দেশে প্রতি বছর সাত হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক থ্যালাসেমিয়া ফেডারেশনের মতে, বাংলাদেশের এক কোটি ১০ লাখ লোক থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। বাংলাদেশে প্রতি বছর সাত হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৬০ হাজার।

আজ বুধবার থ্যালাসেমিয়া বিষয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রমে এ তথ্য জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘরের মিলনায়তনে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।  

ওই আয়োজনের স্লোগান ছিল, ‘সাল দুই হাজার আঠাশে থ্যালাসেমিয়া থাকবে না বাংলাদেশে’।

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত মারাত্মক রক্তের রোগ। এই ধরনের রোগীরা প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। আর সঠিক সময়ে চিকিৎসা করা না হলে আক্রান্ত রোগী রক্তশূন্যতায় মারা যেতে পারে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘স্বাধীনতার যে মহানায়ক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁকে ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব হতো না। আজ  তিনি স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। তিনি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে, সাদা–কালো, ধনী-দরিদ্র সবাইকে স্বাধীনতার বিষয়ে এক করতে পেরেছিলেন।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের মাঝে তিনদিনে ছয় লাখ কলেরা ভ্যাক্সিন দিয়েছি। পোলিও ভ্যাক্সিন, হামের ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে। নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিতের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’

২০২৮ সাল নাগাদ বাংলাদেশ থেকে থ্যালাসেমিয়া দূর করা হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সব সরকারি হাসপাতালে এই রোগীর রক্ত পরীক্ষা বিনামূল্যে করা হবে।’  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া নির্মূলে সচেতনতা প্রয়োজন। এটি নির্মূলে বিয়ের আগে স্ক্রিনিং (পরীক্ষা) করতে হবে।’ সব বেসরকারি হাসপাতালকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের নিয়ে ব্যবসা করবেন না।’ 

২০২৮ সালে বাংলাদেশ থেকে থ্যালাসেমিয়া নির্মূলের ঘোষণা দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘এই কাজ করতে আমরা ১০টি অ্যাজেন্ডা সেট করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে, থ্যালাসেমিয়া ও এর প্রতিরোধের বিষয়ে জনগণের মধ্যে বিশেষ করে তরুণ  জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা, বিবাহপূ্র্ব স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ দম্পতি নির্ণয় করা,  গর্ভাবস্থায় অন্যান্য প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঙ্গে থ্যালাসেমিয়ার স্ক্রিনিং করা, ঝুঁকিপূর্ণ দম্পতিদের সন্তান গ্রহণের সময় বিনামূল্যে গর্ভস্থ ভ্রূণ পরীক্ষা করা,  থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য একটি জাতীয় রেজিস্ট্রি প্রণয়ন করা।’

আবুল কালাম আজাদ আরো বলেন, ‘আরো যা আছে তা হল, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সব পর্যায়ে চিকিৎসা প্রদানের জন্য একটি জাতীয় গাইডলাইন প্রণয়ন করা, ডাক্তার, নার্সসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীদের থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা ও প্রতিরোধের বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার জন্য রক্ত, ওষুধ, ফিল্টার, পাম্পসহ সব চিকিৎসা অনুষঙ্গ সরবরাহ এবং সহজলভ্য করা, মাধ্যমিক পাঠ্যপুস্তকে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের উপায় সংবলিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে গণমাধ্যমের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে প্রচারণা অভিযান পরিচালনা করা।   

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ডা.আতিয়ার রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব ডা. হাবিবুর রহমান।