স্বাভাবিক প্রসবের সুবিধা-অসুবিধা

এক সময় বাংলাদেশে স্বাভাবিক প্রসব বেশ প্রচলিত হলেও বর্তমানে সিজারিয়ান সেকশনের হার বেশি দেখা যায়। তবে সম্প্রতি স্বাভাবিক প্রসবের বিষয়ে আগ্রহী হচ্ছেন চিকিৎসক ও রোগীরা।
স্বাভাবিক প্রসবের সুবিধা- অসুবিধার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৬৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. রাইসা সুলতানা। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের অবস ও গাইনি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কোন কোন বিষয় দেখে ঠিক করেন স্বাভাবিক প্রসব করতে হবে, না সিজারিয়ান সেকশন করতে হবে?
উত্তর : প্রশ্নটি খুবই সময়োপোযোগী। আজকাল এটি নিয়ে খুব চিন্তাভাবনা হচ্ছে। সেইফ ডেলিভারি বলেও একটি কথা রয়েছে, এটা আমাদের স্লোগান। আমরা চাই, যাদের যাদের স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব, তাদের করানো উচিত। তবে এ কথা আসলে খুব বেশি সত্য নয় যে চিকিৎসকরা বৈষয়িক লাভের জন্য বা অন্য কোনো কারণে, সচেতনভাবে কোনো অপারেটিভ ডেলিভারি করে। তারপরও বলতে হয়, আমাদের দেশে স্বাভাবিক প্রসব কমে গেছে। তবে এখন আমরা আবার এটাতে জোর দিচ্ছি। আমরা চাই যদি সম্ভব হয়, প্রত্যেকটা মায়ের স্বাভাবিক প্রসব হবে। এই ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মোটিভেশন। হ্যাঁ, এটা খুব সহজ। এর জন্য কোনো ভয়ের কারণ নেই। আমরা বলব, নিয়মিত অ্যান্টিনেটাল চেকআপ করতে। তোমরা হাসপাতালে একজন গাইনোকোলজিস্টের সাথে কথা বল এবং তোমরা যেই সময় অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পরামর্শগুলো নিয়ে নাও। যখন গর্ভাবস্থার ৪০ সপ্তাহ হয়, তখন আমরা নির্ধারণ করব, তিনি স্বাভাবিক প্রসবে যেতে পারবেন কি না। যদি অন্যান্য জটিলতা না থাকে, তিনি সহজে স্বাভাবিক প্রসবে যেতে পারবেন।
বাচ্চার মাথা যদি নিচের দিকে থাকে, অবস্থান যদি লম্বালম্বি থাকে, কোনো অস্বাভাবিক বিষয় যদি না থাকে, পরিপক্ব যদি হয়, কোনো মেডিক্যাল ডিজঅর্ডার যদি না থাকে, কোনো অন্য রকম অসুখ, যেমন ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত পরিমাণ উচ্চ রক্তচাপ, আগে প্রসবের বেলায় সিজার, প্রি-একলামসিয়া, একলামসিয়া যদি না থাকে, তাহলে একজন মা স্বাভাবিক প্রসবে যেতে পারবেন।
এখন আসি যখন প্রসবের সময় হবে, তখন কী? সবাই বলে লেবার পেইনের মতো ব্যথা আর হয় না। এটি দুনিয়াতে সবচেয়ে কষ্টকর ব্যথা। এটা সত্য। তবে এই ক্ষেত্রে একটি সুখের কথা সবাইকে বলতে চাই, সবাই জানেও আজকাল ব্যথামুক্ত ডেলিভারি সম্ভব। সেটা হলো এপিডোরাল এনেসথেসিয়া। লাগলে এটি সময়ে সময়ে কয়েকবার দেওয়া যায়। এতে ৯০ ভাগ ব্যথামুক্ত প্রসব হয়। ব্যথা থাকবে না, দক্ষ চিকিৎসক থাকবে এসব কিছুর মিলে একটি ভালো প্রসব হওয়া সম্ভব। এতে কোনো ভয় নেই। একটি সুস্থ শিশু পাওয়া সম্ভব।
প্রশ্ন : ব্যথামুক্ত স্বাভাবিক প্রসব সম্পাদনের জন্য করণীয় কী ?
উত্তর : একজন মা যখন সন্তান ধারণ করবেন তখন প্রথমে তাঁকে বলতে হবে আপনি একজন চিকিৎসকের কাছে যান। উনি আসলে উনাকে আমরা মোটিভেট করব যে কোনো জটিলতা না থাকলে ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত থাকবেন এবং আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আপনাকে আমরা চেক করব, কোনো সমস্যা হলে সেটি আপনাকে বলব। যদি দেখা যায় কোনো জটিলতা নেই, তাহলে তাদের আসলে বোঝানো যে স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব। হাসপাতালে যেতে হবে বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হবে।
প্রশ্ন : তৃণমূল পর্যায়ে কীভাবে এটা সম্ভব?
উত্তর : আগে যখন প্রসব হতো, তখন কিন্তু একটি লেবার রুম সব হাসপাতালে ছিল। তবে আজকাল যেহেতু স্বাভাবিক প্রসব আগের তুলনায় একটু কম হচ্ছে, তারপরও আমি আশাবাদি। আমরা এখন শুরু করছি, আবার নতুনভাবে।
রোগী ও চিকিৎসকের সম্পর্ক বাড়াতে হবে। তারা তখন সাড়া দেবেন। ব্যথা মুক্ত করার জন্য অ্যানেসথেসিওলজিস্ট রয়েছেন, শিশুকে নেবেন নিউনেটলজিস্ট চিকিৎসকরা।
প্রশ্ন : নতুন করে একটি ইচ্ছা তৈরি হয়েছে, স্বাভাবিক প্রসবকে এগিয়ে নেয়ার। কেন এই ইচ্ছাটা তৈরি হলো? সিজারিয়ান সেকশনের তুলনায় স্বাভাবিক প্রসবের সুবিধা কী?
উত্তর : স্বাভাবিক যেকোনো কিছুই অনেক সুবিধাজনক। স্বাভাবিক প্রসব হলে তার পেটে কোনো অপারেটিভ স্কার থাকবে না। টাকা পয়সার বিষয়ে যদি চিন্তা করা হয়, সেটিও কম। পরবর্তী সময়ে তার যেসব প্রসব হবে সেগুলো স্বাভাবিক হবে। হাসপাতালে থাকা কমে যাবে, সংক্রমণের আশঙ্কা কমে যাবে। এমনকি যেই শিশুটা হয় তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, সুস্থ বেশি থাকে।
প্রশ্ন : স্বাভাবিক প্রসবের শিশু, আর সিজারিয়ান সেকশনের শিশু – এদের স্বাস্থ্য, মেধা এসব বিষয় নিয়ে কিছু কথা প্রচলিত রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
উত্তর : আমার মনে হয় না বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো বিষয় রয়েছে। কিছু বিষয় প্রচলিত রয়েছে, যেসব শিশু সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে হয়, তারা অনেক বুদ্ধিমান হয়। তবে আসলে কোনো বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য নেই।
মনিটর করে যদি দেখা যায় ভ্যাজাইনাল ডেলিভারিতে শিশুটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তাহলে আমরা থেকে যাব। ভ্যাজাইনাল ডেলিভারির দিকে আর এগোবো না। তখন আমরা সিজারিয়ান সেকশনের দিকে যাব। মনিটর সিস্টেমে একটি ভালো বিষয়। এটি দিয়ে আমরা দেখতে পারি প্রসবের অবস্থা যে বাচ্চাটা কীভাবে যাচ্ছে। সুতরাং এই শিশুটির খারাপ কিছু হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।
প্রশ্ন : প্রসবের ক্ষেত্রে কাউন্সেলিংটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?
উত্তর : এই খানে একটি সুবিধা আমাদের রয়েছে, আমরা নয় মাস একটি মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখি। সুতরাং একটি সম্পর্ক তৈরি হয়, একটি নির্ভরতা তৈরি হয়। অনেকে বলেন, ‘ আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না, আমি আপনার কাছেই প্রসব করাতে চাই।’ বেশিরভাগ রোগী এ রকম বলে থাকে।