ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টদের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টের (বিএসিবি) এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে পাঁচ শতাধিক সদস্যের উপস্থিতিতে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে বিএসিবির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন বাংলাদেশের ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আমাদের দক্ষ জনশক্তি থাকা সত্ত্বেও কিছু অসঙ্গতির কারণে মানুষ চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাচ্ছে। এতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে চলে যাচ্ছে মেডিকেল ট্যুরিজমের নামে।
সম্প্রতি স্বাস্থ্য সেবা অধিদপ্তরের একটি বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন মেডিকেল ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির টেস্ট রিপোর্টে বায়োকেমিস্টদের স্বাক্ষর করাকে বিধি বহির্ভূত উল্লেখ করা হয়। বিএসিবির নেতারা বিরোধিতা করে বলেন,পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বায়োকেমিস্টরা ডায়াগনস্টিক রিপোর্টে স্বাক্ষর করে থাকেন। বায়োকেমিস্টরা ল্যাবরেটরিতে টেস্ট সম্পাদনের প্রত্যেকটি জটিল ধাপের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থেকে পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ ও বিশ্লেষণ করে টেস্ট রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন।
অপরদিকে, অধিকাংশ ‘মেডিক্যাল বায়োকেমিস্ট’ টেস্ট সম্পাদনের সঙ্গে জড়িত না থেকেও রিপোর্টে স্বাক্ষর করেন। এতে টেস্ট রিপোর্টের নির্ভরযোগ্যতার নিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ হাজারের ওপরে ডায়াগনস্টিক ল্যাব রয়েছে। আর এর বিপরীতে মাত্র ১৫০ জনের মতো মেডিকেল বায়োকেমিস্ট রয়েছেন। তাঁদের পক্ষে এতগুলো ল্যাবের পরীক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করে টেস্ট রিপোর্টে স্বাক্ষর করা অসম্ভব। এ কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
বক্তারা আরো বলেন, সরকারি হাসপাতালে অনেক পদ শূন্য রয়েছে। তবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না। বায়োকেমিস্ট বা ল্যাবরেটরি সায়েন্টিস্টদের জন্য বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নিবন্ধনের আলাদা কোনো কাউন্সিল নেই। দেশের স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারণে কোনো কমিটি গঠিতে হলে তাতে চিকিৎসক সংগঠনের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত হলেও কোনো বায়োকেমিস্টদের সংগঠন থেকে কোনো প্রতিনিধিকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং বিএসিবির সভাপতি প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আনোয়ার হোসেন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সলান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক প্রশাসন প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা, অ্যাসোসিয়েটেট প্রেস ব্যুরো প্রধান জুলহাস আলম।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি প্রফেসর এম আনোয়ার হোসেন বিএসিবির ডিরেক্টরি উন্মোচন করেন, যেখানে দেশে বিদেশে কর্মরত ছয় শতাধিক বাংলাদেশি বায়োকেমিস্টদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পরে প্রফেসর হোসেন উদ্দিন শেখর প্রস্তাবনা পাঠ করেন।
প্রস্তাবনার ওপর আলচনা করতে গিয়ে সাচিপ প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. ইকবাল আর্সানাল বলেন,‘বয়োকেমিস্টগণ যে দাবি গুলো তুলে ধরেছেন তা তাঁদের দীর্ঘ দিনের দাবি। ডাক্তার ও বায়োকেমিস্টদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই। অনেক বায়োকেমিস্ট পেশাগত অনিরাপত্তায় ভুগছেন’। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে বায়োকেমিস্টদের প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করে যৌক্তিক সমাধানের আশ্বাস দেন তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৬২৮ জন বায়োকেমিস্টের ডিরেক্টরি তৈরি করা হয়েছে তারা বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবায় নিভৃতে অবদান রেখে চলেছে। বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনেস্টিক ল্যাবগুলো রোগীকে সন্তুষ্ট করেই ব্যবসা করতে হয়। আর তার জন্য নির্ভুল পরীক্ষা নিশ্চত করতে হয়। ক্লিনিক্যাল বায়োকেমিস্টরা দক্ষ বলেই সেখানে উচ্চ বেতনে নিয়োগ দিচ্ছে। তাদের স্বীকৃতি দেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।’