রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের যত্নে করণীয়

Looks like you've blocked notifications!

ডায়াবেটিস রোগীদের রোজা রাখার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা জরুরি। রোজায় ডায়াবেটিস রোগীদের যত্নের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১০২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমানে তিনি স্কয়ার হসপিটালের মেডিসিন এবং ডায়াবেটিস বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীদের রোজার সময় ওষুধ গ্রহণের বিষয়ে কী ধরনের পরিবর্তন আনা দরকার?

উত্তর : দেখুন, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীরা রোজা রাখতে পারবেন। আমাদের ইসলামিক স্তম্ভ যেগুলো রয়েছে, এর মধ্যে রোজাটা গুরুত্বপূর্ণ। এটা বয়স ভেদে সবাই রাখতে চান, তবে রোজা ফরজ করা হয়েছে প্রাপ্ত বয়স্ক শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ মানুষের ওপর। এটা অবশ্যই করতে হবে। তবে হ্যাঁ, আল্লাহ এ কথা বলেননি কোথাও যে তোমাকে জীবনঝুঁকি রেখে রোজা রাখতে হবে। তবে এই রোজা রাখার জন্য সবারই আগ্রহ থাকে, ডায়াবেটিক ও নন ডায়াবেটিক সব রোগীদেরই। সুতরাং আমাদের কাজ হলো ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকিগুলো আগেই বলে দেওয়া যে আপনি রোজা রাখতে পারবেন কি না। রোজা যারা রাখতে পারবেন না, তাদের জন্য বিধান রয়ে গেছে, রোজার বদলে আপনি বদল দিতে পারবেন। আর আগেই বলেছি যে মৃত্যুর যদি আশঙ্কা থাকে, তাহলে আপনি রোজা না রেখে এর বদলে বদল দিতে পারেন। এটা টাকা হিসেবে অথবা মিসকিন খাইয়ে করতে পারেন। এই জন্য আমি চাই, রোজার আগে থেকে ডায়াবেটিসটা যেন সুনিয়ন্ত্রিত করে নিয়ে আসতে পারে। একদল লোক রয়েছে, যারা প্রচুর পরিমাণে ওষুধ নিচ্ছে, ইনসুলিন নিচ্ছে, তাদের এক ধরনের সমন্বয় করতে হয়। যেহেতু এখন রোজা হচ্ছে অন্তত ১৪ থেকে ১৫ ঘণ্টার মতো, যদিও এখন আবহাওয়াটা ভালো, তবে আমাদের রোজা হচ্ছে গ্রীষ্মে। সুতরাং এই রোজার মধ্যে অনেক ঝুঁকি থেকে যায়। হয় আপনার সুগার কমে যাবে, অথবা সুগার বেড়ে যাবে। অথবা আপনি কোমায় চলে যেতে পারেন। প্রি রমাদান অ্যাসেসমেন্ট অথবা রোজার আগে ধারণা করে আমরা বলতে পারি যে রোজা আপনার জন্য কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ। আপনি কোন দলের মধ্যে পড়ছেন। এটা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, মধ্যম ঝুঁকিপূর্ণ, না কি কম ঝুঁকিপূর্ণ। যদি আপনার একটি জটিল হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থাকে, যদি ডায়াবেটিস কমার ইতিহাস থাকে, এরকম যদি থাকে আপনি বার বার ওষুধ নিচ্ছেন, আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়ে থাকে, এর জন্য রোজা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। যদি এখন থেকে কারো ব্লাডসুগার বেশি মাত্রায় কমে যায়, তাতে করে সে যদি ক্ষতিকর অবস্থায় চলে যায়, সে খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দল। তাকে বলা যেতে পারে যে তোমার রোজা, তোমার শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তোমার বিপদ ডেকে আনতে পারে। আবার যদি ডায়াবেটিস কিটোএসিটোসিস হয়, এটাও আরেকটি জটিলতা। এটা বেশির জন্য হয়। আর একদল লোক রয়েছে হাইপারওসমোলারকোমা। এটাও যদি হয়, আমরা বলি যে আপনার রোজা রাখা ঠিক হবে না। রোজার বদৌলতে অথবা যে ইসলামিক নিয়ম রয়েছে, সেটি পালন করতে পারেন। আরেকটি হলো আপনি ওষুধ নিচ্ছেন, বার বার আপনার, প্রত্যেকদিন একবার দুবার করে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে, আরেকটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া হওয়া মানে হলো শরীরের ওপর বিরাট প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। তাদের রাখা উচিত নয়। আরেকদল হলো অসচেতন। অর্থাৎ আপনার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে, তবে আপনি বুঝতে পারছেন না। যাদের রিপিটেট হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়, তাদের ওই পদ্ধতিটা নষ্ট হয়ে যায়। তাদের কিন্তু রোজা রাখা উচিত নয়।

আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী, আপনার হার্ট অ্যাটাক হলো, মস্তিষ্কের স্ট্রোক হলো, অথবা নিউমোনিয়া হলো, অথবা শরীরের বড় একটি সংক্রমণ হলো, একে আমরা একিউট ইলনেস বলি। এই সময় যদি আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী হোন রোজাটা না রাখাই ভালো।

আরেকটি বলি যে টাইপ ওয়ান ডায়াবেটিস যাদের রয়েছে, যাদের নিয়ন্ত্রণ নেই, তাদের জন্যও সমস্যা। গর্ভবতী নারী, যাদের ডায়াবেটিস আগে ছিল গর্ভ ধারণ করেছেন, তাদের জন্য রোজা খুব উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। সমস্যা হলো আপনি পানিশূন্য হয়ে যাবেন, না হয় হাইপোগ্লাইসেমিয়া হবে, না হয় অতিরিক্ত সুগার হয়ে, ডায়াবেটিস কোমা বা হাইপার ওসমোলার কোমায় চলে যাবেন, ইনফেকশনের আশঙ্কা তাদের খুব বেশি থাকবে।

প্রশ্ন : ডায়াবেটিস রোগীরা হয়তো রোজা রাখছেন। কী ধরনের খারাপ লাগা অনুভূত হলে রোজা ভাঙা উচিত হবে?

উত্তর : দেখুন, যেসব ডায়াবেটিস রোগীরা রোজা রাখতে চান, যাদের নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থাকে, তাদের রোজা রাখাটা কোনো সমস্যা নয়। যেসব ওষুধগুলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া করে রাখে, অথবা ইনসুলিনই নিচ্ছেন, একে বলে ম্যাসেল স্ট্যাটাস। তবে যদি কখনো আপনি হাইপোগ্লাইসেমিয়াতে চলে যান, মাথা ঝিমঝিম করা, ক্ষুধা লাগলে যে অনুভূতি হয়, এ রকম হলে সুগার দেখেন, এটি যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়া রেঞ্জের কাছাকাছি চলে যায়, তাহলে রোজা ভেঙ্গে ফেলুন। এই জন্য আমরা বলি, যাঁরা রোজা রাখেন তাঁরা তিনবার রক্ত পরীক্ষা করবেন।

প্রশ্ন : কখন কখন?

উত্তর : সকাল ১০টায়। আপনি সেহরি খাবেন সবসময় সেহরির শেষ সময়ে। সেহরি হবে দুপুরের খাবারের মতো। সেহরিতে হবে এমন খাবার যে খাবার আপনার পেটে থাকবে, হজম হতে সময় লাগবে। সে দিকে আপনার খেয়াল রাখতে হবে। আমরা সাধারণত বলি, রোজার শুরুর দিকে সকাল ১০টার দিকে ব্লাড সুগার চেক করেন, যোহরের নামাজের সময় একটা বা দেড়টার সময় সুগার মেপে দেখেন, ইফতারের আগে প্রায় পাঁচটার সময়। এইরকম যদি থাকে তাহলে আপনার হাইপো হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

প্রশ্ন : পরীক্ষা করতে গিয়ে যে রক্ত বের হচ্ছে। এতে রোজা ভাঙ্গে?

উত্তর : অনেকের সংশয় রয়েছে যে এতে রোজা ভাঙ্গে। এখানে যত বড় মুফতিরা আছেন, ওনাদের পরামর্শ, এতে রোজা ভাঙ্গে না।

প্রশ্ন : রোজা রেখে ইনসুলিন নিলে কি রোজা ভেঙ্গে যায়?

উত্তর : রোজা রেখে ইনসুলিন নিলে রোজা ভেঙ্গে যায়। কিন্তু রোজা ফ্রেন্ডলি কিছু ইনসুলিন রয়েছে। যেগুলো নিয়ে আপনি খেয়ে ফেলতে পারেন। এতে রোজা ভাঙ্গে না। তাহলে কী হলো? রোজার আগে সুইচ করতে বলি এ ধরনের ইনসুলিনগুলোতে। যাদের ডায়াবেটিস সুনিয়ন্ত্রিত রয়েছে, ইনসুলিন যারা দিনে দুইবার নিচ্ছেন, তাদের ইফতারিতে ফুল ডোজ, আর সেহরিতে আমরা বলি ৫০ ভাগ বিকেলের ডোজ নিতে।

ট্যাবলেট যারা খাচ্ছেন, বিশেষ করে যেসব ট্যাবলেটগুলো সেকেন্ড জেনারেশন সাফোনাইল ইউরিয়া, তাঁদের যদি দিনে একবার হয়, তাহলে তাঁদের আমরা বলি ইফতারির সময় নিবেন। আর দিনে দুবার যদি হয়, আমরা বলি ইফতারের সময় সকালের ডোজটা নিবেন, সেহরিতে ৫০ ভাগ নিবেন। আর কিছু কিছু ওষুধ রয়েছে, যেগুলো হাইপোগ্লাইসেমিয়া খুব একটা করে না। সুতরাং এগুলো নিশ্চিন্তে দেওয়া যায়।

রোজার আগেই চিকিৎসককের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে নেওয়া উচিত।