কিডনি স্ক্রিনিং কতদিন পরপর করাবেন?
সাধারণত কিডনি রোগ প্রাথমিক অবস্থায় তেমনভাবে ধরা পড়ে না। আর তাই প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং বা পরীক্ষা জরুরি। কিডনির স্ক্রিনিংয়ের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২১৭তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. শামীম আহমেদ।
ডা. শামীম আহমেদ জাতীয় কিডনি ইনস্টিটিউটে নেফ্রোলজি বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ও অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
প্রশ্ন : একজন সুস্থ মানুষ এই স্ক্রিনিং কত দিন পরপর করাবেন?
উত্তর : প্রথম কথা হলো যাদের অসুখ রয়েছে, তাদের করতে হবে। ১৭ থেকে ১৮ ভাগ হয়তো আপনার রক্তের চাপ রয়েছে। এর মধ্যে ১৫ ভাগ জানে না তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে কি না। রক্তের প্রেশার রয়েছে ১৭ থেকে ১৮ ভাগ। এর মধ্যে ৫০ ভাগ জানে না তার রক্তের চাপ রয়েছে। প্রত্যেকটি স্তরে ফাঁক রয়েছে।
আমি মনে করি, আজকাল ব্লাড প্রেশার জানতে তো পয়সা লাগে না, যেকোনো একজন সিস্টার বা ডাক্তার ব্লাড প্রেশার দেখে দেবে। ইউরিন পরীক্ষা করতে এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকা লাগে। একটা ব্লাড সুগার করতে ৬০ থেকে ৭০ টাকা লাগে। ৩০০ টাকা খরচ করলে প্রত্যেকটা মানুষ রুটিন চেকআপগুলো করতে পারে। এর জন্য শহরে আসতে হবে না। গ্রামে উপজেলায় করতে পারবে এবং সাবসেন্টারে করতে পারবে। কিচ্ছু তো নয়। একটা ইউরিন টেস্ট, আর একটি রক্তের পরীক্ষা, আর একটি রক্তের প্রেশার মাপা দরকার। আর সে যদি ফুলে যায় বা তার প্রেশার থাকে, তাহলে সে চিকিৎসকের কাছে গেল বা উপজেলায় গেল, স্ক্রিনিং হয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে যাবে। এই প্রাথমিক পর্যায় থেকে স্বাস্থ্যসেবাগুলো করে আসা উচিত। তাহলে আমরা স্ক্রিনিং করতে পারলে, প্রাথমিক অবস্থায় ধরতে পারলে ভালো।
নেফ্রাইটিস প্রথম ছিল, তবে আজকাল নেফ্রাইটিস হচ্ছে না। যেমন : একটি ত্বকের ইনফেকশন, গলায় ইনফেকশন। এর থেকে গ্লুমেরুলো নেফ্রাইটিস হতে পারে। আমরা এখন গলায় ব্যথা হলে একটি অ্যান্টিবায়োটিক খাই, ত্বকের সমস্যা হলে ডাক্তার দেখাই। তাহলে নেফ্রাইটিস হচ্ছে না। তাহলে এই রোগটা সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেল। কোনো অসুবিধা নেই। ডায়াবেটিস যেটি আমরা বলি, সেটি যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করি, একটি ডায়াবেটিস রোগী থেকে ডায়ালাইসিস স্টেজে যেতে ২৫ থেকে ৩০ বছর সময় লাগে। আপনি যদি এটিকে ধীর করে দেন, প্রত্যেক স্তরে স্তরে যদি ধীর করে দেন, তাহলে ৬০ থেকে ৭০ বছর তো এমনিতেই চলে যাবে। আমরা ৭০ থেকে ৮০ বছর বাঁচলে তো পরে আর অসুবিধা হবে না। এই জন্য আমার মনে হয় প্রেশার, ডায়াবেটিস এগুলোতে সচেতন থাকতে হবে। তখন কী করতে হবে, সেটি জানতে হবে। ৮০ বা ৯০ ভাগ কিডনি যখন অকেজো হয়ে যায়, তখন কিন্তু উপসর্গ থাকে না। সেই জন্য একে বলে নীরব ঘাতক।
হঠাৎ করে দেখা গেল রোগী এসে বললেন, ‘স্যার আমার একটু খারাপ লাগছে’। আমি ব্লাড প্রেশার দেখতে গেলাম। দেখলাম, অনেক ব্লাড প্রেশার। আমি রক্ত পরীক্ষা করলাম, ক্রিয়েটিনিন চার থেকে পাঁচ হয়ে গেল। কী হলো? আমার একটু রক্ত শূন্যতা। আমি যেটি বলি অনেক কারণেই, কিন্তু বমি হচ্ছে। সেটা গ্যাসট্রিক থেকে শুরু করেন, পলিসিসট্রাইটিক থেকে শুরু করেন, অ্যাপেনডিসাইটিস বলেন, টিউমার বলেন, যেটিই বলেন, ওষুধ বলেন, কিন্তু বমির সঙ্গে যদি উচ্চ রক্তচাপ থাকে, আর তার সঙ্গে যদি রক্তশূন্যতা থাকে, এই তিনটি জিনিস যদি থাকে অবশ্যই ত্বকের ক্ষতি হবে। একটু সচেতন থাকলে, যেই রোগী তার কিন্তু পয়সাও কম লাগবে।
আপনি জানেন, আমি ১০ ভাগ কিডনি রোগীর সেবা দিতে পারছি না। একটি লোকের যদি ডায়ালাইসিসের ওপর বাঁচতে হয়, তাহলে অনেক টাকা লাগে। ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে টাকা লাগে। সবার পক্ষে সম্ভব নয়। শুধু একক নয়, রাষ্ট্রের পক্ষেও সম্ভব নয়। সেই ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিরোধের দিকে নজর দিতে হবে। প্রতিরোধ ও স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম।