আবহাওয়া পরিবর্তনে নাক-কান-গলার সাধারণ সমস্যা

Looks like you've blocked notifications!

কখনো গরম, আবার কখনো স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া। আবহাওয়ার এই তারতম্যের সময় নাক, কান, গলার বিভিন্ন সমস্যা হয়।

এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১২২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফুয়াদ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন। বর্তমানে তিনি হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইএনটি ও হেড-নেক সার্জারি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : আবহাওয়ার একটি তারতম্য হচ্ছে, ঠান্ডা থেকে প্রচণ্ড গরমে আসা, বৃষ্টি, স্যাঁতসেঁতে একটি পরিস্থিতি। এ সময় নাক, কান, গলার বিভিন্ন সমস্যা হয়। এগুলো কী?

উত্তর : আসলে নাক, কান, গলার অসুখগুলোর মধ্যে পরিবেশগত ও আবহাওয়ার তারতম্যের একটি প্রভাব রয়েছে। আমরা প্রত্যক্ষভাবে এটি দেখতে পারি। যদি আমাদের দেশকে আমরা ষড়ঋতুর দেশ বলি, সব ঋতু হয়তো এখন খুব প্রকটভাবে নেই, তারপরও শীত থেকে গ্রীষ্ম, গ্রীষ্ম থেকে বর্ষা, এই যে একটি অতিক্রম করা, এক ঋতু থেকে আরেক ঋতুতে, এতে নাক, কান, গলার রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব বাড়ে।

যেমন : শীতকাল থেকে যখন গ্রীষ্ম এলো, গরমের মধ্যে ঠান্ডা পানি পানের প্রবণতা, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার মধ্যেই বাড়ে। এখন টনসিলের প্রদাহ যাদের খুব ঘন ঘন হয়, তারা কিন্তু বাইরে থেকে এসে আর অপেক্ষা করতে চায় না। তারা হয়তো খুব ঠান্ডা জুস, ঠান্ডা শরবত বা ঠান্ডা পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে। এতে কী হয়? এই যে তার তারতম্য হলো, এতে হঠাৎ করে তার প্রচণ্ড গলা ব্যথা হয়। আমাদের কাছে যখন আসে, তখন দেখা যায় ঢোক গিলতে পারছে না, স্বাভাবিক যে খাবার সেটিও খেতে পারছে না। আমরা হয়তো দেখলাম, তার টনসিলগুলো প্রদাহজনিত কারণে ফুলে গেছে। বাচ্চার হয়তো দেখা যায়, তার স্কুল কামাই হচ্ছে।

কিছু জীবনাচরণের পরিবর্তনের মাধ্যমে আপনি ভালো থাকতে পারেন। আপনি বাইরে থেকে এসে পানি পান করুন, শরবত পান করুন, তবে একটু রয়েসয়ে। আপনি বাইরে থেকে এসে ভেজা কাপড়টা সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে ফেলুন। অনেকের চুল বড় থাকে। দেখা যায়, গোসলের পর হয়তো চুল শুকায় না। ওই ভেজা চুলেই সে ঘুরতে থাকে। এগুলো কষ্টগুলো বাড়িয়ে দেয়। এরপর হয়তো দেখা যায় ফ্যান ছাড়ল বা এসি ছাড়ল, ঘরটা হয়তো ভোররাতের দিকে এত ঠান্ডা হয়ে গেছে যে সেটাও কিন্তু তার কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যেটা হয়, এই সময়টাতে খুব রিকারেন্ট আপার রেসপেরেটোরি ইনফেকশন হচ্ছে। এটা ব্যাকটেরিয়া দিয়েও হচ্ছে, ভাইরাস দিয়েও হচ্ছে। একটা জিনিস আমরা প্রচণ্ড পাই, বিশেষ করে বাচ্চাদের মধ্যে, সেটি হলো হঠাৎ করে তীব্র কান ব্যথা। এটা হলো মধ্যকর্ণের প্রদাহ। এটি হলো একিউট সাপোরেটিভ টোটাইটিস মিডিয়া।

যখন ঠান্ডা লাগল, ঠান্ডা লাগার পরে আমাদের এই যে ইনস্টেটিশিয়ান টিউব রয়েছে, সেই টিউটা ব্লক হয়ে সেখান থেকে দেখা যায় সর্দি ঢুকে যায়। সর্দি ঢুকে গিয়ে মধ্যকর্ণে প্রদাহ করে। এটা একটি তীব্র ব্যথার জন্ম দেয়। একটি সময় দেখা যায়, যখন কানে পর্দা ফুটো হয়ে পানি বের হয়ে আসে, তখন হয়তো ব্যথা একটু কমে, তবে এরপর তার কানটা বন্ধ বন্ধ লাগে। কানটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল। তবে এটি থেকে তিনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ না নেন, ঠিকমতো, সঠিক মাত্রায় ওষুধ না খান, কারণটা না খুঁজেন যে কেন তার হচ্ছে, এটা তার পরে কানের একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগে পরিণত হবে। একে আমরা ক্রনিক সাপোরেটিভ ওটাইটিস মিডিয়া বলি। আরেকটি জিনিস আমরা পাই। আপনি বলছিলেন যে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া, এতে সাইনোসাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা খুব বেড়ে যায়। সাইনোসাইটিস প্রচণ্ড ব্যথাদায়ক। দেখা যায় তীব্র মাথা ব্যথা, চোখ ব্যথা, কপালে ব্যথা। মনে হবে যেন মাথার ভেতরে পানি জমে আছে।

প্রশ্ন : কাদের এটি বেশি হয়?

উত্তর : একটি হলো যে যাদের নাকের হাড় বাঁকা থাকে। যাদের নাকের হাড় বাঁকা থাকে তাদের মধ্যে দেখা যায়, নাকের ভেতর যে শ্লেষ্মা, স্বাভাবিক যে নালিটা থাকে, সেটি বাধাগ্রস্ত হয়। নাক তো আসলে এসির মতো কাজ করে। কারো যদি নাকের হাড় বাঁকা থাকে, তখন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে যায় তার জায়গা। যত বিরুদ্ধ পরিবেশ হবে, যত আবহাওয়ার তারতম্য হবে, তাকে তত মানিয়ে চলতে হবে। এদের মধ্যে সাইনোসাইটিসের প্রবণতা বেশি। বাচ্চাদের মধ্যে যদি এডিনয়েড বড় থাকে, বাচ্চাদের মধ্যে সাইনোসাইটিসের সমস্যা বেশি হয় না।

প্রশ্ন : সাইনোসাইটিসের সমস্যা কোন বয়স থেকে বেশি হয়?

উত্তর : আমরা মধ্য বয়সে এটি বেশি পাই। আরেকটি হলো মাইগ্রেন। প্রচণ্ড সূর্যালোকে এই ব্যথা বেশি হয়। বিশেষ করে তরুণ মেয়েদের বেশি হয়। বাইরে গেলে প্রচণ্ড রোদ যখন চোখে এসে লাগে। দেখা যায়, গরমে এই ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতর হয়। এটা এমনই একটি কষ্টকর অনুভূতি, দেখা যায়, তার যে স্বাভাবিক কাজকর্ম, সেগুলো ব্যাহত হয়।

প্রশ্ন : সাইনাস ও মাইগ্রেনের ব্যথাকে কীভাবে আলাদা করা যায়?

উত্তর : মাইগ্রেনকে গ্রামদেশে বলা হয় আধকপালি রোগ। মাইগ্রেনে সাধারণত একটি পাশে ব্যথা হয়। এই মাথা ব্যথার আগে রোগী কিন্তু বুঝতে পারে, তার মাথা ব্যথাটা শুরু হচ্ছে বা হবে। আরো একটি বিষয় রয়েছে। কতগুলো জিনিস রয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। যেমন : তার পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া, খেতে দেরি করা, খাওয়ায় অনিয়ম হওয়া। প্রখর রোদে থাকা। অথবা চুলার পাশে দীর্ঘক্ষণ কাজ করা। কোনো ফ্লিকারিং আলোতে অনেকক্ষণ কাজ করা। দেখা যায়, স্বল্পালোকে কেউ মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকিং করে যাচ্ছে। এই কারণে যে মাথা ব্যথাটা বাড়ে, সেটি কিন্তু সাধারণত মাইগ্রেন হয়ে থাকে। আরেকটি বিষয় হলো এটি সাধারণত তরুণ মেয়েদের বেশি হয়। যত বয়স বাড়ে, তত এটার প্রচণ্ডতাটা কমে আসে। ছেলেদেরও হতে পারে। তবে মেয়েদের মূলত বেশি হয়।

আমরা একটি এক্স-রে করি। এক্স-রে করে যদি দেখি, তার সাইনাস পরিষ্কার, নাকের হাড় এত বাঁকা নয়, আমরা তখন নিশ্চিত হয়ে বলি। মাইগ্রেনের কিন্তু খুব ভালো চিকিৎসা রয়েছে। অনেকে মনে করে, ব্যথা উঠলে ওষুধ খেলে কমে আবার বাড়ে। এখানে দুই রকমের ওষুধ আমরা দিয়ে থাকি। একটি দীর্ঘমেয়াদি মাইগ্রেনের অ্যাটাক কমায়। আরেকটি স্বল্প মেয়াদে দ্রুত উপকার দেয়। এই দুটো ওষুধ যারা বুঝে খেতে পারে, তাৎক্ষণিক আমি কোন ওষুধটা খাব, আর দীর্ঘমেয়াদি আমি কোন ওষুধটা খাব। তারা কিন্তু এর সুফল পায়। আমরা আশা করব, যেই পরামর্শ আপনি আমাদের দিয়েছেন, সেগুলো আমাদের দর্শকদের উপকারে আসবে।