প্রযুক্তি আসক্তি থেকে যেসব মানসিক সমস্যা হয়
বর্তমান সমাজ প্রযুক্তিনির্ভর। মোবাইল, ফেসবুক, ইন্টারনেট এখন হাতের মুঠোয়। প্রযুক্তির যেমন সদ্ব্যবহার হচ্ছে, তেমনি হচ্ছে অপব্যবহারও। এখন অনেকের মধ্যেই প্রযুক্তির প্রতি তীব্র আসক্তি দেখা যায়। আর প্রযুক্তি আসক্তি থেকে তৈরি হয় বিভিন্ন মানসিক সমস্যা।
প্রযুক্তি আসক্তি থেকে মানসিক সমস্যার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১২৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. দেওয়ান আবদুল রহিম। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : প্রযুক্তি বলতে আমরা কী বুঝব? কোন কোন প্রযুক্তিতে আমরা আসক্ত হচ্ছি? এর জন্য কী কী সমস্যা হচ্ছে?
উত্তর : যে প্রযুক্তি এখন বর্তমানে চলছে, সেটি মোবাইল। মোবাইলের প্রতি আমাদের ছেলেমেয়েরা বেশি আসক্ত। এ ছাড়া রয়েছে গেম। এই যে কম্পিউটারে গেম খেলা, এই গেমে আমাদের কিশোর ছেলেরা খুব বেশি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।
ইদানীং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানসিক ব্যাধির ম্যানুয়ালের মধ্যে গেমিং ডিসঅর্ডার নামে একটি রোগের কথা বলেছে। নতুন একটি রোগের আবির্ভাব হয়েছে, গেমিং ডিসঅর্ডার। আমার মনে হয়, অদূর ভবিষ্যতে সেলফি এডিকশন এসে যাবে। এখন তো আমাদের মাঝে সেলফি আসক্তি এসেই গেছে। ফেসবুক, টুইটার কিংবা ইউটিউব এগুলোতে কিন্তু মানুষ এখন অনেকটাই আসক্ত।
প্রশ্ন : কতটুকু ব্যবহার করলে একে আমরা আসক্তি বলব?
উত্তর : দেখা যাচ্ছে কেউ মারা গিয়েছে, এর সেলফি নিচ্ছে। একজন আরেকজনকে পিটিয়ে মারছে, এটির সেলফি নিচ্ছে। সেখানে ভারী পরিবেশকে একটু হালকা করে দিচ্ছে। তাই আমরা যারা শিক্ষক বা অভিভাবক, আমাদের এই বার্তাটা দিতে হবে যে সেলফি বা ফেসবুক যেটিই তোমরা করো না কেন, এটি নিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহার করো। এমনকি দেখা যাচ্ছে, মসজিদের ভেতরে নামাজ পড়ছে, এমন সময় সেলফি তুলছে। আমি একবার দেখেছি, হজে সেলফি তুলছে। বার্তা দিতে হবে যে সব ক্ষেত্রে আমরা এগুলো করব না।
তবে আমাদের ছেলেমেয়েরা শুনতে চায় না। গেম, সেলফি, ফেসবুক এখন বিনোদনের মতো চলে এসেছে। এগুলো আমাদের ছেলেমেয়েদের বলতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বাড়িতে আমাদের বেশি বেশি বলা উচিত। মসজিদে যারা খুতবা দেন, সেই সমস্ত আলেমা-ওলামা এগুলো বলতে পারেন। সব জায়গায় এর একটি ভালো প্রচার দরকার। প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, সেটি ঠিক আছে; তবে এতে আসক্ত হওয়া যাবে না।
প্রশ্ন : প্রযুক্তি আসক্তির কারণে কী কী মানসিক সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : একটি হলো শুচিবায়ু ধরনের। বাধ্যবাধকতা, যে করতেই হবে আমাদের। মনের মধ্যে একটি সুড়সুড়ি ভাব আসে। মনের মধ্যে বারবার একটি তাগিদ আসে যে আমাকে এটি করতেই হবে। করতেই হবে। এটি অবসাসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডারের একটি ধরনের মধ্যে পড়ে যাবে হয়তো। আর আসক্তি অবসাসিভ কমপালসিভের দিকে যায়। প্রথম থেকে আমরা যদি নিয়ন্ত্রণ না করি, তাহলে ভয়াবহ অবস্থা হয়ে যাবে। অনেকে সেলফি তুলতে গিয়ে মারা যায়, মারা যাচ্ছেও। সুতরাং আমাদের শুরু থেকেই এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবক, শিক্ষক, নেতৃস্থানীয় যারা রয়েছে এবং মসজিদে ইমাম সাহেবরা ভালো করে এগুলো বুঝিয়ে দিতে পারে। তারা এসব বাস্তব কথা তুলে ধরতে পারে। প্রযুক্তির আসক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে।
প্রশ্ন : প্রযুক্তির আসক্তি থেকে যেসব মানসিক সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো থেকে পরে আরো কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : আমরা দেখেছি, অল্প বয়সে এটার দিকে যদি ছেলেমেয়েরা চলে যায়, তাহলে তার একাডেমিক যে পারফরম্যান্স, তার লেখাপড়ার মান কমে যায়। হয়তো পড়ার বিষয়গুলো ভালোভাবে পারে না। সুতরাং এদের লেখাপড়ার মান অনেকটা কমে যায়। এখন আমরা ইদানীং দেখি, ছেলেমেয়েরা বেশি বেশি বিবিএ, এমবিএ পড়তে চায়। তারা অঙ্ক পড়তে চায় না; পদার্থ, রসায়ন পড়তে চায় না। এসব আসক্তিতে জড়িয়ে গেলে পড়াশোনার কাজ, ল্যাবরেটরিতে কাজ করতে পারবে না।
প্রশ্ন : এ ছাড়া আর তার কী কী মানসিক সমস্যা হতে পারে?
উত্তর : ঘুমের সমস্যা হয়। অনিদ্রায় ভোগে। আরেকটি হলো তার মস্তিষ্কের পরিপক্বতা তৈরি হয় না। শরীরের মধ্যেও নানা ঘাটতি দেখা দেয়। হয়তো খাবার-দাবার অনিয়মিত হয়ে যায়। মস্তিষ্কে সমস্যা হয়। পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার আসতে পারে। উদ্বেগ হতে পারে। এ ধরনের নানাবিধ মানসিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাগুলো হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, অসুখও হয়ে যায়।