ইনহেলার কীভাবে ব্যবহার করবেন?

Looks like you've blocked notifications!

অ্যাজমা একটি প্রচলিত সমস্যা। তবে সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে রোগ নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ জীবন-যাপন করা সম্ভব। ২৭ আগস্ট এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৩৩তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইস্টটিটিউট ও হাসপাতালের রেসপেরিটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল কাইয়ুম।

urgentPhoto

প্রশ্ন:  আমরা জানি অ্যাজমা হলো শ্বাসকষ্ট। এটি প্রচণ্ড কষ্টদায়ক একটা রোগ। এ রোগটি একবার হলে আর ভালো হয় না। এটাকে সারা জীবন নিয়ন্ত্রণে রেখে যেতে হয়। অ্যাজমা রোগ কী এবং এটা হয় কেন?

উত্তর : এটা শ্বাসনালির দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহের কারণে হয়। আসলে ঠিকই এটা একেবারে নিরাময় হয় না। তবে এটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। নিয়ন্ত্রণে রেখে একজন অ্যাজমা রোগী তার সারাটা জীবন কাটিয়ে যেতে পারে।

প্রশ্ন : অ্যাজমার জন্য ঝুঁকিপ্রবণ দল কারা?

উত্তর : আসলে অ্যাজমার সঠিক কোনো কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। তবে কিছু বিষয়কে ধরে নেওয়া যায় এগুলো অ্যাজমার পেছনে কাজ করে। গোড়া থেকে যদি বলি মা তার সন্তানকে বুকের দুধ না খাওয়ানোর যে প্রবণতা এটা একটা কারণ। অর্থাৎ বলা যেতে পারে যে বাচ্চা বা যে শিশু তার মায়ের বুকের দুধ পায়নি, তার অ্যাজমার ঝুঁকি বেশি। এরপর যে মা গর্ভাবস্থায় ধূমপান করতেন ওই শিশুর জন্মের পর থেকে অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়া যেসব মানুষের অ্যালার্জির সংস্পর্শে থাকলে রক্তের মধ্যে আইজিইর পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, ধরে নেওয়া হয় এই দলের লোকের অ্যাজমা বেশি হয়। এটা প্রমাণিত। এ ছাড়া জেনেটিক কারণে অ্যাজমা হতে পারে। অ্যাজমার সঙ্গে বংশগত কারণ রয়েছে। যেমন এই অ্যাজমা রোগটা পরিবারের মধ্যে থাকে, মা-বাবা উভয়ের যদি অ্যাজমা থাকে থাকলে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজনের এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। আর উভয়ের একজন যদি অ্যাজমা রোগী হয়, তবে ছয়জনের একজনের অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

প্রশ্ন : অ্যাজমা হলে প্রধান কষ্ট হলো শ্বাসকষ্ট। তবে শ্বাসকষ্ট মানেই কি অ্যাজমা? শ্বাসকষ্ট হলেই কি আমরা অ্যাজমা হয়েছে ধরে নেব?

উত্তর : শ্বাসকষ্ট মানেই অ্যাজমা নয়। অ্যাজমাতে শ্বাসকষ্ট হয় এটা ঠিক, তবে এ ছাড়া অনেক কারণে অ্যাজমা হয়। যেমন : হৃদরোগের রোগীরও শ্বাসকষ্ট হয়। এরপর যাদের রক্তশূন্যতা আছে এদেরও শ্বাসকষ্ট হয়। তারপর যে সমস্ত রোগী কিডনি রোগে ভুগছে তাদেরও শ্বাসকষ্ট হয়।

প্রশ্ন : তাহলে এতসব যে শ্বাসকষ্ট হয়, এদের মধ্যে কোনটা যে অ্যাজমা সেটা বোঝার উপায় কী?

উত্তর : আসলে আমরা বেশি সমস্যায় পড়ি যেটা নিয়ে, সেটা হলো রোগটি কী অ্যাজমা না কি সিওপিডি। সিওপিডি হলো ক্রনিক অবসট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ। সাধারণত দেখা যায় যে অ্যাজমার যে লক্ষণগুলো যেমন কাশি, শ্বাসকষ্ট, বুকের ভেতর শাঁশা, শোঁ শোঁ শব্দ, বুকটা চেপে আসা – এই চারটা হচ্ছে অ্যাজমার প্রধান লক্ষণ। তবে এই লক্ষণগুলো দেখা যায় একজন অ্যাজমা রোগীর সারা বছর একরকম থাকে না। কখনো একদম সাধারণ মানুষের মতো থাকেন। তার যে অ্যাজমা আছে বোঝার কোনো উপায় নেই। আবার দেখা যায় বছরে হয়তো দুই মাস, তিন মাস এ সমস্যা হয় আবার চলে যায়। অর্থাৎ উপসর্গগুলো সারা বছর একরকম থাকে না। মাঝে মাঝে ভালো থাকে। তবে সিওপিডির রোগীর সারা বছর কাশি, শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকবে। উনি কখনোই সুস্থ থাকবেন না।

প্রশ্ন : চিকিৎসার জন্য যে ইনহেলার বা বিভিন্ন চিকিৎসা দেওয়া হয় যেটা অ্যাজমায় কমে যায়, সিওপিডিতে কি সেটা কমবে?

উত্তর : সিওপিডিতে কমে। তবে অ্যাজমা হচ্ছে এমন একটা রোগ যেটার চিকিৎসা না করলেও কমে। অর্থাৎ এটা পূর্বাবস্থায় চলে আসে। তবে সিওপিডি কখনোই আগের অবস্থায় আসবে না। কিছু না কিছু শ্বাসকষ্ট তার থেকেই যাবে। একেবারে শূন্যের কোঠায় কখনো আসবে না।

প্রশ্ন : অ্যাজমার সঙ্গে কি কোনো খাবারদাবারের সম্পর্ক আছে?

উত্তর : হ্যাঁ, খাবারের সম্পর্ক আছে।

প্রশ্ন : কী কী খাবারে এটা বাড়তে পারে?

উত্তর : এগুলোকে আমরা বলি ফুড অ্যালার্জি। এই ফুড অ্যালার্জিগুলো অ্যাজমা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। যেমন ধরেন গরুর মাংস, ইলিশ মাছ, চিংড়ি মাছ। কিছু সবজি আছে, যেমন : বেগুন, পুঁইশাক। এরপর কিছু খাবার রয়েছে যেগুলোতে এডিটিভ ব্যবহার করা হয়, যেমন : কোল্ড ড্রিংকস। ভিনেগার রয়েছে যেটা খাবারে দিয়ে সুস্বাদু করে খাই এতেও শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে।

প্রশ্ন : আপনি যেসব খাবারের কথা বললেন সব খাবারে কি সবারই অ্যাজমা হতে পারে?

উত্তর : এটা আসলে বিশেষ ব্যক্তির জন্য বিশেষ খাবারে অ্যাজমা হবে। যেমন একজনের গরুর মাংস খেলে তার অ্যাজমার তীব্রতা বা প্রবণতা বেড়ে যায়। আবার আরেকজনের ক্ষেত্রে হয়তো দেখা যায় গরুর মাংস খেলে কোনো সমস্যা হয় না। চিংড়ি মাছ খেলে হয়তো সমস্যা বেড়ে যায়। আবার আরেকজনের ক্ষেত্রে হয়তো দেখা যায় এ দুটো খেলে কিছুই হয় না, হয়তো বেগুন খেলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এর মানে একেকজন মানুষের একেকটা খাবারের প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে। এতে শ্বাসকষ্ট বাড়তে পারে।

প্রশ্ন : অ্যাজমা কি পরিপূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য?

উত্তর : আগেই বলেছি অ্যাজমা একেবারেই চলে যায় না। তবে অ্যাজমার এখন যে আধুনিক চিকিৎসাগুলো রয়েছে, সেগুলো যদি সঠিকভাবে গ্রহণ করা যায়, তাহলে একজন অ্যাজমা রোগী প্রায় সুস্থ হবেন এবং সর্বোচ্চভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে সুস্থ থাকবেন। সুস্থ থেকে তার সমস্ত জীবন অতিবাহিত করতে পারবেন।

প্রশ্ন : অ্যাজমা রোগীদের ক্ষেত্রে আপনারা খাওয়ার ওষুধের পাশাপাশি সাধারণত ইনহেলার দিয়ে থাকেন। ইনহেলার দিলে এটির ব্যবহার নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। ইনহেলার ব্যবহারের নিয়ম কী?

উত্তর : আমরা দেখি রোগীদের মধ্যে একটি ভুল ধারণ আছে। তারা মনে করে, অ্যাজমার চিকিৎসায় যে ইনহেলার ব্যবহার করা হয় এটা বোধ হয় শেষ চিকিৎসা। তারা ভাবেন, যখন অ্যাজমার আর কোনো ওষুধ কাজ করবে না, অর্থাৎ ট্যাবলেট, সিরাপ, ক্যাপসুল সব যখন ব্যর্থ তখন  হয়তো এই ইনহেলার নেওয়া হয়। আসলে কথাটা মোটেই সত্য নয়। ইনহেলার দিয়েই কিন্তু প্রথমে চিকিৎসা করতে হবে। ইনহেলার কেন দেওয়া হয়? ইনহেলার অনেক ধরনের আছে। একটা হলো উপশমকারী, দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে তার শ্বাসকষ্ট থাকে না, কমে যায়। আরেকটি রয়েছে প্রতিরোধক  অর্থাৎ শ্বাসনালির মধ্যে যে প্রদাহ রয়েছে সেটাকে সে নিয়ন্ত্রণ করে, কমিয়ে রাখে। ইনহেলারের ব্যবহার বিধি খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে ইনহেলারের সঠিক ব্যবহার বিধি না জানার কারণে ওষুধের সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। সুতরাং ইনহেলার গ্রহণ করার পদ্ধতি সঠিক হতে হবে।

প্রশ্ন : সেটা কী?

উত্তর : সেটা হচ্ছে, ইনহেলার ব্যবহারের আগে প্যাকেট থেকে বের করবে। এরপর ক্যাপটা খুলবে। ইনহেলার দুই আঙুলের মাঝখানে নেবে। এরপর ভালো করে ঝাঁকি দিতে হবে। এরপর শ্বাস ফেলে বুকটা খালি করবে। এরপর মাউথপিসটা মুখে নিয়ে ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরে সে পুসটাতে একটা চাপ দেবে। যখন অ্যারোসলটা মুখের ভেতরে গেল অমনি সে ধীরে ধীরে শ্বাস নিয়ে ভেতরে নেবে। এরপর ইনহেলার মুখ থেকে বের করে ১০ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ রাখবে। অথবা যতক্ষণ পারে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, শ্বাস নেওয়ার পর কিছুক্ষণ দম বন্ধ রাখতে হবে। তবে একটা বিষয় হচ্ছে গিলবেন না। গিলে ফেললে ফুসফুসে না গিয়ে খাদ্যনালিতে চলে যাবে। তাহলে আমরা এ ওষুধের কোনো ফলাফল পাব না। এরপর ১০ সেকেন্ড রাখার পর ধীরে ধীরে শ্বাস ফেলে দেবেন। এরপর এক মিনিট পর পরের চাপটা নেবেন, অর্থাৎ দ্বিতীয়বার নেবেন।