ব্যথা নিরাময়ে করণীয়
ব্যথা প্রচলিত সমস্যা। বিভিন্ন অসুখ-বিসুখে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা নিরাময়ে করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১০৫তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী।
বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া অ্যান্ড আইসিইউ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বেশিরভাগ মানুষ কী ধরনের ব্যথা নিয়ে আসে? সে ক্ষেত্রে আপনারা কী করে থাকেন?
উত্তর : মানুষের মূল কষ্ট হলো ব্যথা। যে ধরনের অসুখ তার থাক না কেন, তার প্রধান কষ্টকর বিষয়টা হলো ব্যথা। ব্যথা বিভিন্নভাবে আসতে পারে। এটা মাথাব্যথা হতে পারে, চোখে ব্যথা হতে পারে, ঘাড়ে ব্যথা হতে পারে, কোমরের ব্যথা, পায়ের ব্যথা হতে পারে। সাধারণত আমরা যারা অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ও ইন্টারভেনশনাল পেইন স্পেশালিস্ট, আমরা সাধারণত ইন্টারভেনশাল ( ইনজেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা ) দিকটা দেখি। যদিও ব্যথা একটি মাল্টিডিসিপ্লিনারি অরিজিন, মানে সবাই এর চিকিৎসা করে, সবার কাছে এই রোগীগুলো যায়, ইন্টারভেনশনের যখন প্রয়োজন হয়, তখন আমরা চিকিৎসাটা করি। যেমন কোমরের ব্যথাটা দেখা যায়। মেরুদণ্ড যে রয়েছে, মেরুদণ্ডের হাড়ের মাঝখানে নরম যে জিনিসটা ভার্টিব্রার মাঝখানে, একে ডিস্ক বলে। ডিস্কটা যেমন নার্ভের ওপর চাপ তৈরি করে, তখন সাধারণত ব্যথাটা অনুভূত হয়। যদি এটা ঘাড়ে হয়, হাতের দিকে যায়, যদি কোমরে হয়, পায়ের দিকে যায়, এই জাতীয় ব্যথা হলে কিছু ইন্টারভেনশনের প্রয়োজন হয়। আপনি জানেন, ব্যথা নিরাময়ের জন্য কিছু কনজারভেটিভ বিষয় রয়েছে। যেমন ওষুধপত্র দেওয়া যেতে পারে। কম ব্যথায় ওষুধ দিতে পারি। ট্রিগার পয়েন্ট ইনজেকশন দিতে পারি। নার্ভ রুটে ইনজেকশন দিতে পারি। এ ছাড়া অনেকগুলো প্রক্রিয়া রয়েছে। ডিস্ক রিলেটেড করে থাকি। মিউক্লিওপ্লাস্টি করি। রেডিওফ্রিকুয়েন্সি এবলেশন করি। লেজার করা যায়। এরপর আমরা অনেক সময় ওজন থেরাপি দিয়ে থাকি। এই সবভাবে ইন্টারভেনশনাল করা হয়। মেজর ইন্টারভেনশনাল দিক যেগুলো সেগুলোও আজকাল করা হচ্ছে। সেখানে রয়েছে স্পাইনাল কড স্টিমুলেশন, থেকাল ইনফিউশন পাম্প ব্যবহার করা হয়। এরপর আমরা অনেক সময় টিবিওপ্লাস্টি করি। অনেক সময় সার্জারি করি। তো এই ধরনের বিষয়গুলো মাল্টিপল যন্ত্রের মাধ্যমে আমরা ব্যবস্থাপনা করি।
প্রশ্ন : আপনি যেহেতু অ্যানেসথেসিওলজিস্ট, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ব্যথা নিরাময়ে আপনারা কী করে থাকেন?
উত্তর : এটি একটি স্পর্শকাতর আবেগীয় বিষয়। মানুষের ভীতিটাও একটা ব্যথা। একজন অ্যানেসথেসিওলজিস্ট হিসেবে আমরা প্রথমে তার ভীতি দূর করি। এখানে কিছু প্রি মেডিকেশন রয়েছে, কাউন্সেলিং রয়েছে। সার্জারির সময় সেই ব্যথাটা নিরাময়ের জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিতে হবে। সার্জারির পরে ব্যথা ব্যবস্থাপনার জন্য ওষুধ, প্যাচ বিভিন্ন রকম জিনিস পত্র দিয়ে আমরা ব্যবস্থাপনা করি।
প্রশ্ন : ব্যথা ব্যবস্থাপনার আরেকটি দিক হলো ক্যানসার, বিশেষ করে পেলিয়াটিভ ক্ষেত্রে। যখন তারা আর পরিপূর্ণভাবে নিরাময়যোগ্য নয়, সে অবস্থায় যত দিন তিনি বেঁচে থাকেন, সে অবস্থায় ব্যথামুক্তভাবে তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায় কি না, সেই চেষ্টাটিও আপনারা করে থাকেন। সে ক্ষেত্রে কীভাবে এই ব্যথা দূর করেন?
উত্তর : এখানে আমরা মুখে খাওয়ার ওষুধের চেয়ে ইন্টারভেনশনালটা বেশি বেছে নিই। অনেক সময় যদি শরীরের নিচের অংশে ব্যথা হয় অথবা পিঠের নিচের অংশেও যদি ব্যথা থাকে, এই সব সময় আমরা ইপিডুরাল ক্যাথেডার সাধারণত স্পাইনাল কর্ডের ওপরের যে কভারিংয়ের ভেতর ঢুকিয়ে দিই। ওখানে আমরা রোগীর অবস্থার ওপর ব্যবস্থাপনা করে থাকি। এই ক্যাথেডার রেখে দুই মাস বা এক মাস পর পর পরিবর্তন করে দেওয়া যায়, দিয়ে তার চাহিদামতো ওষুধপত্র দিলে সে ভালো থাকে। এ ছাড়া তার যে নার্ভগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত বা যে নার্ভগুলোতে ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলোকে আমরা প্যারালাইসিস করে দিই। প্যারালাইসিস করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যথাটা চলে যায়। তবে এই নার্ভ যে ভালো কাজ করত, সেগুলোরও তখন ব্যাঘাত হয়। তো তার যদি মনে হয়, ব্যথার তুলনায় এটি কম যন্ত্রণাদায়ক, তাহলে আমরা সে কাজটিও করি। একে আমরা নিউরোলাইসিস বলি। এতে দেখা যায় যে অনেক সময় ব্যথামুক্ত থাকে। আর ক্যানসারের ব্যথার সবচেয়ে বড় যে বিষয়টি এটি হলো টার্মিনাল পর্যায়। এখানে পেলিয়েশনটা প্রধান। আমরা সাধারণত সান্ত্বনামূলক ব্যবস্থাপনাগুলো দিই, সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে ইন্টারভেনশনাল ব্যথা ব্যবস্থাপনার পরামর্শ দিই। এর মাধ্যমে ব্যথামুক্ত জীবনযাপনে সাহায্য করে।
প্রশ্ন : ব্যথার আরেকটি বড় জায়গা লেবার পেইন। বলা হয়ে থাকে এটি ব্যথার মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যথা। সেটা যেন খুব কষ্টদায়ক না হয়, একটি স্বাভাবিক প্রসব যদি সিজারিয়ান সেকশন করতে না হয়, স্বাভাবিক প্রসবও যেন ব্যথামুক্তভাবে, ভালোভাবে হতে পারে এই ক্ষেত্রে আপনারা কী করেন?
উত্তর : আসলে তীব্রতা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আসলে অনেক সময় বলা হয়েছে লেবার পেইন এত যন্ত্রণাদায়ক, যদি কারো দা দিয়ে হাত কেটে ফেলা হয়, সেই ক্ষেত্রে যে অনুভূতি, প্রসবের ব্যথার প্রতিটি পর্যায়ে সেরকম ব্যথার অনুভূতি। তবে আশার বিষয় হলো এখানে একটি ভালো দিক থাকে। কারণ, যখন একটি মা লেবার পেইনে যায়, তার একটি আশা থাকে যে সন্তান হবে। কাজেই সে মেনে নেয়। তবে অসুস্থতা হলে ভিন্ন চিত্র। তাই প্রসবের ব্যথা কষ্টদায়ক হলেও লোকে মেনে নিচ্ছে। এখন অন্যান্য দেশে লেবার এনালজেসিয়া বলে একটি বিষয় রয়েছে।
ব্যথা যখন শুরু হয়ে যায় তখন দুটো পর্যায় থাকে। একটি ল্যাটেন ফেইস, আরেকটি একটিভ ফেইস। ল্যাটেন ফেসে আমরা মেরুদণ্ডে আমরা ইপিডুরাল স্টেজে একটি ক্যাথেডার দিয়ে আসি। তখন সে নড়াচড়া করতে থাকে। ল্যাটেন ফেসে অল্প অল্প ব্যথা হয়। তখন তার ইন্টারভেনশন দরকার নেই। যখন একটিভ ফেসে যায়, তীব্র ব্যথা হয়ে যায়, ওর মাধ্যমে লোকাল অ্যানেসথেসিয়া দিই। ওখানেও রোগী নড়াচড়া করতে পারে। তবে কোনো ব্যথা থাকে না। এরপর একটি ভালো মুহূর্ত আসে যে ব্যথা ছাড়া তার শিশু প্রসব হয়ে যায়। এখানে সিজারিয়ান সেকশন লাগে না, স্বাভাবিক ভেজাইনাল প্রসব যাকে বলি, এটা অনেক দেশে ব্যবস্থাপনা হচ্ছে। তবে আমাদের দেশে এটা এখনও ব্যবস্থাপনা হয়নি। তবে কেউ কেউ এটি চিন্তা করছে, আমাদের কিছু প্রতিষ্ঠান এটি করার। তবে আশাব্যঞ্জক তেমন কিছু বলার নেই এখানে।