বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের চিকিৎসায় করণীয়
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2018/10/31/photo-1540988084.jpg)
কখনো কখনো মন অতিরিক্ত প্রফুল্ল থাকা, আবার কখনো কখনো একেবারে বিষণ্ণ হয়ে পড়া বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার রোগের লক্ষণ। মানসিক রোগ বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের চিকিৎসার বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৪২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস।
ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস বর্তমানে বিআরবি হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : এই ক্ষেত্রে কী ধরনের চিকিৎসা রয়েছে?
উত্তর : আসলে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার হলো জেনেটিক বা জিনগত একটি রোগ। এটি আসলে আমরা আগের থেকেই জানি না যে কারো বাইপোলার আসবে কি না। সাধারণত ২০ বা ২২ বছরের দিকে বাইপোলারের লক্ষণগুলো শুরু হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাই শুরু হয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিতেও শুরু হতে পারে। ওই যে বেশি বেশি কথা বলা, বেশি বেশি হাসা, বেশি বেশি খরচপাতি করা- এগুলো শুরু করে। তবে এগুলো কিন্তু অল্পদিনের জন্য থাকে। অনেক ক্ষেত্রে কিন্তু পরিবারের লোকেরা গুরুত্ব দেয় না। তার লেখা পড়ার সমস্যাগুলো শুরু হয়।
এখানে ওষুধের গুরুত্ব খুব বেশি। এটি আপাতত রোগকে কমাবে এবং প্রতিরোধেও কাজ করবে। ওষুধ দিলে খুব দ্রুত উন্নতির দিকে চলে যায়। যারা খুব সৃজনশীল লোক, তাদের মধ্যে বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের বিষয়টি অনেক দেখি। অনেক বড় বড় অভিনেতার মধ্যে সমস্যাটি রয়েছে।
প্রশ্ন : এরা অনেক বেশি স্বপ্নের জগতে থাকে বেশি। এই জন্য এমন?
উত্তর : সৃজনশীলতা যাদের বেশি, তাদের মধ্যে কেন যেন আবেগ প্রবণতা বেশি। তাদের মধ্যেই এই বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার হওয়ার আশঙ্কা বেশি। আমরা এমন কোনো নির্দিষ্ট লক্ষণ বলতে পারি না। তবে জেনেটিক বিষয়টি বড় কারণ। তবে পরিবেশটা একটি ভূমিকা রাখতে পারে, যখন তার মন খারাপ হয় বা মানসিক চাপে পড়ে বা বিভিন্ন ধরনের পারিপার্শ্বিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যায়, এই ক্ষেত্রে বাইপোলার ডিপ্রেসিভ বিষয়গুলো আসার আশঙ্কা বাড়তে পারে।
প্রশ্ন : এর জন্য কি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার দরকার হয়? অথবা এটা একবার অ্যাটাক হলো, আবারও হওয়ার ঝুঁকি তার বেশি কি না?
উত্তর : এটি আসলে জিনগত রোগ। যাদের বংশগত এসব সমস্যা থাকে, তাদের আসলে সারা জীবনই থাকে। এখানে তাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে হবে। আমরা একটি ওষুধ দেই। যখন রোগী অসুস্থ থাকে তখন অসুখের পরিমাণটা বেশি থাকে। যখন রোগীটা ভালো হয়ে যায়, তখন প্রতিরোধমূলক কাজে ব্যবস্থাপনা ডোজ অনুসরণ করি। খুব অল্প ডোজে ওষুধটা দিলে দেখা যায় ভবিষতে এই রোগটা আসবে না। দেখা যাবে তার কাজের ক্ষেত্রে সে খুব ভালো মতো কাজ করতে পারছে। এটি জেনেটিক ডিজঅর্ডার। কখন রোগীর লক্ষণ আসবে আমি কিছুই বলতে পারব না। তবে সারা জীবন ওষুধ খেতে হবে। খুব সামান্য ডোজে।
প্রশ্ন : অনেকে ওষুধ খেতে চান না। ভাবেন, ওষুধ খেলে আর সেই জায়গা থেকে ফিরে আসতে পারবে না। এই বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?
উত্তর : বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের রোগী যখন বিষণ্ণতায় থাকে, সেই ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপির কিছু ভূমিকা রয়েছে। একটু সাহায্য করা, বিভিন্ন মানসিক চাপগুলো সে কীভাবে মোকাবিলা করবে সেগুলো শিখিয়ে দেওয়া।
আসলে রোগীর মস্তিষ্কের কিছু ক্যামিক্যালের ভারসাম্যহীনতা হয়। যেখানে ডোপামিন, সেরেটোনিন, অনেক রাসায়নিক পদার্থগুলো ভারসাম্যহীনতা হয়। অনেক ক্ষেত্রে বেড়ে যায়, অনেক ক্ষেত্রে কমে যায়। এগুলো সাধারণত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়। আমাদের শরীর চেষ্টা করে, শরীর চায় এই জিনিসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে। দেখা যাবে দু-একদিনের জন্য আমাদের মনটা বেশি বেশি উৎফুল্ল লাগতেই পারে। কিন্তু এটি যদি চারদিনের বেশি হয়, আমরা একে অস্বাভাবিকতা বলি। আমরা এটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আমাদের মেডিকেশন দিয়ে ভূমিকা নিতে হবে। কেউ যদি কথা বলে, কথার মাধ্যমে রাসায়নিক পদার্থের ভারসাম্যহীনতা ঠিক করার কোনো ওষুধ কিন্তু আবিষ্কৃত হয়নি। কথার মাধ্যমে বিষণ্ণতার পর্যায়ে আপনাকে কিছু সহযোগিতা করা যাবে, তবে ওষুধটা কম দিলেও দিতে হবে।
বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের রোগীরা যখন বিষণ্ণতায় থাকে, তখন সে লেখাপড়া করতে পারে না। যদি সে এখানে সহযোগী ভূমিকা পালন না করে বলে যে তাকে লেখাপড়া করতে হবে, সে কিন্তু করতে পারবে না। না হলে তাকে স্কুল থেকে বের করে দিতে হবে। তাহলে তো তাকে পারিপার্শ্বিক সহযোগিতাটা করা হলো না। সেই ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপির অবশ্যই একটি ভূমিকা রয়েছে। কিন্তু সাইকোথেরাপির মাধ্যমে বাইপোলারে কখনোই সুস্থ হওয়া সম্ভব নয়।
প্রশ্ন : সাধারণত সে মাদকাসক্ত হতে পারে বা আত্মহত্যা করার প্রবণতা তার হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে পরিবারের কী ভূমিকা রয়েছে?
উত্তর : সাধারণত দেখা যায় বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার রোগীর ক্ষেত্রে মন ভালো থাকার তুলনায়, মন খারাপের পর্বটা অনেক বেশি সময় ধরে থাকে। তবে মন খারাপ যখন থাকে, মানুষজন কিন্তু বুঝতে পারে না। এখনকার অভিভাবকরা কিন্তু বাচ্চাদের বেশি সময় দিতে পারে না। বাচ্চাদের কিন্তু বিরক্তিবোধ, রাগ বা সহ্য ক্ষমতা কমে গেছে, অল্পতেই রেগে যাচ্ছে, অস্থির হয়ে যাচ্ছে। রাতে ঘুম হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে অনেক সময় তারা বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলো বুঝতে পারে। অভিভাবকরা যদি ঠিকমতো একটু খেয়াল করে, আমার ছেলেমেয়ে ঠিকমতো ঘুমাচ্ছে কি না, সে পড়ালেখায় মনোযোগ দিতে পারছে কি না,তার মন- মেজাজটা কেমন রয়েছে, তাহলে আমার মনে হয় অভিভাবকরা প্রথম থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে এগুলো বের করে ফেলতে পারবেন। তখন চিকিৎসকের কাছে গেলে খুব অল্প সময়ে তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলতে পারবেন।