কিডনি প্রতিস্থাপন কাদের প্রয়োজন?

সাধারণত কিডনি অকেজো হয়ে গেলে কিডনি প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়। কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩০৬১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. হারুন অর রশিদ। বর্তমানে তিনি কিডনি ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটে কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কিডনি প্রতিস্থাপন বলতে আমরা কী বুঝি? কাদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন হয়?
উত্তর : সাধারণত কিডনি প্রতিস্থাপন বলতে বুঝি, কোনো এক ব্যক্তির কিডনি নিয়ে, আরেকজন কিডনি অকেজো রোগীর দেহে প্রতিস্থাপন করা। এখন দুটো কিডনি পিছনে যে থাকে, সেখানে কিন্তু প্রতিস্থাপন করা হয় না। প্রতিস্থাপন করা হয়, পেটের নিচের ডানে বা বায়ে।
কেন আমরা কিডনি প্রতিস্থাপন করব? যখন দুটো কিডনি পরিপূর্ণভাবে অকেজো হয়ে যায় এবং অন্য কোনো চিকিৎসার মাধ্যমে তার জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় না, সে ক্ষেত্রে যদি আমরা কিডনি সংযোজন করে দেই, তাহলে সে সম্পূর্ণ সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।
এখন দুভাবে কিডনি সংযোজন করা যায়। একটি হচ্ছে নিকট আত্মীয়, যেখানে আমরা বলি যে তার কিডনি দাতা হবে। তার বাবা- মা, ভাই-বোন, চাচা- মামা, ফুফু- খালা দিতে পারবে। ২০১৮ সালে যেই অরগান অ্যাক্ট ল’ পাস হলো, তাতে আরো এটি বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যে, চাচাতো ভাই, মামাতো ভাই, ফুফাতো ভাই, খালাতো ভাই, এমনকি নানা- নানি, দাদা- দাদি, দিতে পারবে। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হতে হবে। তাদের দুটো কিডনি পরিপূর্ণ সুস্থ থাকতে হবে। তাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে কোনো ধরনের রোগ বা মাল্টিপল সিস্ট- এ ধরনের কিছু থাকা চলবে না। এই কিডনি দাতার সব স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে যখন আমরা দেখি যে তার একটি কিডনি দান করলে সারা জীবন সে ভালোভাবে, সুস্থভাবে, সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারবে, তখন তার কিডনিটা নেওয়া হয়। এই জন্য সে ভলেন্টিয়ারিলি সেই কিডনিটা দান করতে পারে।
এ ছাড়া আমরা মৃত ব্যক্তির কিডনি নিয়ে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে পারি। ২০১৮ সালে এর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অনেক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ঠিক করে রাখা হয়েছে, যাদের চার বেডের অন্তত ইনটেনসিভ কেয়ার থাকবে। তাদের ব্রেন ডেথ কমিটি থাকতে হবে। তাদের ইনটেনসিভ কেয়ার বিশেষজ্ঞ থাকতে হবে।
ধরুন ঢাকা মেডিকেল কলেজে একটি বিশাল আইসিইউ রয়েছে। এখন একটি রোগী মারা গেল। এখন কোনো রোগী যদি রাস্তায় মরে যায়, কোনো রোগী যদি হাসপাতালের বেডে মারা যায়, সে কোনো অঙ্গ দান করতে পারবে না। তাকে কিন্তু মারা যেতে হবে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে যখন তার মস্তিষ্ক মৃত হবে, তার হার্ট চলা সত্ত্বেও মেডিকেল সাইন্স বলে সে মরে গেছে, যদি ডাক্তাররা ঘোষণা দেয়, সে মরে গেছে, এর আর জীবন ফিরে পাবে না। তখন ছয় ঘণ্টা পর আর একটি দল ওই রোগীটাকে পরীক্ষা করে দেখে। তারাও যদি বলে এর আর জীবন ফিরে পাওয়ার আশঙ্কা নেই। তখন রোগীর নিকট আত্মীয় যারা, তার বেডের সামনে থাকে, তাদের জিজ্ঞেস করা হয়, সে মরে গেছে, এখন রোগীকে বাসায় নিয়ে যেতে পারো। ভেন্টিলেটার আমরা খুলে দিচ্ছি। তাহলে এই রোগীটা তার দুটো কিডনি, একটি লিভার , একটি হার্ট এ রকম পাঁচটা ছয়টা অঙ্গ, অন্য অরগান ফেইলিইউর রোগীকে দিলে তারা আবার নতুন জীবন ফিরে পাবে। এখন তারা যদি মনে করে আমার রোগী তো মরেই গেছে এখন তার অঙ্গ দিয়ে যদি আরো ছয়টা মানুষ জীবন ফিরে পায়, তাহলে আমি এতে রাজি রয়েছি। তারা যখন রাজি থাকবে তখন অরগান টিম সেই অঙ্গ নিয়ে এসে, এগুলো পরিষ্কার করে, আইস ব্যাগে স্টেরাই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করবে। চার থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে সেই অরগান ফেইলিউর হাসপাতালগুলোতে পাঠিয়ে দেবে, যেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়।
প্রশ্ন : প্রতিস্থাপন কতক্ষণের মধ্যে করতে হবে?
উত্তর : কিডনির ক্ষেত্রে সাধারণত আপনি ছয় ঘণ্টা থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবেন। লিভারের ক্ষেত্রে একটু তাড়াতাড়ি করতে হয়। হার্টের ক্ষেত্রেও একটু তাড়াতাড়ি করতে হয়।
প্রশ্ন : কোনো কোনো উপায়ে এই প্রতিস্থাপন করছেন?
উত্তর : এখন যে পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন করছি, সেটি শুধু লাইভ রিলেটেড প্রতিস্থাপন। নিকট আত্মীয়রাই কেবল কিডনি দিতে পারবে। কিডনি অকার্যকর হওয়ার পর তাকে অপশন দেওয়া হয়। সে ডায়ালাইসিস করবে। ডায়ালাইসিস করার পরও প্রতিস্থাপন করতে পারে। অথবা ডায়ালাইসিস করার আগেও প্রতিস্থাপন করতে পারে। আমরা আইসিইউতে যোগাযোগ রাখছি।
বড় বড় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ, বারডেম হাসপাতাল এবং বেসরকারি যত হাসপাতাল রয়েছে,তাদের সঙ্গে আমরা করছি। তবে এটি বিশাল একটি দল। এই দলের গঠনে লেখা রয়েছে ভাইস চেন্সেলর হবেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের। উনি হবেন প্রধান, তার সঙ্গে প্রায় ১৮/১৯ জন চিকিৎসক থাকবেন। এখন এর প্রথম একটি মিটিং আমরা করেছি, আমরা দেখিয়েছি এখন আইসিইউতে যেসব রোগী ভর্তি হয়, রোগী যখন মারা যায়, তখন যখন তার আত্মীয়স্বজনকে পরামর্শ দেওয়া হয়, তখন আমরা দেখি তাদের ২৫ ভাগ কিডনি দিতে রাজি। সেই হিসেবে আমরা জানি, যদি আমরা প্রচেষ্টা করি, তাহলে ভালোভাবে হয়। যদি একটি একাগ্র দল থাকে, তাহলে বাংলাদেশে এই মৃত ব্যক্তির কিডনি নিয়ে সে উপকৃত হবে।
এটি সম্ভব হচ্ছে, এশিয়ান দেশে, ভারতে কিছু কিছু হচ্ছে, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং এগুলোতে হচ্ছে।