শিশুদের জন্মগত ত্রুটির চিকিৎসা কী?
শিশুদের বিভিন্ন জন্মগত ত্রুটি হয়। যেমন : ঠোঁট কাটা, তালু কাটা, হাতের আঙুল বেশি থাকা, আঙুল একসঙ্গে লেগে থাকা ইত্যাদি। শিশুদের জন্মগত ত্রুটির বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১২৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. তানভীর আহমেদ। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এই জাতীয় সমস্যাগুলো নিয়ে যখন আপনাদের কাছে আসে, এর চিকিৎসা কখন শুরু হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
উত্তর : একটি বাচ্চা যখন জন্মগ্রহণ করে, সে যদি তাদের প্রথম ইস্যু হয়, সবাই খুব চিন্তিত থাকে। জন্মের পর পরই যদি সিজারিয়ান সেকশনে হয়, সাধারণত এটি হসপিটাল সেটআপে হয়। দেখা যায়, গাইনোকোলোজিস্ট যখন সার্জারি করেছেন, সেখানে নার্স থাকে। দেখা যায়, তারাই তখন তাকে নিশ্চিত করে। নিশ্চিত করে আপনার ভয়ের কোনো কারণ নেই। আপনি অপেক্ষা করেন, আমরা আপনাকে যথাযথ জায়গায় রেফার করব। সেটা কিন্তু একটি জিনিস হয়ে যায়। তবে যখন এই ডেলিভারি হয় বাসায়,স্বাভাবিক ডেলিভারি, যখন দেখা যায় জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বাচ্চাটা বের হয়ে আসছে, তখন দেখা যায় সামাজিকভাবে মায়ের ওপরে এমন একটি চাপ থাকে, মনে হয় যেন সব দোষ মায়ের। তবে আমরা যদি জন্মগত ত্রুটিকে ব্যাখ্যা করি, সবার জানার জন্য এটি কিন্তু মায়ের একার কোনো বিষয় নয়। কারণ, এটি জিনগত বিষয়। জিনগত এই রকম একটি জিনিস যেটি বাবা-মা,পরিবারের দুজনের কাছ থেকেই আসে। সাধারণত বাবার বয়স এখানে গুরুত্বপূর্ণ। ওষুধ সেবন, এগুলো থেকে কিন্তু এই পরিবর্তন হয়। শুধু মাকে যে দোষারোপ করা হয়, সেটি অবশ্যই ঠিক নয়। সেই জন্য জন্মগ্রহণের পরপর সবাই খুব উদ্বিগ্ন থাকে।
আমার উপদেশ থাকবে, উদ্বিগ্ন হবেন না। এগুলোর চিকিৎসা রয়েছে। চিকিৎসা করা সম্ভব। উদ্বিগ্ন না হয়ে, একদিন যাক, দুই দিন যাক, বাচ্চাকে আগে স্থিতিপূর্ণ করেন, মাকে আগে স্থিতিপূর্ণ করেন। ধারে-কাছের কোনো শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, অথবা যেকোনো এমবিবিএস চিকিৎসকের কাছে যান,তাঁরা আপনাকে রেফার করে, প্লাস্টিক সার্জনের কাছে পাঠিয়ে দেবেন।
প্রশ্ন : এই প্রশ্নটা আমার পরে হতো যে কার কাছে গেলে এই চিকিৎসাটা যথাযথভাবে হবে?
উত্তর : সামাজিকভাবে চাপটা এত বেশি আসে, যখন চিকিৎসার চেয়ে চলে আসে অন্য বিষয়গুলো। সেগুলোকে যদি আমরা স্যাটেল ডাউন করতে পারি, আমরা যদি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে বাচ্চাকে সুস্থভাবে বাড়তে দিতে হবে। কারণ, জন্মের পর পরই সম্ভব নয় তাকে অস্ত্রোপচার করা। আর সব সুস্থ বাচ্চাদের মতোই তাকে তখন যত্ন করতে হবে। কারণ, তিন মাস পর্যন্ত যদি না কোনো জরুরি অবস্থা হয়ে থাকে, যেমন হয়তো আঙুল এক জায়গায় চিকন হয়ে গেছে, এসব ব্যতীত আমরা সাধারণ আঙুল অস্ত্রোপচার করি না। এর মানে হলো তিন মাস পর্যন্ত আমার হাতে সময় রয়েছে, জটিল অবস্থা ছাড়া তিন মাসের আগে আমরা সাধারণত অস্ত্রোপচার করি না। তবে আমরা পরামর্শ দেই, হাতের যে অস্ত্রোপচারগুলো তিন মাসের ভেতর থেকে নয় মাসের মধ্যে শেষ করার জন্য।
প্রশ্ন : অস্ত্রোপচার করার সময় মা-বাবাদের কীভাবে আশাস্ত করেন? পরে তারা একে কীভাবে দেখে?
উত্তর : এখানে কাউন্সেলিং খুব জরুরি। আমরা বাবা-মা বা আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে আলোচনায় বসি। আমরা এই বার্তাটি দিতে চাই যে এটি কারো একক সমস্যার জন্য হয়নি। এটা আমাদের জন্মগত একটি ত্রুটি। এটি যে কারোরই হতে পারে। নম্বর দুই হলো, বাচ্চাটিকে তার মতো করে বেড়ে ওঠতে দিতে হবে। নম্বর তিন হলো, তিন মাস পরে আমরা সীদ্ধান্ত নেব তার অস্ত্রোপচার লাগবে। তবে এখানে কিছু কিছু জিনিস রয়েছে, যেগুলো অস্ত্রোপচার ছাড়া সম্ভব। বিশেষ করে হেমানজিওমা। রক্তনালির টিউমার। এর চিকিৎসার জন্য কিন্তু এখন একটি ওষুধ চলে এসেছে। জন্মের পর পরই আমরা বাচ্চার ক্ষেত্রে এই ওষুধগুলো শুরু করি। এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে যে এর সফলতার হার খুবই ভালো। ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে আমরা অস্ত্রোপচার ছাড়া একে নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারি। আর অন্য যে ত্রুটিগুলো রয়ে গেল, বিশেষ করে জোরা আঙুল বা অন্য কিছু, আমরা যেটি খেয়াল করি, বাচ্চারা ছয় মাসের পর থেকে বিভিন্ন জিনিস ধরা শুরু করে। হাতে কাজ শুরু করার আগেই কিন্তু আমাদের ত্রুটিগুলো সারিয়ে দিতে হবে। না হলে তার হাতের কার্যক্রমটা ত্রুটিযুক্ত হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : অনেকে ধারণা করে, হাতের কোনো ক্ষতি হয়ে যাবে কি না। আসলে কী করণীয় বলে মনে করেন?
উত্তর : আসলে এটি একটি সুপার স্টেশন। যখন এই জিনিসটা ছিল, তখন সার্জারিটা ছিল না। তখন সামাজিকভাবে একজনকে হয়তো মেনে নেওয়ার জন্য বলত। বাংলাদেশে এখন প্লাস্টিক সার্জারি সচরাচর হয়। আমরা এটা করছি।