সঞ্জীবনী

ভরসার নাম হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

Looks like you've blocked notifications!
ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক। ঢাকার শেরে বাংলানগরে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালে হার্টের প্রায় সব ধরনের সর্বাধুনিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

শুরুর কথা
হাসপাতাল শুরু এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা হয় বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু আজমের সঙ্গে। তিনি জানান, ‘হার্টের চিকিৎসার জন্য প্রথমে এ দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কার্ডিওভাসকুলার বিভাগ ছিল। তখন এর প্রধান  ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  চিন্তা করছিলেন স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন ইনস্টিটিউট করার। ১৯৭৮ সালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১২৫ জন কর্মচারী নিয়ে অধ্যাপক ডা. আব্দুল মালিক স্যার এটা শুরু করেন। প্রথমে প্রায় ১১০ শয্যা ছিল। শুরুটা খুব কষ্টের ছিল। তখন বহির্বিভাগ বলে কিছু ছিল না। ইনডোরের চিকিৎসকরা বহির্বিভাগে দেখতেন। সে সময় এই খাতে অনেক চিকিৎসক প্রয়োজন ছিল। এ দেশে সেই পরিমাণ চিকিৎসক ছিল না। তখন জাপানের জাইকা এগিয়ে এলো। তারা এই বিষয়ে সাহায্য সহযোগিতা করল।’  

আবু আজম আরো বলেন, ‘আসলে বাংলাদেশে হার্টের চিকিৎসায় মালিক স্যার মহীরূহের মতো। এ ইনস্টিটিউট গড়ে উঠার পেছনে তাঁর অবদান অনেক। ১৯৯৪ সালে পরিচালক হন অধ্যাপক এম এ জামান। তখন এখানে অনেক ক্যাথল্যাব তৈরি হয়।’ 
চিকিৎসাসেবা
পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু আজম বলেন, ‘বর্তমানে তিনটি ব্লক রয়েছে। বর্তমানে হৃদরোগ বিষয়ে পৃথিবীর সব আধুনিক চিকিৎসাগুলো এখানে দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার না করে হার্টের জন্মগত ফুটো বন্ধ করা হয়। বর্তমানে প্রাইমারি পিসিআই বলে একটা চিকিৎসা রয়েছে। ছয় ঘণ্টার মধ্যে কোনো হার্ট অ্যাটাকের রোগী এলে প্রথমে ক্যাথল্যাবে নিয়ে এনজিওগ্রাম করে প্রয়োজনে রিং লাগিয়ে দেওয়া হয়। এখন তিনটি ক্যাথল্যাব আছে। আরো দুটি হওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’ 

বর্তমানে এই হাসপাতালে ৪১৪টি বেড রয়েছে। আউট ডোরে চার শতাধিক  রোগী চিকিৎসা নিতে পারে। টিকেট ১০ টাকা করে। আউটডোরে এখন বেশির ভাগ ওষুধই দিয়ে দেওয়া হয়। 

এখানে ৬০ শতাংশ ফ্রি বেড। ৪০ শতাংশ পেইং বেড। ৩০টি কেবিন রয়েছে। নন এসি বেডের ভাড়া ৫২৫ টাকা। আর এসির ভাড়া ১১২৫ টাকা। দরিদ্র রোগীদের জন্য সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার ফান্ড রয়েছে। দরিদ্র রোগী হলে সব চিকিৎসা ফ্রি করা হয়।

পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু আজম জানান, বর্তমানে এখানে ৯৯ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। ২১৫ জন মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। ৯৯৭ জন কর্মচারী রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে ফান্ডিং করা হয়।  

প্রায় এক মাস ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন রফিকুল ইসলাম মিয়া (৫০)। গোপালগঞ্জ থেকে এসেছেন তিনি। হার্টে রিং পরানো হয়েছে তাঁর। বললেন, ‘এখানে চিকিৎসার মান ভালো। চিকিৎসকরাও আমাকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছেন।’   

রোগীর চাপ অনেক
হাসপাতাল ঘুরতে ঘুরতে দেখা গেল বেড না পাওয়ায় অনেক রোগীকেই মাটিতে বিছানা পেতে দেওয়া হয়েছে। সেখানেই তাদের চিকিৎসা চলছে।

চাঁদপুর থেকে এসেছেন দেলোয়ার হোসেন (৫০)। তাঁর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। বেড না পাওয়ায় মাটিতে পাতা বিছানাতেই চিকিৎসা চলছে তাঁর। জানালেন, এখানের চিকিৎসা ভালো। তবে বেড পাওয়া একটু মুশকিল। এখন এভাবেই চিকিৎসা চলছে। 

পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু আজম জানালেন, ‘প্রতিদিন অন্তত ৭০০ থেকে ৮০০-এর উপরে রোগী ভর্তি হয়। রোগী তিন থেকে চারদিনের বেশি রাখতে পারি না। বর্তমানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। যতটুকু বেড রয়েছে এতে রোগীদের স্থান সংকুলান হয় না। অনেক রোগীকে মাটিতে বিছানা দিতে হয়। বেড বাড়াতে পারলে ভালো হতো। এই ভবনকে সাততলা করার চিন্তা করা হচ্ছে এবং আশপাশে কিছু খালি জায়গা রয়েছে সেখানেও ভবন করার কথা ভাবা হচ্ছে। সরকার অনুমোদন দিলে আমাদের ইচ্ছা রয়েছে কেবিনগুলোতেও ঢাকা মেডিকেলের মতো দুটো করে বেড দেওয়ার।’ 

পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু আজম আরো বলেন, ‘আগে অনেক অভিযোগ আসত এখানে বেড বিক্রি হয়। গার্ডরা টাকা নেয়। আমি আসার পর বিষয়গুলোকে অনেক নিয়ন্ত্রণ করেছি। হাসপাতালের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি খেয়াল করছি।’ 

আবু আজম যোগ করেন, ‘এ ছাড়া আগের যেই কাঠামো রয়েছে সেভাবে না রেখে একজাতীয় বিভাগগুলোকে একসাথে নিয়ে আসারও চেষ্টা করছি। এই কাজগুলো করতে পারলে রোগীদের আরো ভালোভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া সম্ভব হতো।’ 

ঠিকানা
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট (NICVD)
শেরে বাংলা নগর ঢাকা
ফোন : ০২৮১২০০৩৩ (জরুরি বিভাগ)
Ex. 9122560-78