মাল্টিপল মায়ালোমা কী?
মাল্টিপল মায়ালোমা রক্তের এক ধরনের ক্যানসার। এটি অপ্রচলিত একটি রোগ। এই রোগের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৯১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. এ বি এম ইউনুস।
ডা. এ বি এম ইউনুস বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : মাল্টিপল মায়ালোমা রোগটি কী?
উত্তর : আসলে এই রোগ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা খুবই সীমিত। এটা অত্যন্ত অপ্রচলিত একটি রোগ। রোগটি অপ্রচলিত হলেও এটি অত্যন্ত ভয়াবহ একটি রোগ। অতীতে এর তেমন কোনো চিকিৎসা ছিল না। তবে ইদানীং এর বেশ কিছু ভালো চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয়েছে। তাই এই মাল্টিপল মায়ালোমা নামের ব্লাড ক্যানসার নিয়ে একজন রোগী এক যুগের বেশি বেঁচে থাকতে পারে।
মাল্টিপল মায়ালোমা হলো একটি ব্লাড ক্যানসার। ব্লাড ক্যানসারের একটি ধরন। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য আমাদের শরীরে একটি অ্যান্টিবডি থাকতে হয়। এই অ্যান্টিবডি তৈরি করে প্লাজমাসেল নামক একটি শ্বেতকণিকা।
এই প্লাজমা সেল বা শ্বেতকণিকার যদি কোনো ক্যানসার হয়, তাহলে একে আমরা বলি প্লাজমা সেল ডিসক্রেসিয়া অথবা মাল্টিপল মায়ালোমা। এর প্রারম্ভিক অবস্থানটা অস্থি-মজ্জার ভেতরে। অস্থি-মজ্জার ভেতরে যে প্লাজমা সেল রয়েছে, সেই প্লাজমা সেলগুলো স্বাভাবিকভাবে বাড়বে, তার কার্যক্ষমতা থাকবে, ইমিউনিটি তৈরি করবে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তারা নিশ্চিত করবে। কিন্তু কোনো কারণে যদি এই প্লাজমা সেল ক্যানসারাস হয়ে যায়, তাহলে এর বৃদ্ধিটা হয়ে যাবে অটোনোমাস (স্বাধীন)। নিয়মিত এটি বাড়তে থাকবে।
বৃদ্ধি পেতে পেতে অস্থি-মজ্জার ভেতরে অন্যান্য যে কোষ রয়েছে, এগুলোকে হটিয়ে দিয়ে জায়গা দখল করে নেবে।
এতে অন্য কোষগুলোর ঘাটতি হবে। তার রক্তস্বল্পতা হবে, তার ঘন ঘন সংক্রমণ হবে। তার রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা হবে। এর একটি খারাপ দিক রয়েছে। যখন সে বাড়বে, তার হাড়গুলোকে গলিয়ে, ক্ষয় করে ওখানে জায়গা করে নেবে।
কাঠে অনেক সময় পোকা ধরে। আমরা খেয়াল করি, কাঠ কিছুদিন রেখে দিলে সেখান থেকে পাউডারের মতো কিছু পড়ছে। এর ভেতরে পোকা ছিদ্র করে পাউডার করে করে কাঠের গুঁড়া ফেলে দিচ্ছে। তেমনি হাড়ের ভেতর যখন মাল্টিপল মায়ালোমা হয়, তখন খেয়ে ফেলে। ফাঁকা ফাঁকা গর্তের সৃষ্টি হয়। আমরা যদি একটি এক্স-রে করি, এমনকি মাথারও যদি একটি এক্স-রে করা হয়, দেখা যায় স্কাল বোন। এই স্কাল বোনের ভেতর কালো কালো দাগ। এর মানে হলো এগুলো সে গর্ত করে ফেলেছে এবং সেখানে এই কোষগুলো বাসা বেঁধেছে। শরীরের নরম হাড়গুলোর ভেতর যখন সে বৃদ্ধি পাবে, তখন যে কারণে দৃঢ়তা থাকে, হাড়ে যে কর্টিলেজ, সে অংশটা একেবারে পাতলা হয়ে যায়। ডিমের খোসার মতো হয়ে যায়। দেখা গেল, সিঁড়ি দিয়ে উঠছে, একটু হয়তো পা পিছলে গেল, হাড় ভেঙে গেল বা এমনিতেও অনেক সময় ভেঙে যায়। আর আঘাত লাগলে তো কথাই নেই। এই হাড়গুলো একেবারেই ভঙ্গুর হয়ে যায় ডিমের খোসার মতো, তখন এগুলো ভেঙে যায়। এতে তার বিভিন্ন জায়গায় হাড়গুলোতে প্রচণ্ড রকম ব্যথা হয়।