সিজোফ্রেনিয়া কী?

Looks like you've blocked notifications!

সিজোফ্রেনিয়া একটি জটিল মানসিক রোগ। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০১৬তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন :  সিজোফ্রেনিয়া কী?

উত্তর : রোগ সম্পর্কে তো অনেক কথা বলা যায়। যতগুলো মানসিক রোগ এখন পর্যন্ত দেখা যায়, তার মধ্যে এটি সত্যিকার অর্থেই জটিল। এটা নিয়ে টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করার বা বলার অনেক কিছু রয়েছে। কারণ, চিকিৎসা তো মানুষ জানে না। এটি নিয়ে অনেক ধরনের দ্বিধা রয়েছে।

অনেক সময় আমরা বলি এই ধরনের রোগী যদি হয়, তাহলে কোনো কিছুই সে চিনবে না। এটা সত্যি নয়। সিজোফ্রেনিয়া রোগটি মূলত মনে চিন্তাভাবনার রোগ। ধরুন, আমি যদি মনকে ছোট দুটো ভাগে ভাগ করি, তাহলে বুঝব। তবে আরো অনেক ভাগ রয়েছে। আমি কেবল উদাহরণের জন্য বলি। যেমন ম্যামোরি। আমাদের মনে রাখার বিষয়। যেই পদ্ধতিতে আমরা মনে রাখি। আবার চিন্তা, আমি কীভাবে কাজ করব, কীভাবে কী করব- দুটো কিন্তু এক জিনিস নয়। দুটো মনের আলাদা জিনিস। সিজোফ্রেনিয়া রোগটি আসলে মনের চিন্তার একটি রোগ। ম্যামোরির রোগ নয় বা মনে রাখার যে বিষয়টি সেটার রোগ নয়। এটি চিন্তার একটি রোগ। নামটাই সিজোফ্রেনিয়া বা স্কিজোফ্রেনিয়া। এটা একটি জার্মানি শব্দ। স্কিজ শব্দের অর্থ হলো ভাগ হয়ে যাওয়া। চিন্তার জায়গাটা যখন ভাগ হয়ে যায়, মানুষ যেটি দেখছে, সেটার সঙ্গে যখন কো রিলেট করতে পারছে না, তখন সমস্যা হয়। এটা হলো থিউরেটিক্যাল কথা।

আর মূল কথা, প্রাথমিকভাবে যেটি বুঝব, মানুষের জন্য যেটি দরকার, সেটি হলো, সিজোফ্রেনিক ব্যক্তি মানুষকে সন্দেহ করা শুরু করে, যে আমার ক্ষতি করবে। বা এমন একটা বিশ্বাস নিয়ে আসে, যেটি বাস্তবিকভাবে সম্ভব নয়। সম্পূর্ণ ভ্রান্ত একটি ধারণা থাকবে তার মধ্যে। ভ্রান্ত ধারণার যদি ব্যাকগ্রাউন্ড ঠিক থাকে, তখন সেটি আবার এর মধ্যে পড়বে না। একে বলে ডিলুশ্যন। ডিলুশ্যন হলো, যার আসলে কোনো ভিত্তি নেই। আমি হয়তো চিন্তা করছি, যুক্তরাষ্ট্রে বসে আমার বিরুদ্ধে কেউ ষড়যন্ত্র করেছে। বা যুক্তরাষ্ট্রে বসে কেউ কথা বলছে, আমি এখান থেকে বসে শুনতে পারছি। যেটা সে বিশ্বাস করে। অথবা এমন একটি বিশ্বাস যে আমার মস্তিষ্ক গলে গলে আমার প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। সে এটা বিশ্বাস করে। কোনো ভাবে এটি মনে করে সেটি নয়। সে এটিকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে। আর শরীরের কোনো একটি ইন্দ্রীয় দিয়ে সত্যিকার অনুভূতি তার আসে। আমার সামনে বোধ হয়, কেউ একজন বসে আছে। আমরা যেমন চাই, এই চিন্তাটা আমি সরিয়ে দেব বা চিন্তাটা আমি করব না, এটি সে পারে না। একে বলে হ্যালোসিনেশন। হ্যালোসিনেশন মানে যেই বিষয়টির অস্তিত্ব নেই, একে একেবারে সত্যিকার রূপে সে অনুভব করতে পারবে। যেমন আমি এখন আমার মায়ের মুখ চিন্তা করতে চাই। তবে করব না। ওই নিয়ন্ত্রণ সবার রয়েছে। তবে হ্যালোসিনেশনে কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। সে চিন্তাও করবে না যে এটি সত্যি নয়। সে মনে করবে এটিই সত্যি। হ্যালুসিনেশন ও ডিলুশ্যন এই দুটো জিনিস সাধারণত যদি একইভাবে থাকে বা নিয়মিত হয়, সেগুলো সিজোফ্রেনিয়ার প্রধান বিষয়। আরো অনেক বিষয় থাকে। অবশ্যই সেটি নিয়ন্ত্রণযোগ্য।