রক্তস্বল্পতা সাধারণত কোন সময়ে বেশি হয়?

Looks like you've blocked notifications!

অবসাদ, দুর্বলতা, শরীর ফ্যাকাসে হওয়া ইত্যাদি রক্তস্বল্পতার লক্ষণ। সাধারণত গর্ভাবস্থায় ও ঋতুস্রাবের সময় রক্তস্বল্পতার সমস্যা বেশি দেখা যায়।

এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের  ২৯৩০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : রক্তস্বল্পতা কীভাবে বোঝা যাবে?

উত্তর : প্রথমে আমরা ক্লিনিক্যালই দেখার চেষ্টা করি। যখন দুর্ঘটনা ঘটল, তখন অনেক রক্ত চলে গেল। সেটি তো এমনিতেই বোঝা যায়। অথবা লিভারের কারণে পায়খানার সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে রক্ত চলে গেল। একে লিভার সিরোসিস বলি। এটা কিন্তু আমরা জানি। প্রথমে আমরা ইতিহাস নেওয়ার চেষ্টা করি। জানতে চাই, আপনার কোনো রক্তস্বল্পতার ইতিহাস রয়েছে কি না। পরে আমরা তার ইতিহাস নেব খাদ্যাভ্যাসের। আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রোগী খাচ্ছে কি না, সেগুলো জানতে চাওয়া হয়।

প্রশ্ন : কিছু কিছু জিনিস আয়রন শোষণকে কমিয়ে দেয়। তাহলে আপনি এমন কিছু খাচ্ছেন কি না যে আয়রন শোষণ কমে যাচ্ছে?

উত্তর : আমাদের বাংলাদেশে সবারই একটি বদ অভ্যাস, আমরা বেশি গ্যাসট্রিকের ওষুধ খাই। গ্যাসট্রিকের সমস্যা হলেও খাই, না হলেও খাই। আয়রন শোষণ করতে গেলে এসিড লাগবেই। আমি যখন এই গ্যাসট্রিকের ওষুধগুলো খাচ্ছি, তখন এই এসিড কমে যাচ্ছে। এগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছে। আয়রন কিন্তু আমার শোষণ হচ্ছে না। আমার কিন্তু রক্তশূন্যতা দেখা দিচ্ছে। তাহলে যে রোগীরা নিয়মিত গ্যাসট্রিকের ওষুধ খাচ্ছে, তাদের এগুলো দেখা দেবে। পাশাপাশি আমরা কথা কথায় মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টাসিড খেয়ে ফেলি। এটিও আয়রন শোষণে বাধা দেয়।

আমরা একটু কোমরে ব্যথা, পিঠে ব্যথা, কথায় কথায় ব্যথার ওষুধ খেতে থাকি। ব্যথার ওষুধ খেলে পাকস্থলীর ভেতর ঘা তৈরি হয়। সেখান থেকে রক্ত যায়। এটি ক্ষুদ্রান্ত্রেও কিছুটা সমস্যা করে। ডিওডেনামের প্রথম ভাগে গিয়ে আয়রন শোষণ হয়। আরেকটি পুষ্টির মধ্যে বলি ভিটামিন বি১২। ভিটামিন বি১২ থাকে সাধারণত লাল মাংস, মাছ, দুধ অথবা ডিমের কুসুমের মধ্যে। সাধারণত আমরা কমবেশি সবাই খাই। তাহলে আমি ইতিহাস থেকে এটি পেয়ে যাচ্ছি। আমাকে খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাসটা নিতে হবে।

আরেকটি জিনিস আমরা বলি যে ফলিকের অভাব। এটি একটি প্রচলিত সমস্যা। অনেক বাচ্চার মধ্যে দেখা যায়, তারা ফাস্টফুড খাচ্ছে, পোলাও খাচ্ছে, মাংস খাচ্ছে। তারা কিন্তু শাকসবজি খেতে চায় না। সবুজ শাকসবজি না খেলে কিন্তু আপনি ফলিক এসিড পাচ্ছেন না। ভিটামিন বি১২ লিভারের তিন বছর পর্যন্ত সংগৃহীত থাকতে পারে। তবে ফলিক এসিড থাকে না। তাই ফলিক এসিড না খেলে সমস্যা দেখা দেবে। তাহলে এ ক্ষেত্রে আমার ইতিহাস দরকার।

এখন আমরা করব কি, পরীক্ষা করে দেখব। ভিটামিন বি১২-এর অভাব হলে দেখা যায় নার্ভের ওপর তার কিছুটা প্রভাব পড়ে। হাঁটাতে একটু দুর্বলতা দেখা দেয়। চোখে কিছু সমস্যা হয়, স্মৃতিতে সমস্যা হয়, যাকে বলি ডিমেনশিয়া। কিছু নিউরোলজিক্যাল ক্ষতি হয়ে যায়। এগুলো অনেক সময় স্থায়ী হয়ে যায়। তার মানে এই জিনিসগুলো আমার খেয়াল করতে হবে।

প্রশ্ন : কোন বয়সে হয়?

উত্তর : ইমিউনো কিছু বিষয় রয়েছে, যেকোনো বয়সে হতে পারে। আমাদের যখন বৃদ্ধি বেশি থাকে অথবা একজন মা যখন গর্ভধারণ করেন অথবা একটি মেয়ে যখন ঋতুস্রাবের পর্যায়ে থাকে, তখন রক্তস্বল্পতার সমস্যা হতে পারে। এই অভাবগুলো প্রকট আকার ধারণ করে। তাহলে আমাদের সব ইতিহাস নিতে হবে। এরপর চলে যাব আমরা পরীক্ষায়। রক্তস্বল্পতা হলে শরীরটা সাদা, ফ্যাকাসে হয়ে যাবে। যখন কোনো রোগী সাদা হয়ে যেতে থাকে, তখন এটি একটি ঝুঁকিপূর্ণ সংকেত। আয়রনের অভাবে রক্তস্বল্পতা হলে জিহ্বাটা সমান হয়ে যায়। রোগী খাওয়ার সময় বলবে আমার ঝাল লাগে। ভিটামিন বি১২-এর অভাব হলে লাল টকটকে হয়ে যায়। মুখের কোনায় কোনায় ঘা হতে পারে। এরপর দেখব যে নখগুলো পাতলা হয়ে যাচ্ছে। আঙুল দিয়ে একটু চাপ দিলে দেখব নখ ভেঙ্গে যাচ্ছে। আঙুলগুলো চামচের মতো হয়ে যায়। আবার রক্তস্বল্পতা অনেক সময় ক্যানসারের কারণ হতে পারে। তাই আমাকে হাত দিয়ে দেখতে হবে, পেটে কোনো চাকা বা কিছু রয়েছে কি না।

পরীক্ষার ক্ষেত্রে আমরা সিবিসি করব, পেরিফেরাল ব্লাড রেট করব। এগুলো করে আমরা তাকে পরীক্ষা করব, সে অনুযায়ী চিকিৎসা করব।