মাসিকের আগে সাদাস্রাব স্বাভাবিক

Looks like you've blocked notifications!
ডা. জুলফি আরা হায়দার।

সাদাস্রাব ও অনিয়মিত মাসিক মেয়েদের প্রচলিত সমস্যা।অতিরিক্ত সাদাস্রাব হলে এবং মাসিক অনিয়মিত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।আজ ৮ সেপ্টেম্বর এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ২১৪৫তম পর্বে অনিয়মিত মাসিক এবং সাদাস্রাব বিষয়ে কথা বলেছেন ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের প্রসূতি ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ডা. জুলফি আরা হায়দার।

প্রশ্ন : মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক হওয়ার প্রধান কারণ কী?

উত্তর : কোনো মহিলার কোনো ধরনের চিকিৎসা করার ব্যাপরে সাধারণ একটি বিষয় হলো তার বয়সটা ভাগ করা। জন্মের পর থেকে শুরু করে বয়োসন্ধি, মধ্যবয়স এবং প্রবীণ বয়স। মাসিককে যদি আমরা ভাগ করতে যাই জন্মের প্রথম থেকে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত আসতে পারে। তবে এটা খু্ব অপ্রতুল। এতে ঘাবড়াবার কোনো বিষয় নেই। এতে কোনো চিকিৎসা দেওয়া হয় না। দুই একদিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তারপর একটু বড় হলে খেলতে খেলতে আহত হলে যোনিপথে রক্তপাত হতে পারে। এরপর আসছে মাসিক হওয়ার বয়স। সেটা ১১ বছরেও হতে পারে, ৯ বছরেও হতে পারে। সাধারণত বলি, ১৩ থেকে ৪৫ বছর বয়স। এই সময় অতিরিক্ত মাসিক হতে পারে। হরমোনের ভারসাম্য থাকে না বলে এই সমস্যা হয়। এ সময় চিকিৎসকের কাছে যেতে বলি। তবে অতিরিক্ত ওষুধ দেই না। একটা হরমোন চিকিৎসা দেই। সেটা হলো প্রজেস্টেরন হরমোন। বেশি ওষুধ লাগে না।

তবে কারো কারো এমন হয় রক্তপাত হয়ে সাদা হয়ে গেল। রক্তশূন্যতা হয়ে গেল। সেই ক্ষেত্রে রক্ত লাগতে পারে। এই ক্ষেত্রে আমি দেখেছি বিষয়টি তেমন জটিলতার কিছু নয়। রক্ত দিলাম বা হরমোন চিকিৎসা দিলাম, মেয়েটা ভালো হয়ে গেল। এরপর যখন বিয়ে হয় তখন আমরা জন্মনিয়ন্ত্রক পিল দিয়ে দেই। তাতেও উপকার হয়। আরেকটু বয়স বেশি হলে, অনিয়মিত মাসিক হলে আমাদের চিন্তা করতে হয় রোগী খারাপের দিকে যাচ্ছে কি না। তখন আমরা বায়োপসি নিয়ে দেখি মাসিকটা স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক না কি ক্যানসারের দিকে যাচ্ছে।

প্রশ্ন : প্রাপ্তবয়সে যখন ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে সে সময় অনিয়মিত মাসিকটা ঠিক কীভাবে হয়?

উত্তর : ৩৫ বছরের উপরে সমস্যা হলে আমরা চিন্তা করি। আর ৪৫ বছরের বেশি হলে আমরা বেশি আশঙ্কা করি। আর এই সময়টিতে যদি মাসিক অনিয়মিত হয় তখন চিকিৎসকের কাছে চলে যাওয়া উচিত। খুব বেশি চিকিৎসা লাগে না অনিয়মিত মাসিকে। জীবনযাপনের ধরন পরিবর্তন করলে অনেকটা ঠিক হয়ে যায়। আর ঠিক না হলে আমরা প্রজেস্টেরন হরমোন দিয়ে চিকিৎসা করি।

প্রশ্ন : কখন সাদাস্রাব নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার বিষয়?

উত্তর : সাদাস্রাব কী আমাদের বুঝতে হবে। এটা প্রচলিত বিষয়। সাদাস্রাব যদি বেশি বেড়ে যায়। কাপড়ে লেগে যায়, চলাফেরা করতে গিয়ে কাপড় ভিজে গেল তখন এটাকে আমরা বেশি বলি।urgentPhoto

বেশি ছোটো বাচ্চাদের এই সমস্যা হতে পারে। দুর্বল স্বাস্থ্যের হলে হতে পারে। জরায়ুমুখের কোনো গ্ল্যান্ড বাড়লে এটা হয়। বেশির ভাগ সময় স্বাস্থ্য খারাপ থাকলে এটা হবে। তখন স্বাস্থ্য ভালো করতে আমরা পরামর্শ দেই। এরপর একটু বড় হলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে এই সমস্যা হতে পারে। তখন সাধারণত বেশি সাদাস্রাব হয়। সাদাস্রাব  মাসিক হওয়ার মাঝখানে বেশি হবে, আগে বেশি হবে, পরে বেশি হবে। এটা স্বাভাবিক। এটা আমাদের জানতে হবে।

আবার কারো হয়তো ক্যানসার হয়ে সাদাস্রাব হচ্ছে, সে টের পাচ্ছে না। আর কেউ হয়তো একটুতেই চিকিৎসকের কাছে চলে এলো। এটা নির্ভর করে তার অনুভূতির ওপর।

প্রশ্ন : সাদাস্রাব হওয়ার সাথে সাথে ভেতরে কী এক ধরনের অস্বাভাবিকতা অনুভব করে?

উত্তর : সবাই অনুভব করে না। যারা অনুভব করে তারা এত বেশি করে যে পাগলের মতো চিকিৎসকের কাছে ছুটে আসে। আসলে দেখা যায় কিছুই না। আর যারা অনুভব করে না, তাদের দেখা যায় খারাপ কিছু হয়ে গেছে।

প্রশ্ন : তাহলে চিকিৎসকের কাছে কখন যাওয়া উচিত বলে মনে করেন?

উত্তর : আমি তো বললাম, মাসিকের আগে, পরে, মাঝখানে এবং গর্ভাবস্থায় সাদাস্রাব হবে। তবে এটা যদি এমন হয় তার পোশাক ভিজে যাচ্ছে- তবে তাকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। কিংবা কোনো গন্ধ হচ্ছে বা চুলকানি হচ্ছে তখন অবশ্যই চিকিৎসা লাগবে। এ ছাড়া বলি স্বাস্থ্য ভালো করো। যদি সাদাস্রাব বেশি হয় অবশ্যই তাকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

রোগীর কিছু জিনিস দেখতে হবে। চুলকানি আছে কি না জানতে হবে। তার জ্বালাপোড়া হচ্ছে কি না বুঝতে হবে। সাদাস্রাবে গন্ধ আছে কি না দেখতে হবে। পরিমাণ বুঝতে হবে। এগুলোর ওপর নির্ভর করে তার চিকিৎসা হবে।