ফিজিওথেরাপি কলেজ ও কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার দাবি
জনস্বার্থে ফিজিওথেরাপি কলেজ ও কাউন্সিল বাস্তবায়ন দাবিতে গতকাল রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত ফিজিওথেরাপি পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে বলা হয়, কলেজ অব ফিজিওথেরাপি ও ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠায় দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে আগামী ২২ জুলাই থেকে মানববন্ধন, ঘেরাও ও অবস্থান ধর্মঘটের মতো কর্মসূচি পালন করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. এম এন আলম ছাড়াও শতাধিক ফিজিওথেরাপি ছাত্র, শিক্ষক, পেশাজীবী, ফিজিওথেরাপি সেবা গ্রহণকারী ও ফিজিওথেরাপির বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এম এন আলমের সভাপতিত্বে মূল বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনের মুখপাত্র ডা. দলিলুর রহমান। মূল বক্তৃতায় তিনি স্বাস্থ্যসেবায় ফিজিওথেরাপি পেশার গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে দেশের প্রায় দুই কোটি প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে কর্মক্ষম করে স্বাভাবিক জীবনযাপন করানো সম্ভব, প্রয়োজন শুধু গৃহীত ফিজিওথেরাপি কলেজ ও কাউন্সিল উদ্যোগগুলোর বাস্তবায়ন।’
ডা. দলিলুর আরো বলেন, ‘দেশের ১০ শতাংশ মানুষ নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতায় আক্রান্ত এবং আরো লাখ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক প্রভৃতি অসুস্থতা, বয়স্ক জনগোষ্ঠীর আধিক্য ও বার্ধক্য, জলবায়ুর পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে রোগবালাই (যেমন : চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসজনিত ব্যথা-আরথ্রালজিয়া), শিশুদের জন্মগত শারীরিক ত্রুটির ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি, বিভিন্ন রকম বাতের ব্যথা, প্যারালাইসিসজনিত কারণসহ জীবনযাত্রা ও মানের পরিবর্তন, খাদ্যাভ্যাস ও কাজের ধরনের পরিবর্তনসহ বিভিন্ন উপায়ে শারীরিক ভাবে অক্ষম বা কম কর্মক্ষম বা শারীরিক প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়ে পরিবার, সমাজ ও দেশের কাছে বোঝা হিসেবে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। এর ফলে যেমন সর্বক্ষেত্রে বিশাল আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি দেশের মানুষের বড় একটি অংশ অবর্ণনীয় শারীরিক ও মানসিক কষ্টের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। অথচ উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশের এই বিশাল জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশকে ফিজিওথেরাপিস্টরা তাঁদের সমস্যা বা কষ্ট লাঘব করে সুস্থ ও স্বাভাবিক/ প্রায় স্বাভাবিক কর্মক্ষম জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারে, ফলে তারা বোঝার পরিবর্তে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধশালী করতে ভূমিকা রাখতে পারে।’
সংবাদ সম্মলনে জানানো হয়, গুরুত্বপূর্ণ ফিজিওথেরাপি পেশাজীবী তৈরি করার জন্য কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য দেশে নেই কোনো সরকারি চাকরি বা কাউন্সিল । ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও পেশাকে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কোনো কাউন্সিল না থাকায় দিন দিন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পেশার কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আর্থিক, শারীরিক, মানসিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাদের জীবনও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আইন না থাকার ফলে যেমন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ ইচ্ছামতো ফিজিওথেরাপি কোর্স পরিচালনা করছে, আরেক দিকে সারা দেশে যে কেউ ফিজিওথেরাপিস্ট সেজে চিকিৎসা প্রদান করছে। এমনকি সরকারি হাসপাতালগুলোতে ফিজিওথেরাপির নামে চলছে ‘হিটথেরাপি’। পরিষদের পক্ষ থেকে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার প্রথমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল গঠনের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করে, যা চিকিৎসকদের একটি অংশের বাধার কারণে আর অগ্রসর হতে পারেনি। পরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় রিহ্যাব কাউন্সিল নামে আইন তৈরি করার নতুন উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিভিন্ন জটিলতায় তা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, ফিজিওথেরাপি পেশার জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান গড়তে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে মহাখালীতে ফিজিওথেরাপি কলেজের জন্য সরকার সোয়া পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দেয়। কলেজ ভবন নির্মাণের দাবিতে ছাত্রছাত্রীরা কয়েক বছরে রাজধানীতে চার দফায় ২৪ দিন আমরণ অনশনসহ অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, সংবাদ সম্মেলন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার পর ২০০৯ সালে ওই জায়গায় কলেজ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হক। তারপর বস্তি উচ্ছেদ করা হয় এবং দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার অনুমতি প্রদান করা হয়। কিন্তু কলেজ ভবনের কাজ গত সাত বছরে আর শুরু হয়নি। সেখানে তাই আবারও বস্তি হয়। এর আগে বস্তিবাসীর পক্ষে রিটের নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবৈধ দখলদারদের দুই মাসের সময় দিয়ে ফিজিওথেরাপি কলেজের জন্য জমি ছেড়ে দেওয়ার আদেশ ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ জারি করলেও এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগই নেয়নি। এমনকি মহামান্য রাষ্ট্রপতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ফিজিওথেরাপি কলেজ বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
পরিষদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সরকার কর্তৃক গৃহীত উদ্যোগ জনস্বার্থে ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল ও বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপির যেন দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. এম এন আলম, ডা. নজরুল ইসলাম, ডা. ফরিদ উদ্দিন, ডা. খাইরুল ইসলাম, ডা. আরিফ জুবায়ের, ডা. মাকসুদুল আলম, ডা. মহসিন কবির লিমন, ডা. মাশুক রায়হান, ডা. জাকারিয়া ফারুখ, ডা. সাইফুল ইসলাম, জাকারিয়া তমাল প্রমুখ।