মেনোপজ এবং হরমোনথেরাপি
একটি নির্দিষ্ট সময় পর নারীদের ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়াকেই মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি বলা হয়। প্রাকৃতিকভাবে ডিম্বাশয় বা ওভারির নিষ্ক্রিয়তার কারণেই এটা হয়ে থাকে। সাধারণত ৪২ থেকে ৬০ বছর বয়সের মাঝামাঝি সময়ে রজঃনিবৃত্তি হয়। দেশ, গোত্র ও আবহাওয়াভেদে এটার তারতম্য রয়েছে। তবে শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে ডিম্বাশয় অপসারণ, রেডিওথেরাপি বা জননগ্রস্থির অসুস্থতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেও এটা ঘটতে পারে।
রজঃনিবৃত্তির পর নারীদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। যেমন : গা জ্বালাপোড়া, অত্যধিক ঘাম, দুশ্চিন্তা, আবেগজনিত সমস্যা, অস্থিরতা, হাড়ের ব্যথা-বেদনা, যৌনকর্মে অক্ষমতা, ভ্যাজাইনায় প্রদাহ, প্রস্রাবের সমস্যা ইত্যাদি।
রজঃনিবৃত্তির পরে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে আলোকপাত করা যাক। এটি আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করার যথেষ্ট অবকাশ রাখে।
রজঃনিবৃত্তির পর মধ্যবয়সী বা ষাটের বেশি বয়সী নারীকে বলতে শোনা যায়, প্রস্রাব করার সময় বেশ ব্যথা পান, জ্বালাপোড়া করে, ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে প্রস্রাবের প্রদাহ বা ইনফেকশন হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে কালচার না করেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। সতর্কতার সঙ্গে সময় ধরে ওষুধগুলো খেলেও উপসর্গ থেকেই যাচ্ছে। এর কারণ, এ সমস্যা কিন্তু মোটেও প্রস্রাবের সংক্রমণজনিত নয়। অন্যভাবে দেখা যায়, কালচার করানো এটা বার্ধক্যজনিত সমস্যা। এটাকে মেনে নিতেই হবে। এ দুঃখজনক ঘটনার এখানেই পরিসমাপ্তি নয়। যাদের সর্বক্ষণ ফোঁটা ফোঁটা নিয়ন্ত্রণহীন প্রস্রাব নির্গত হয়, জীবন তাদের কাছে আরো দুর্বিষহ ও বিব্রবতকর হয়ে দাঁড়ায়।
তবে এ সমস্যার সমাধান রয়েছে। সামান্য কয়েক সপ্তাহের হরমোন চিকিৎসা দিয়ে বেশিরভাগ রোগীকেই সম্পূর্ণভাবে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। এ ধরনের হরমোন চিকিৎসা ব্যয় স্বল্প এবং নিয়মকানুনও সহজ।
রজঃনিবৃত্তির পর প্রস্রাবনালির নরম দেয়ালের রক্ত সঞ্চালন অপর্যাপ্ত হয়ে যায়। এর কারণে নরম দেয়ালটি শুকিয়ে যেতে থাকে। একটি বিশেষ হরমোনের ঘাটতি এ অবস্থার জন্য দায়ী। এই হরমোন বাইরে থেকে শরীরে প্রয়োগ করে প্রস্রাবনালির বাইরের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখাই মূল কথা। এ ধরনের হরমোন চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলেও উপকারের তুলনায় তা নগণ্য। বাংলাদেশেও চিকিৎসা বিদ্যমান। এ ব্যাপারে স্ত্রীরোগ কিংবা হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারেন।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ