বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে করণীয়
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা আমাদের দেশে প্রায়ই ঘটে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার কারণে বিদ্যুৎ প্রবাহ শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে স্নায়ুতন্ত্র ও শ্বসনতন্ত্রে আঘাত করে প্রচণ্ডভাবে। এতে কিছুক্ষণের মধ্যে রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে। শরীরের টিস্যুগুলোর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে গভীর দাহ সৃষ্টি হয়।
যিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হচ্ছেন, তাঁর গায়ে যদি ভেজা কাপড় থাকে কিংবা তাঁর শরীর ভেজা থাকে, তাহলে বিদ্যুতের আঘাত তীব্রতর হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির হৃদযন্ত্র, শ্বাসতন্ত্র ও মস্তিষ্কের প্রাথমিক অসারতার কারণে মৃত্যু ঘটে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট থাকাকালে ওই ব্যক্তিকে অন্য কেউ স্পর্শ করলে তাঁরও একই পরিণতি হবে।
সুতরাং কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পড়লে কী করণীয়?
- বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তি যদি তখনো বিদ্যুতের আওতাধীন থাকে, অর্থাৎ তাঁর শরীরে কিংবা হাতে-পায়ে বিদ্যুতের তার জড়ানো থাকে, তাহলে প্রথমেই মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে কিংবা সকেট থেকে প্লাগ সরিয়ে ফেলতে হবে।
- মেইন সুইচ বন্ধ করা বা সকেট থেকে প্লাগ সরানো সম্ভব না হলে বিদ্যুৎ অপরিবাহী কিছু দিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তির শরীর থেকে বিদ্যুতের তারটি সরিয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে লম্বা, একেবারে শুকনো বাঁশ বা লাঠি, একটি শুকনো দড়ি কিংবা লম্বা শুকনো কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে।
- যিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করছেন, খেয়াল রাখতে হবে তাঁর হাত দুটো যেন শুকনো থাকে এবং তাঁকে শুকনো কিছুর ওপর দাঁড়িয়ে কাজটি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে পায়ে স্পঞ্জের স্যান্ডেল থাকতে হবে।
- বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ব্যক্তিকে বিদ্যুৎ প্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে সঙ্গেই যদি দরকার হয় কৃত্রিম শ্বসন প্রক্রিয়া চালু করতে হবে এবং বাইরে থেকে বুকে চাপ দিয়ে (হৃদমর্দন) তাঁকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করতে হবে।
- প্রয়োজনে রোগীকে উপুড় করে রোগীর এক হাত লম্বা করে এবং অন্য হাতটি ভাঁজ করে মাথার নিচে রেখে রোগীর পিঠে চাপ দেওয়া যেতে পারে।
- এরপর দ্রুত রোগীকে কাছের হাসপাতালে বা চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলে শরীরে জলীয় উপাদানের, বিশেষ করে ইলেকট্রোলাইটসের প্রচুর ঘাটতি হয়। রোগী যাতে প্রচুর জলীয় উপাদান পায়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ।