাংসে প্রোটিন বা আমিষের পরিমাণ অবশ্যই একটু বেশি। মাছের সঙ্গে মাংসের প্রোটিন ব্যবধান কতটুকু, এবার সেটিই দেখা যাক।

মুরগির মাংসে রয়েছে সবচেয়ে বেশি প্রোটিন। এর পরিমাণ (প্রতি ১০০ গ্রামে) ২৫ দশমিক ৯। গরুর মাংসে প্রোটিন বা আমিষ ২২ দশমিক ৬ গ্রাম, হাঁসের মাংসে ১ দশমিক ৬ গ্রাম, খাসিতে ২১ দশমিক ৪ গ্রাম, মহিষে ১৯ দশমিক ৪ গ্রাম। আর মাছের মধ্যে সর্বাধিক প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ হচ্ছে মহাশোল। এতে আমিষ বা প্রোটিনের পরিমাণ প্রতি ১০০ গ্রামে ২৫ দশমিক ২ গ্রাম।

অন্যান্য মাছের মধ্যে প্রতি ১০০ গ্রাম প্রোটিনের পরিমাণ হচ্ছে—শিং মাছে ২২ দশমিক ৮ গ্রাম, ইলিশ মাছে ২১ দশমিক ৮ গ্রাম, ফলি মাছে ১৯ দশমিক ৮ গ্রাম, কাতলা মাছে ১৯ দশমিক ৫ গ্রাম, বাইন মাছে ১৯ দশমিক ১ গ্রাম, চিতল মাছে ১৮ দশমিক ৬ গ্রাম। দেখা যাচ্ছে, মাংস ও মাছের প্রোটিন ব্যবধান খুব বেশি নয়। মাছে ক্যালসিয়ামের ভূমিকাই মুখ্য। বিভিন্ন মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ হচ্ছে বাটা মাছে ৭৯০ মিলিগ্রাম, শিং মাছে ৬৭০ মিলিগ্রাম, ফলি মাছে ৫৯০ মিলিগ্রাম, বাচা মাছে ৭৯০ মিলিগ্রাম ও বেলে মাছে ৩৭০ মিলিগ্রাম। অন্যদিকে মাংসের ক্যালসিয়াম মাছের তুলনায় কোনো ধর্তব্যের মধ্যেই আসে না। যেমন মুরগির মাংসে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ ২৫ মিলিগ্রাম, গরুতে ১০ মিলিগ্রাম, খাসিতে ১২ মিলিগ্রাম।

সুতরাং অযথা মাংসের প্রতি ঝোঁক দেখানোর কোনো যুক্তি নেই। কারণ, মাছের পুষ্টিমান মাংসের তুলনায় কোনো অংশেই কম নয়। বাড়ন্ত বয়সের শিশুর জন্য মাংসের চেয়ে মাছই বেশি প্রয়োজন। এ ছাড়া লাল মাংসে রয়েছে ক্ষতিকর চর্বি। এটি হৃদরোগের একটি কারণ। তবে মাংসের মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ পুষ্টিসম্পন্ন মাংস হচ্ছে চামড়া ছাড়া মুরগির মাংস। আরেকটি তুলনায় দেখা যাচ্ছে, শিং মাছ খাদ্যশক্তি, আমিষ ও ক্যালসিয়ামের পরিমাণের দিক থেকে গরু ও মহিষের মাংসের চেয়ে উচ্চ মানসম্পন্ন ও নিরাপদ। সব দিক বিবেচনা করলে বলতে হয়, মাংসের চেয়ে মাছই ভালো। বিশেষ করে গরু, খাসি ও ভেড়ার মাংসের চর্বিতে রয়েছে হৃদরোগের আগমন বার্তা। এটি প্রায় কোনো মাছেই নেই।   

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।