বয়ঃসন্ধিকালে ঋতুস্রাবের বিভিন্ন সমস্যা

Looks like you've blocked notifications!

অনেকেই বয়ঃসন্ধিকালে ঋতুস্রাবের কারণে নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়। যেমন পেট ব্যথা, অনিয়মিত ঋতুস্রাব, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।  

এসব সমস্যার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৩১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. কামরুন নেসা আহমেদ। বর্তমানে তিনি গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজে অবসটেট্রিক ও গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। 

প্রশ্ন : আর কোনো বিষয় কি রয়েছে, জটিল কোনো কিছু, যার জন্য সমস্যা হতে পারে? 

উত্তর : বয়োঃসন্ধিতে সাধারণত এমন জটিল কোনো কিছু হয় না। তবে এই সময় আরেকটি সমস্যা নিয়ে আসে, সেটি হলো অতিরিক্ত রক্ত ভাঙ্গে। মেনোরেজিয়া বলি।

ঋতুস্রাবের চক্রটা অনেক লম্বা থাকছে। রক্তপাত বেশি হচ্ছে। এই সময় আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কিছু পাওয়া যায় না। 

এখানে দেখি যে তার কোনো থাইরয়েডের সমস্যা রয়েছে কি না। তার কোনো ব্লিডিং ডিজঅর্ডার রয়েছে কি না। আমি আমার জীবনে দুজন রোগী পেয়েছি, যারা অতিরিক্ত রক্তপাত নিয়ে এসেছে। এরপর তাদের একিউট লিউকোমিয়া ধরা পড়েছে। আমরা একেবারে কিছু বের না করে ছেড়ে দেই না।  সেটা একটু বুঝে নিতে হবে। আবার অনেকের অনেক বেশি রক্তপাত হয়ে এনিমিয়া হয়। এমনও রয়েছে রক্ত দিতে হয়। আমরা হয়তো রক্ত দেই বা আয়রন মুখে খেতে দেই। আর যাদের রক্তপাত বেশি হচ্ছে , রক্তস্বল্পতা তৈরি হয়ে যাচ্ছে, তবে কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছি না,  তার জন্য আমরা হরমোনগুলো প্রেসক্রাইব করি। 

১৭-১৮ বছর বয়সের মেয়ে, বিবাহিত যদি হয়, তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা হলে পিলের কথা বলি। বুঝিয়ে বলি পিল খেলে কখনো সন্তান হতে অসুবিধা নেই। ঋতুস্রাব নিয়মিত হবে। রক্তপাতও কম হবে। বিবাহিতদের ক্ষেত্রে পিলও প্রেসক্রাইব করি। 

আরেকটি সমস্যা নিয়ে আসে। সেটি হলো ব্যথা। ডিজমেনোরিয়া। প্রাইমারি ডিজমেনোরিয়া। সাধারণত ঋতুস্রাবের আগে আগে শুরু হয় ব্যথা, একদিন আগে বা ওই দিন থাকে। প্রথম দুই-তিন দিন ব্যথা থাকছে। এরপর চলে যাচ্ছে। এরপর ব্যথাটা তীব্র হয়ে যাচ্ছে। তখন জিজ্ঞেস করি, তুমি কি এটি নিয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ রেখেছ? যখন বলে, হ্যাঁ, আমি স্কুলে যেতে পারছি না, তার মানে তার এতখানিই ব্যথা করছে। তখন আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এনএসিআইডি প্রেসক্রাইব করি। আবার অনেকের ক্ষেত্রে কেবল পেরাসিটামল দিলে হয়ে যায়। রোগীর অভিযোগ অনুযায়ী আমরা প্রেসক্রাইব করি। বলে দেই, তোমার টানা খাওয়ার দরকার নেই। ব্যথা হলে খাবে। না হলে খাবে না। 
প্রশ্ন : কখনো কি ভয় পায় যে এই ব্যথা আজীবন টানতে হবে?

উত্তর : না, এমনটা নয়। এই যে ব্যথা, তাদের পরে গর্ভাধারণে সমস্যা হতে পারে- এই ভয় পায়। আবার দেখা গেল যে ফিজিওলজিক্যাল সিস্ট পাওয়া গেছে। ছোট্ট একটা সিস্ট থাকতেই পারে। সিস্টের কথা শুনলে ভয় পেয়ে যায়। আল্ট্রাসোনো নিয়ে আসে। এমনও হয় যে এর জন্য অস্ত্রোপচারও করে ফেলেছে। অনেক সময় আমরা অস্ত্রোপচার করতে চাই না। রোগীই অনুরোধ করে অস্ত্রোপচারের জন্য। এত ভয় পেয়ে যায় তারা। তখন একটু বুঝিয়ে বললে, ওষুধ দিলে দেখা যায় সিস্টগুলো ভালো হয়ে আসে। পরবর্তী আল্ট্রাসোনোতে যখন না থাকে, তখন তারা নিশ্চিত হয়। 

প্রশ্ন : এই ক্ষেত্রে পারিবারিক সহযোগিতার ভূমিকা কতখানি থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন?

উত্তর : আমার মনে হয় এখনকার মায়েরা বেশি চিন্তিত হয়ে যায়। মায়েরা উদ্বিগ্ন হয়, বাচ্চাদের উদ্বিগ্ন করে। যখন কোনো সমস্যা পাওয়া না যায়, ‘তখন বলি ভয় পাবেন না। তাঁকে একটি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে দেন। আপনি উদ্বিগ্ন হলে সে নিজেও উদ্বিগ্ন হবে’। আমরা আশা করবো মায়েরা সহযোগী হবেন ভয় না পাইয়ে দিয়ে।