ডেঙ্গু হলে কতটুকু তরল পান করবেন?
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। জ্বর হলে কখন চিকিৎসকের কাছে যাওয়া জরুরি, কীভাবেই বা এর ব্যবস্থাপনা করবেন, এসব বিষয় নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদ্নি অনুষ্ঠানের ৩১৮৪তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ।
ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ বর্তমানে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : জ্বর হলে কেবল প্যারাসিটামলের ওপর নির্ভর না করে কখন একজন রোগীর অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত হবে?
উত্তর : এখন ডেঙ্গুতে প্রধান হলো ফ্লুইড লিকেজ ( তরল বের হওয়া)। আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ডেঙ্গুতে খাবার অরুচি হয়। এখন যদি তরল না খেতে পারি তাহলে কিন্তু সমস্যা বাড়বে। কতটুকু তরল খেতে হবে তার একটি পরিমাপ রয়েছে। ৬০ কেজি একটি লোকের জন্য অন্তত পাঁচ লিটার তরল দরকার প্রতিদিন। এখন যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত তার জন্য কিন্তু পাঁচ লিটার ফ্লুইড নেওয়া খুব কঠিন। এর মানে আমাকে বুঝতে হবে, আমি খেতে পারছি কি না, বমিটা আমার খুব বেশি হচ্ছে কি না। বমির ওষুধ দেওয়ার পরও আমার বমি হচ্ছে কি না। আরেকটি জিনিস আমরা দেখি, সেটি হলো প্রস্রাব কত্টুকু হচ্ছে। রোগী এলে সবসময় আমরা জিজ্ঞেস করি, আপনার শেষ প্রস্রাব কখন হলো এবং পরিমাণে কেমন। যদি ছয় ঘণ্টার মধ্যে প্রস্রাব না হয়, তাহলে চিন্তার বিষয়। আমরা বলি ট্রানজিশন পিরিয়ড (ক্রান্তিকাল)। ক্রিটিক্যাল ফেইস (জটিল অবস্থা) আরেকটি হলো কনভালশন অবস্থা জটিল অবস্থায় যখন জ্বর চলে যায়, তখন হলো জটিল অবস্থা। জটিল অবস্থা হলে যখন চলে আসবে, তখন রোগীর সাধারণত খাওয়ার রুচি চলে আসে। এই অবস্থায় খাওয়ার রুচি না আসলে বা খাওয়ার পর আপনি বমি করলে এটি আরো ঝুঁকিপূর্ণ লক্ষণ।
আমরা চিকিৎসকরা দেখি। যদি গা, হাত পা ঠাণ্ডা হয় যায়, পালস দেখি। আর বেশি দেখার চেষ্টা করি রক্তচাপ। আমরা সবাই জানি রক্তচাপ থাকে ১২০/ ৮০ বা ১১০/ ৭০। সাধারত সিস্টোল ও ডায়াস্টোলের মধ্যে ফাঁকাটা ৩০ বা ৪০ থাকে। এই ফাঁকটি যদি বিশের নিচে নেমে যায়, এটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়। এর মানে পালস, প্রেশারটা আমাদের দেখতে হয়। এরপর আমরা দেখি শরীরের বিভিন্ন জায়গা দিয়ে রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে, নাক দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে, দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্তপাত হচ্ছে, অথবা পায়খানা কালো হচ্ছে, অথবা বমির সঙ্গে রক্ত যাচ্ছে, আমার মেয়েদের ক্ষেত্রে পাই ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে গেছে, চার দিন থেকে পাঁচ দিন পর আবার ঋতুস্রাব শুরু হলো। প্রচুর পরিমাণে রক্ত যাচ্ছে। অথবা ত্বকের বিভিন্ন জায়গায় লাল দাগ। এসব বিষয় খেয়াল করতে হবে। কারণ, ডেঙ্গুতে সাধারণত র্যাশ হয়। আর এটি হবে ছোট ছোট র্যাশ, আলপিনের মতো। এর মানে এই জিনিসগুলো যখন থাকবে, তখন আমাদের সতর্ক হতে হবে। ডেঙ্গুতে একটা প্রচণ্ড পেটে ব্যথা হয়। আমাদের কাছে আসেই পেটে ব্যথা নিয়ে। পিত্তথলি ফুলে যায়, হেপাটাইটিসের ব্যথা হতে পারে। এই রোগীগুলো সঙ্গে যদি অন্য রোগ থাকে, তাহলে ঝুঁকি। ধরুন, তার হার্ট ফেইলিউর রয়েছে কিছু ওষুধ খাচ্ছে, অথবা আমার কিডনি খারাপ। কারণ, আমার ফ্লুইডে ভারসাম্যটা স্থূলতার জন্য ব্যবস্থাপনা করা কঠিন হয়ে যায়। এসব রোগীর ক্ষেত্রে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
এ রকম অবস্থা দেখলে বাসায় থেকে নিজে নিজে চিকিৎসা করার কিছু নেই, অবশ্যই একজন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।