সঠিক হাসপাতাল নির্বাচনের গুরুত্ব কতখানি?

Looks like you've blocked notifications!

সঠিক চিকিৎসার জন্য সঠিক হাসপাতাল, সঠিক চিকিৎসক নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৩৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. নীলাঞ্জন  সেন। বর্তমানে তিনি ব্যাংকক হসপিটাল বাংলাদেশ অফিসের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : একজন রোগীর জন্য ভালো হাসপাতাল নির্বাচনের গুরুত্ব কতখানি?

উত্তর : এ বিষয়ে গুরুত্ব অপরিসীম। ধরুন, একজনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে, অথচ সে না জেনে একটি জেনারেল হাসপাতালে চলে গেল। ওই ধরনের হাসপাতালে তার এই ধরনের হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা নেই। অথচ তার প্রাণ ধারণের জন্য, তার জীবন রক্ষার জন্য, এমন একটি হাসপাতালে তাৎক্ষণিক নিয়ে যেতে হবে যেখানে এই ব্যবস্থাপনা রয়েছে। এখানে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের জন্য একজনের জীবনও চলে যেতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা শহরে যে যানজট, এখান থেকে যদি আবার আরেক জায়গায় নিয়ে যেতে হয়, কী ঘটবে। সে জন্য আমাদের জানতে হবে, কোন রোগের জন্য কোথায় যাওয়া উচিত।

প্রশ্ন : আমাদের অনেক রোগীর মধ্যে দ্বিধা কাজ করে। হয়তো রোগী স্ট্রোক করেছে, তাকে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। এর পর বলছে না এটা তো হার্টের রোগ আপনি নিউরোসায়েন্স বা অন্য মেডিকেল কলেজে যান। এগুলো প্রতিরোধে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : এই বিপদটা কেন হচ্ছে জানেন? স্ট্রোক মানে এটি হার্টের স্ট্রোকও হতে পারে, মস্তিষ্কের স্ট্রোকও হতে পারে। এক সময় স্ট্রোক বলতে এভাবে শব্দটিকে ব্যবহার করা হতো। তবে এখন শব্দটি কি পরিবর্তন হয়নি? বোঝার সুবিধার্থে এখন বলে মস্তিষ্কের স্ট্রোক। আর ওটা হলো হার্ট অ্যাটাক। আর হার্টেরটিকে আমরা অ্যাটাক বলি, স্ট্রোক আর বলি না। দ্বিধাকে এড়ানোর জন্য।

প্রশ্ন : রোগীর জন্য মাল্টিপাল হাসপাতাল বেশি গ্রহণযোগ্য,না কি যেখানে একক রোগের চিকিৎসা হয়, সেটি গ্রহণযোগ্য?

উত্তর : এটি নির্ভর করবে যিনি অসুস্থ হয়েছে, তার সমস্যা কতটুকু গুরুতর, তার ওপর। বিষয়ভিত্তিক অন্য অসুখগুলো যে তার রয়েছে, সবগুলোর সমন্বিতভাবে চিকিৎসা করার প্রয়োজন রয়েছে, না একটির পর আরেকটি করলে হবে। যেমন ধরুন, আমাদের এখানে এমন একটি কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে হার্ট অ্যাটাকেরও চিকিৎসা হবে, ডায়াবেটিসেরও চিকিৎসা হবে। আবার অন্যান্য কিছুরও চিকিৎসা হবে। সুতরাং সে ওই হাসপাতালে গেলে সব ধরনের চিকিৎসাই পাবে।

আবার আরেকটি হাসপাতাল হয়তো  রয়েছে, যেখানে শুধু হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসাটাই গুরুত্বপূর্ণভাবে হয়, সেখানে অন্যগুলোর চিকিৎসা হবে না, এমন হয়তো নয়, কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে একটু ধীর হতে পারে বা সমন্বয়ের অভাব হতে পারে। সে জন্য হাসপাতাল পছন্দ করতে হবে রোগীর অবস্থার ওপর বিবেচনা করে।

প্রশ্ন : হাসপাতালের কোন কোন বিষয় ভেবে ঠিক করা উচিত যে আমার জন্য এই হাসপাতালটি সঠিক?

উত্তর : এখন তো আধুনিক যুগে চলে এসেছি। এখন চিকিৎসা কিন্তু কেবল একজন ভালো চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করে না। চিকিৎসক তো লাগবেই, সঙ্গে লাগবে আধুনিক প্রযুক্তি, সেবা লাগবে। আমি তিনটি জিনিসের ওপর জোর দেব। খুব বড় আর্কিটেকচার গড়ে ওঠেছে, খুব সুন্দর দেখতে হাসপাতাল- এটি দিয়ে কিন্তু বোঝায় না, এই হাসপাতালটি আমার চিকিৎসার জন্য ভালো। আমার জানতে হবে, ওই হাসপাতালের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে কি না। মেশিনগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন, এমন রোগী রয়েছেন কি না। আমার জন্য উপযুক্ত সার্জন বা যে বিষয়ে আমার অসুখের চিকিৎসা দিতে হবে, তেমন পরামর্শক রয়েছেন কি না এবং সঠিক সেবা রয়েছে কি না। মূল তিনটি। এরপর আসবে, আমি যেখানে রয়েছি সেখান থেকে  কেন্দ্রটি কতদূরে হবে, আমার চিকিৎসা নিতে গেলে অন্যান্য সুবিধাগুলো আমি কী রকম পাবো এবং খরচের বিষয়টিও আসবে।

প্রশ্ন : সাধারণ চিকিৎসা ও জরুরি চিকিৎসা – এ দুটোর ক্ষেত্রে হাসপাতাল নির্বাচনের কোনো ভাবনা থাকা কি দরকার?

উত্তর : অবশ্যই দরকার। জরুরি ব্যবস্থা সব হাসপাতালে একই রকম নয়। সেখানেও গঠন কেমন, ২৪ ঘণ্টা সেবার জন্য চিকিৎসক রয়েছেন কি না, সেই জিনিসগুলো জানতে হবে।

ধরুন, আমার ডায়াবেটিস হয়েছে, তবে নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না কোনোভাবে, সেক্ষেত্রে আমি কিছু সময় পাবো, সেই ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন নেই। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন।

প্রশ্ন : একজন রোগীকে সন্তুষ্টি আনার ক্ষেত্রে হাসপাতালের কী কী জিনিস মনে রাখা দরকার?

উত্তর :এই জন্য হলো সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। সেখানে চিকিৎসককে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করতে হবে। রোগীর সঙ্গে একটি সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কাউন্সেলিং সঠিকভাবে হতে হবে।নার্সিং কেয়ারের দিক থেকে আমরা হয়তোবা এখন অনেক দেশ থেকে পিছিয়ে রয়েছি। এটা আমাদের বলতে লজ্জা নেই। আমাদের ভালো চিকিৎসক রয়েছে, অনেক জায়গায় ভালো যন্ত্রপাতিও রয়েছে। তবে আমাদের নাসিং কেয়ারের ক্ষেত্রে আমরা একটু পিছিয়ে থাকার কারণে, সন্তুষ্টিটা রোগীর অনেক সময় আসে না এবং ভুলও হয়। এই সব জিনিসগুলো একটু দেখতে হবে।

আর সম্পূর্ণ ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা রয়েছেন, তাদেরও সম্পূর্ণ ব্যব্স্থাপনা এভাবে নিতে হবে যে মেঝে পরিষ্কার থেকে শুরু করে কোনো সংক্রমণ যাতে না ঢোকে, শুধু শুধু কেবল রোগী যেন কষ্ট না পায়, তার খাবার যেন সঠিক হয়- যদি হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয়-একজন ভালো ডায়েটেশিয়ান যেন এগুলোর তত্ত্বাবধায়নে থাকেন, সব কিছু কিন্তু ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। কারণ, একজন রোগী কিন্তু কেবল একজন চিকিৎসকের চিকিৎসায় ভালো হয় না। একটি সমন্বিত চিকিৎসা ব্যবস্থাতে সে তাড়াতাড়ি আরোগ্য লাভ করে। একটি পুণর্গঠন সেন্টার রয়েছে কি না দেখতে হবে। সব মিলিয়ে যে সমন্বিত ব্যবস্থা একে আমরা আদর্শ হাসপাতাল বলি।

প্রশ্ন : একজন রোগী হাসপাতালে গেলে যেন বিলের বিষয়ে ঝামেলায় না পড়তে হয়, এই জন্য রোগীর তরফ থেকে কী ভাবা উচিত, আর হাসপাতালেরও এই ক্ষেত্রে রোগীকে আগে থেকে বলা- এই বিষয়ে সমাধান কী করে করা উচিত? আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : আমার পরামর্শ হলো এক একটি বেসরকারি হাসপাতাল যেগুলো তাদের বিলগুলো অনেক সময় ঠিক একই রকম নয়। এখানে সরকারেরও কিছু ভূমিকা থাকা দরকার। আর  ম্যানেজমেন্টকে নিরপেক্ষ হতে হবে। রোগীর কোথায় কী খরচ হচ্ছে, তাতে যেন একটি স্বচ্ছতা থাকে। বিলটা কত হচ্ছে সময়ে সময়ে জানাতে হবে। তার যেন একটি মানসিক প্রস্তুতি থাকে। এইভাবে যদি যাই, আস্থার বিষয়টি তখনই গড়ে ওঠবে।