হৃদরোগের সঙ্গে কিডনি রোগের সম্পর্ক কী?
হৃদরোগের সঙ্গে কিডনি রোগের একটি সম্পর্ক রয়েছে। হৃদরোগের সঙ্গে কিডনি রোগের সম্পর্কের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২১২তম পর্বে কথা বলেছেন অধ্যাপক ডা.এম এ সামাদ।
ডা.এম এ সামাদ বর্তমানে বিআরবি হাসপাতালের কিডনি রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : হৃদপিণ্ড আর কিডনির মধ্যে কি ধরনের রোগগুলোর সংযোগ রয়েছে?
উত্তর :দুটো অঙ্গের সঙ্গে সম্পর্কটা এতো ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, যেসব কারণে কিডনি রোগ হয়, দেখা যায় তার অনেক কারণেই হৃদরোগ হয়ে থাকে। জীবনযাপনের ধরনগুলো যদি স্বাস্থ্যকর না হয়, তাহলে যে কিডনি রোগগুলো হয়, সেগুলোর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় দেখা যায় হৃদরোগ হচ্ছে।
আবার যদি দেখা যায় কোনো কারণে কিডনি রোগ হয়েছে, যেমন দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ বা সিকেডি, সেটি যদি তিন নম্বর, চার নম্বর বা পাঁচ নম্বর ধাপে থাকে, তাহলে দেখা যায় যে এই কিডনি রোগের কারণে কিডনি বিকল হয়ে, যত লোক মারা যায়, এর চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা যায় এই সুপ্ত কিডনি রোগ থাকার জন্য। এটি হৃদরোগকে আরো অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়।
আবার দেখা যায় হৃদরোগের কারণে কিডনি রোগ হচ্ছে।একে বলা হয় কার্ডিও রেনাল সিনড্রম। আমরা যদি প্রতিরোধ করতে চাই, দেখা যাবে যে যেই কারণে কিডনি রোগগুলো হয়, সেগুলো একটু বুঝে চললে আমাদের কিডনি ভালো থাকতে পারে। ঠিক সেগুলো যদি মেনে চলি আবার আমাদের হার্টও ভালো থাকতে পারে। সেই জন্য এই দুটোর ক্ষেত্রে বলা হয় একটির সঙ্গে আরেকটি ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।
প্রশ্ন : সাধারণত প্রচলিতভাবে কোন কোন রোগগুলো উভয় রোগীর ওপর প্রভাব বিস্তার করে?
উত্তর : যেমন ধরুন, উচ্চ রক্তচাপ। এগুলো খুবই প্রচলিত। উচ্চ রক্তচাপের কারণে দেখা যায় যে কিডনি বিকল হচ্ছে। আবার হার্ট যে আক্রান্ত হচ্ছে বা হৃদরোগ যে হচ্ছে এর প্রধান কারণ হলো উচ্চ রক্তচাপ।
আরেকটি হলো ডায়াবেটিস। পৃথিবীর সব দেশে প্রধান কিডনি রোগের কারণ হলো ডায়াবেটিস। আবার দেখা যায়, এই ডায়াবেটিসের কারণে করনারি আর্টারি আক্রান্ত হয়ে আবার হৃদরোগ হচ্ছে। এটি খুব প্রচলিত হৃদরোগের জন্য।
তৃতীয় হলো ধূমপান। আমরা যেমন বলি,এটি সরাসরি হৃদরোগ করছে আবার ক্যানসার করছে। ঠিক তখনই দেখা যায়, এই ধূমপান সরাসরি কিডনিকে আক্রমণ করছে। এরপর ধরুন, আমাদের অতি ওজন। এর সঙ্গে কিডনি রোগ সরাসরি জড়িত। তেমনি দেখা যায় যে অতি ওজনের সঙ্গে হৃদরোগ জড়িত। যদি কোলেস্টেরলের কথা বলি, কোলেস্টেরল যেমন অতিরিক্ত থাকলে হার্টের রোগ হয়, তেমনি এই অতিরিক্ত কোলেস্টেরল কিডনির যেই রক্তনালীগুলো রয়েছে, সেগুলোতে জমে জমে নালী সরু করে দিয়ে নালী বিকল করে দিচ্ছে।
আমরা যদি কম হাঁটি, অলস জীবন যাপন করি, তাহলে আমাদের হৃদরোগ হচ্ছে। এটা ডায়াবেটিস করে, উচ্চ রক্তচাপে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস কিন্তু সরাসরি হৃদরোগ করছে, সরাসরি কিডনি রোগ বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এর পর খাবার অভ্যাস। আমরা যদি এমন খাবার খাই যেগুলোতে কোলেস্টেরল রয়েছে, যেগুলোতে অতিরিক্ত তেল, প্রাণীজ তেল রয়েছে, অথবা পরিমাণেও যদি খুব বেশি খাই, ওজন যদি আমাদের বেড়ে যায়, এই ওজন বাড়ার সঙ্গে, এই খাওয়ার অভ্যাসের সঙ্গে সরাসরি কিডনি রোগ ও ওজন দুটোই সম্পৃক্ত।
কাজেই এই দুটোর বিষয়ে যদি আমরা সচেতন হতে পারি, একসঙ্গে আমাদের মূল্যবান দুটো অঙ্গ হার্ট ও কিডনি রক্ষা করতে পারবো।
আমরা যদি স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করি, তাহলে সবগুলো নন কমিউনিকেবল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
প্রশ্ন : কিডনি রোগ হলে কি হার্টের রোগের ঝুঁকি বেশি? বা হৃদরোগ থাকলে তার কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি ?
উত্তর : কারো যদি ধরুন, বয়স পঞ্চাশের ওপর যায়, তাদের হার্টের রোগের ঝুঁকি বেশি।যাদের মেনোপজ হয়ে যায় বেশি তাদেরও হৃদরোগ হওয়ার হার বেশি।
যেকোনো কারণে হোক না কেন যদি হার্ট ফেইলিউর হয়, তাহলে এই হার্ট ফেইলিউরের কারণে কিডনিতে যে রক্ত প্রবাহিত হয়,সেখানে একটা বৈষম্য ঘটে। সেই বৈষম্যের কারণে দেখা যায় কিডনি প্রভাবিত হয়। দেখা যায়, এই কিডনি ক্ষতি করতে পারে। ঠিক তেমনই যেকোনো কারণে যদি কিডনি আক্রান্ত হয়, সেটা যদি তিন নম্বর, চার নম্বর, পাঁচ নম্বর পর্যায়ে হয়, সেখানে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকগুণে বাড়িয়ে দেয়।