মেরুদণ্ডের যক্ষ্মার কারণেও কোমরব্যথা হয়
কোমরব্যথা বেশ প্রচলিত সমস্যা। কোমরব্যথার বিভিন্ন কারণের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩১৯৬তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ইউসুফ আলী।
ডা. ইউসুফ আলী বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থোপেডিক বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কোন জায়গার ব্যথাকে কোমরব্যথা বলছেন? কী কী কারণে এই ব্যথা হয়?
উত্তর : বলা হয়ে থাকে, এমন কোনো মানুষ পাওয়া যাবে না, যে কখনো না কখনো কোমর ব্যথায় ভোগেনি। আমাদের সম্পূর্ণ যে জনগোষ্ঠী রয়েছে, এর ৮০ থেকে ৯০ ভাগ লোক সাধারণত কোমরব্যথায় ভুগে থাকে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এই কোমর ব্যথার ৮০ ভাগ চিকিৎসা ছাড়া, কিছু নিয়ম কানুন মেনে চললে এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
এই আলোচনার আগে আমার মনে হয়, আমরা যদি কোমর ব্যথার কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করি, সেটিই ভালো হয়। আপনি প্রশ্ন করেছেন কোমর কোন অংশকে বলা হয়। আমাদের পেটের পেছনের যে অংশটুকু, একে আমরা সাধারণত কোমর বলে থাকি। এখানে অনেকগুলো অস্থি থাকে, হাড় থাকে। এর ভিতরে পৃষ্ঠদেশের জয়েন্ট রয়েছে, প্যালভিস রয়েছে, স্পাইন রয়েছে। মূলত কোমরব্যথার কারণগুলোর ক্ষেত্রে এনাটোমিক্যাল ( দৈহিক গঠনতন্ত্র) দিক থেকে যদি চিন্তা করি, তাহলে স্পাইন ও এসআই জয়েন্ট থাকে। এসব কারণে সমস্যা হয়। এর সঙ্গে কিডনির কিছু বিষয় সম্পর্কযুক্ত থাকে। নারীদের জরায়ুর কিছু ব্যথা থাকে। প্রস্রাবে সংক্রমণ হলে সমস্যা হতে পারে, মুত্রথলিতে, মুত্রনালিতে সংক্রমণ হলে এ ধরনের ব্যথা হতে পারে।
বিস্তারিতভাবে যদি একে ভাগ করি, তাহলে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। কনজেনিটাল বা জন্মগত কিছু কারণ আর জন্মের পরের কিছু কারণ। জন্মগত কিছু ত্রুটি থাকতে পারে এর জন্য হয়। জন্মগতভাবে মেরুদণ্ডের হাড়ের পিছনের অংশ গঠনে যদি সমস্যা থাকে, তাহলে সমস্যা হতে পারে। আরো কিছু বিষয় যেমন হেমিভার্টিব্র থাকে, ব্লক ভার্টিব্রা থাকে- এই জিনিসগুলো হলো, জন্মগত কিছু ত্রুটি, যেগুলোর কারণে কোমরে ব্যথা হয়ে থাকে। এই ব্যথাগুলো হয়, এনাটোমিক্যাল অস্বাভাবিকতার জন্য।
প্রশ্ন : এই ত্রুটিগুলো সারিয়ে ফেললে কি রোগী স্বাভাবিক হয়ে যায়?
উত্তর : ত্রুটিগুলোকে যত তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা যায় এবং সে অনুযায়ী যদি ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে কোমরব্যথা ১০০ ভাগ প্রতিরোধ করা বা সারিয়ে তোলা সম্ভব। এটা হলো জন্মগত কিছু বিষয়।
জন্মের পরে যেসব কারণ রয়েছে, এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত যেই কারণ, সেটি হলো মেকানিক্যাল ব্যথা। সেটা হলো অঙ্গবিন্যাস। আমাদের বসার ত্রুটির কারণে, আমাদের চলাফেরার ত্রুটির কারণে, এই ব্যথাটা হয়। বিশেষ করে আমাদের এখন যে সেডেন্টারি জীবন চলে এসেছে বর্তমানে, সেটা হলো, আমরা কম্পিউটারে বসে থাকি, ফাইল নিয়ে বসে থাকি, দীর্ঘ সময় ধরে ডেস্কে কাজ করি, দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থায় বসে রয়েছি। অথবা যারা দাঁড়িয়ে কাজ করে, তারা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি। এই যে একটি অঙ্গ বিন্যাসে থাকার কারণে কোমরব্যথা হয়। অঙ্গ বিন্যাস ব্যবস্থাপনা করে শরীরের কিছু পেশি। যেমন, আমি হাত তুলছি। হাত তুলছে কিন্তু পেশি। মস্তিষ্ক থেকে নির্দেশ আসছে, পেশি কাজ করছে, হাত ওঠছে।
ধরুন, আমি এখন যে অঙ্গবিন্যাসে বসে রয়েছি, সেই অঙ্গ বিন্যাসটিও ঠিক করছে কিছু পেশি। এই পেশিগুলো যখন একটি অঙ্গবিন্যাস ব্যবস্থাপনা করার জন্য ধরে থাকে, তখন সেখানে শক্তভাব আসে। রক্তনালিগুলো চাপে থাকার জন্য সেখানে রক্ত চলাচল কমে যায়। কমে যাওয়ার জন্য কিছু পেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসকেমিক পরিবর্তন হয়। এসব কারণে দেখা যায় বেশিরভাগ লোকের ব্যথা হয়। সেই পেশিটা একসময় দুর্বল হয়ে পড়ে। এগুলো কিন্তু সবই প্রতিরোধযোগ্য।
ইদানীং আরেকটি বিষয় রয়েছে। যারা হুন্ডা চালায়, হুন্ডাতে যে অঙ্গ বিন্যাসে বসে, সেটি মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। দীর্ঘক্ষণ যারা গাড়ি চালায়, এগুলো সবই ম্যাকানিক্যাল পেইন।
জন্মের পরের সমস্যার ভেতরে রয়েছে কিছু সংক্রমণ। আমরা সাধারণত ভাবি ফুসফুসের যক্ষ্মা হয়। তবে এর বাইরেও যে যক্ষ্মা হয়, এটি কিন্তু সাধারণ মানুষ জানে না। তবে এ ছাড়া অস্টিওআর্টিকুলার টিউবার কলোসিস বা মেরুদণ্ডের যক্ষ্মার কারণে কোমরব্যথা করতে পারে। সারা বিশ্বের ভেতর আমাদের অঞ্চলেই বেশি মেরুদণ্ডের যক্ষ্মা।