প্যানিক ডিসঅর্ডারের লক্ষণ ও প্রতিকার

Looks like you've blocked notifications!
ডাক্তার মোহাম্মদ শামসুল আহসান।

কোনো কারণ ছাড়াই তীব্র উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা প্যানিক ডিসঅর্ডারের লক্ষণ। এই লক্ষণ যখন বড় আকার ধারণ করে তখন ব্যক্তির পারিবারিক ও সামাজিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত করে। এমন ডিসঅর্ডার হলে অবশ্যই মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৫১ পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল  বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ শামসুল আহসান।

প্রশ্ন : প্যানিক ডিস-অর্ডার বিষয়টি কী?

উত্তর : প্যানিক ডিসঅর্ডার হচ্ছে, এমন এক ধরনের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বোধের ভেতরে থাকা যেটি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার বাইরে। যখন কোনো স্বাভাবিক ঘটনায় বা কোনো কারণ ছাড়া একজন মানুষ অস্বাভাবিক রকমের উদ্বিগ্ন হয়ে যায় তখন তাকে প্যানিক ডিস-অর্ডার বলা যেতে পারে। তার মধ্যে হয়তো আতঙ্ক কাজ করছে, সে মারা যেতে পারে। গুরুতর কিছু একটা হয়ে যাচ্ছে, যেটি হয়তো তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এর জন্য যদি তার স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে ব্যহত হয় তাকে প্যানিক ডিসঅর্ডার বলি।

প্রশ্ন: স্বাভাবিকভাবে আমরা সবাই উদ্বিগ্ন হই। কিন্তু কখন এটা রোগ  বা এই সমস্যাটা কতদিন থাকলে এটিকে রোগ বলা হয়?

উত্তর : প্যানিক ডিসঅর্ডার হবে তখনই যখন প্যানিক অ্যাটাক হবে। এটা অনেকটা  এ রকম, হয়তো কোনো কারণ ছাড়া ব্যক্তি উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। নিদির্ষ্ট কোনো পরিস্থিতিতে পড়লে প্রচণ্ড আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এখনই মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে তার হয়তো হৃদপিণ্ড বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। প্রচণ্ড বুক ধরফর করছে। তার হাত পা ঠোকাঠুকি করে হয়তো পড়ে যাচ্ছে। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে যে যেখান থেকে হয়তো সে বের হয়ে আসতে পারবে না। এর সাথে গলার মধ্যে হয়তো এমন একটা অনুভূতি হলো, মনে হচ্ছে গলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তারপর হয়তো মাথা ঘুরাচ্ছে।

এ রকম ১১টার মতো বৈশিষ্টের মধ্যে যদি চারটি বা পাঁচটির মতো সমস্যা থাকে তাহলে আমরা এটিকে প্যানিক অ্যাটাক বলি।

প্রশ্ন : প্যানিক ডিসঅর্ডার বিষয়গুলোর সাথে হার্ট ডিজিজের একটি সামঞ্জস্য রয়েছে। কোনটি প্যানিক ডিসঅর্ডার এবং কোনটি হার্টের সমস্যা এ নিয়ে রোগীদের মধ্যে কী ভুল হয়?

উত্তর : সাধারণত যেটি হয়, এই রোগীগুলো যখন প্রথমবারের মতো আতঙ্কিত হয়ে যায় সে কার্ডিওলজিস্টের কাছে যায় বা সরাসরি হাসপাতালে চলে যায়। যদি কোনো সমস্যা হয় ওই রোগীর কার্ডিয়াক পরীক্ষা-নিরীক্ষা অবশ্যই জরুরি। ওই রোগীগুলো তখনই আমাদের কাছে আসে যখন তাদের একটা কার্ডিয়াক স্বাস্থ্যগত ধারণা হয়ে যায়। তখন চিকিৎসকরা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন।

প্রশ্ন : যখন আপনাদের কাছে রোগী যায়  তখন আপনাদের কী করে থাকেন?

উত্তর : প্রথমতো এই রোগীরা যখন আমাদের কাছে আসে তখন সাধারণত কার্ডিয়াক বিশেষজ্ঞরা বলেই দেন কার্ডিয়াক কোনো সমস্যা তার নেই। অনেক সময় রোগীর মধ্যে বিস্ময় কাজ করে। আমি যেই ধরনের সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি এটা কীভাবে একজন মনোরোগ বিশষজ্ঞ বুঝতে পারবেন। তারা হয়তো মানসিক রোগী হিসেবে নিজেদের ভাবতে চাচ্ছে না।

বিষয়টিকে এভাবে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া য়ায়, একজন ব্যক্তিকে যদি পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করতে চায়। তার মধ্যে যেই পরিমাণ আতঙ্ক কাজ করবে এই ভদ্রলোকের হয়তো এই পরিমাণ আতঙ্ক কাজ করছে কোনো কারণ ছাড়াই।

রোগীটি যখন আমাদের কাছে আসে তখন আমরা কারণ ব্যাখ্যা করি তখন তারা বুঝতে পারে তাদের মধ্যে সিরিয়াস একটা কিছু হচ্ছে এবং এটার যে মুখোমুখি হবে এ রকম পরিস্থিতি তাদের হয় না। আমরা তাদের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কমানোর জন্য তাদের কিছু ওষুধ দেই।

প্রশ্ন : আপনারা কী তাদের পরামর্শ দেন এই যে তিনি ভয় পাচ্ছেন এটি কী তাদের অকারণে ভয়? পেছনে কোনো ভিত্তি নেই- এই বিষয়গুলোও কী তাদের বোঝান?

উত্তর : অবশ্যই বোঝাই। আচরণগত  চিকিৎসা বা বিহেইভিয়ার থেরাপির মাধ্যমে আমরা তাদের চিকিৎসা করি। এই ধরনের পরামর্শ (কাউন্সিলিং) বা সাইকোথেরাপির মাধ্যমে রোগী তার আচরণগুলো পরিবর্তন করতে পারে এবং এটি প্যানিক ডিসঅর্ডারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকরী। প্রাথমিকভাবে যদি খুব বেশি অসুবিধা হয় আমরা তাদের অবস্থাটি পরিবর্তনে কিছু ওষুধ দেই। তারপর আচরণগত চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রশ্ন : কতখানি জটিল হতে পারে বিষয়টি যদি তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে না যায়?

উত্তর : প্যানিক অ্যাটাকের যে কথাগুলো বলছি সেটি পেনিক ডিসঅর্ডারেও হয় অন্যান্য রোগেও হয়। উদাহরণ হিসেবে বলছি, অনেক রোগী আমাদের কাছে আসে তারা হয়তো বদ্ধ জায়গায় থাকলে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যায়। ওই সময়টায় পেনিক অ্যাটাক হয়। এই সমস্যা অনেক জটিল হতে পারে। আবার সবার ক্ষেত্রে একই রকম জটিল নাও হতে পারে।

প্রশ্ন : পরামর্শ (কাউন্সিলং) কতটা কাজ করে? পুরোপুরি সুস্থভাবে কি ফিরে আসতে পারে এই জটিল অবস্থা থেকে?

উত্তর : প্যানিক ডিসঅর্ডার রোগীর সাময়িকভাবে ভালোই উন্নতি হয়। এরপর তাদের যদি কাউন্সিলিং করা হয় বা কগনিটিভ বিহেইভিয়ার থেরাপি দেওয়া হয় এর ফলে যথেষ্ট উন্নতি করা সম্ভব এবং প্রায়ই রোগীরা ভালো হয়ে যায়।

প্রশ্ন : পরিবারের অন্য লোকদের প্রতি আপনার কোনো আলাদা পরামর্শ থাকে কি না?

উত্তর : আপনি যদি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে যান বা অস্থির হয়ে যান তার পরোক্ষ প্রভাব আপনার পরিবারের লোকের মধ্যেও চলে আসবে। এ জন্য আমরা পরিবারের লোকজনকে বলি আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন না হয়ে সাহায্য করার চেষ্টা করতে। রোগীর আশপাশের লোকজন যদি তাকে সাহায্য করে তবে রোগ মুক্তির জন্য অনেক সহায়ক হতে পারে।

প্রশ্ন : উদ্বিগ্ন, উৎকণ্ঠা- এই জাতীয় সমস্যা যাদের হবে তারা কোন চিকিৎসকের কাছে যাবে এবং কী চিকিৎসা নেবে?

উত্তর :প্যানিক ডিসঅর্ডারের সমস্যায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাবে। সাধারণত বিভিন্ন চিকিৎসকের কাছে রের্ফাড হয়ে এসব রোগীরা মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে আসে। আর এর বাইরেও যদি রোগীর পরিবারের লোকজন বোঝে তারা রোগীকে নিয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাবে।