চিনির বিকল্প হিসেবে কী খাবেন?
অনেকের বিভিন্ন অসুখের কারণে চিনি খাওয়া নিষেধ থাকে। আবার অনেকে ওজন বাড়বে এই ভেবে চিনি খেতে ঠিক পছন্দ করেন না। তাহলে এর বিকল্প হিসেবে কী খাওয়া যায়?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানে কথা বলেছেন অ্যাপোলো হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার হিসেবে মধু আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে আমরা এখন সাদা চিনি বা চিনিকে এড়িয়ে যেতে বলি। সুতরাং চিনির বিকল্প হিসেবে মধুর কোনো জুরি নেই। একে প্রাকৃতিক এনার্জি বুস্টার এই জন্য বলা হয়, কারণ,এটি খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত শক্তি পাওয়া যায়।’
মধুর রয়েছে অনেক গুণ, বিশেষ করে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মধুর যে গুণ রয়েছে, অনেকে বলে এটি ওষুধের মতো আমাদের শরীরে কাজ করে। যারা স্কুলে যায়, তাদের সকালবেলা যদি দুধের সঙ্গে একটু মধু দিয়ে দেওয়া যায়, বা তাদের খাবারে মধু যোগ করা যায়, তাহলে শিশুরা অনেকক্ষণ কর্মক্ষম থাকে, তাদের লেখা পড়ার প্রতি মনোযোগ বাড়ে। যারা ওজন কমাতে চান, তারা যদি প্রতিদিন সকালে একগ্লাস কুসুম গরম পানির সঙ্গে এক চামচ মধু ও লেবু মিশিয়ে খান, তাহলে এটি আপনার বিপাককে বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করবে।’
চিনির বিকল্প হিসেবে মধুর জুরি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মধুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স চিনির তুলনায় অনেক কম। এটি শরীরে চিনির তুলনায় একটু ধীরে সুগারের মাত্রাকে বাড়ায়। সুতরাং যারা তাদের ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে চান, তাদের জন্য এখন থেকে চিনির পরিবর্তে মধু খাওয়া অবশ্যই উচিত।’
মধুতে এনার্জি ছাড়াও বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান চলে আসে জানিয়ে পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন,‘দেখা যায়, ১০০ গ্রাম মধুতে ৩০৪ কিলোক্যালোরি পাওয়া যায়। এ ছাড়া সামান্য পরিমাণ ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তাই যারা ব্যায়াম করেন, তাদের বেশির বৃদ্ধির জন্য মধু অনেক উপকারী।’
ঠান্ডা কাশি প্রতিরোধ করতে মধু সাহায্য করে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি প্রতিদিন লেবু চায়ের সঙ্গে একটু করে মধু খান, তাহলে গরম বা ঠান্ডার যে প্রভাবে ঠান্ডা কাশি লাগে, সেটি প্রতিরোধ হবে।’
মধু বিভিন্ন ফর্মে পাওয়া যায় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখা গেছে ক্রিমি মধু রয়েছে, শুষ্ক মধু রয়েছে, পাস্তুরাইজ মধু রয়েছে,অনেক সময় কাঁচা মধুও পাওয়া যায়। পাস্তুরাইজ মধু আমাদের দেশে অনেক দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। এটি জীবাণুমুক্ত থাকে।’
অনেক সময় দেখা যায়, বাচ্চাদের জন্মের পর তাদের মধু খেতে দেওয়া হয়। এটি কোনোভাবেই করা যাবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যদিও মধুর অনেক গুণ, আর এটি খুব স্বাস্থ্যকর, তবে এক বছরের নিচের বাচ্চার খাবারে কখনোই মধু দেবেন না।’
‘ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা ছাড়া প্রায় সবাই যারা শারীরিকভাবে সুস্থ, তারা সারাদিন এক থেকে দুই চা চামচ মধু খেতে পারবেন। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের এ জন্য মানা করা হয়, কারণ হয়তো মধু খাওয়ার পর সে সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। ক্যানসারের রোগীদের দেখা যায় বিভিন্ন ফলের রসের সঙ্গে অনেক এনার্জির দরকার হয়, তখন মধু ব্যবহার করা হয়।
এ ছাড়া যেসব রোগীর অনেক ক্যালোরি দরকার হয়, (যেমন গর্ভবতী মা, শিশু) তাদের জন্য মধুর কোনো জুরি নেই’ – জানান তিনি।