আত্মহত্যার কারণ কী?

Looks like you've blocked notifications!
আত্মহত্যার কারণের বিষয়ে কথা বলছেন ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস। ছবি : এনটিভি

আত্মহত্যার নাম শুনলেই যেন আতঙ্ক লাগে আমাদের। সাধারণত একজন মানুষ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে তার নিজের জীবনকে। তবুও কেন একজন মানুষ আত্মহননের দিকে ধাবিত হয়?

আত্মহত্যার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২২৯তম পর্বে কথা বলেছেন  ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : বাংলাদেশে আত্মহত্যার প্রবণতা কেমন?

উত্তর : আত্মহত্যার  প্রবণতা অনেক বেশি বাড়ছে। তরুণদের মধ্যে। তরুণরা বা বয়ঃসন্ধিকালের ছেলে মেয়েদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা তুলনামূলক ভাবে অনেক । আবার বয়স বাড়ার পরও ৫০ বা ৬০ বছর হওয়ার পরও মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি, ব্যথার রোগী বা ক্যানসারের রোগী অনেক সময় আত্মহত্যা করে বসেন।

প্রশ্ন : আত্মহত্যার পেছনে কারণ কী?

উত্তর : তরুণদের বয়সটাকে আমরা খুব বেশি সতর্কমূলক বয়স বলে থাকি। ওই বয়সটা খুব আবেগপ্রবণ বয়স। ওই বয়সের মানুষরা বিষণ্ণতায় ভুগে থাকে। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় হরমোনগত কিছু পরিবর্তন আমাদের শরীরে পরিলক্ষিত হয়। এ থেকে তাদের মধ্যে মন খারাপের উপসর্গগুলো অনেক সময় আসে। এই ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বাচ্চার তার মা-বাবার সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। তারা একটু আলদা হয়ে থাকতে পছন্দ করে, তারা প্রাইভেসি চায়। অনেক সময় দেখা যায় বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগটা বাড়ে। অতীতে হয়তো বাড়েনি। এই বয়স থেকে আস্তে আস্তে তারা বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে থাকে, ঘুরতে যায়, খেলতে যায়। অনেক সময় মা-বাবারা এতে বাধা দেয়। দেখা যায় পরিবারের সঙ্গে তাদের একটি অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়। মা-বাবা অনেক সময় ‘না’ বলেন। কিন্তু যুক্তিটা বলেন না বা বুঝিয়ে বলেন না। এ সময় তাদের মধ্যে একটি আবেগীয় পরিবর্তন কাজ করে। দিনকে দিন বিষয়টি দানা বাধতে থাকে। এক সময় এটি খারাপের দিকে মোড় নেয়।

প্রশ্ন : যারা আত্মহত্যা করে তাদের মনস্তত্বিক অবস্থাটা কী? কেন তারা আত্মহত্যার দিকে যায়?

উত্তর : শেষ আমাদের যে এইচএসসি পরীক্ষা হলো, এরপর কিন্তু একটি বড় সংখ্যক আত্মহত্যার উদ্যোগ নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে এসেছে। এর মধ্যে দেখা গেছে ৩৫ জন মারাই গেছে। ফেল যে করেছে সেটি নয়, কিন্তু প্রত্যাশিত ফলাফল হয়নি। আমরা যেটি দেখি তাদের ক্ষেত্রে, তাদের ব্যক্তিত্বের অংশটা অনেকবেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তারা অনেক কিছু মেনে নিতে পারে না। তারা ভাবে, তারা যেভাবে চিন্তা করছে, সেই হিসেবেই তাদের পৃথিবীটা চলবে।

সে মনে করে সে আর তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে না। পরে দেখা যায় যে আত্মহননের দিকে চলে যায়। পরে দেখা যায় পৃথিবীর জন্য আমি বোঝা হয়ে গেছি। আমাকে হয়তো সবাই ছোট করে দেখছে। বন্ধু-বান্ধবরা ভালো জায়গায় চলে গেছে। আমি হয়তো তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে গেছি। এই জিনিসটি আমরা মনে করি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সব ক্ষেত্রে এই প্রতিযোগিতা। অনেক সময় স্কুল থেকেও এই প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে তাদের ঠেলে দেওয়া হয়। এসব বিষয় পরে তাদের এই আচরণগুলো করতে বাধ্য করে।