আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকা কেমন হবে?

Looks like you've blocked notifications!
আত্মহত্যা প্রতিরোধে পরিবারের ভূমিকার বিষয়ে কথা বলছেন ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস। ছবি : এনটিভি

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিভিন্ন মানসিক সমস্যা থেকে একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। এর মধ্যে রয়েছে বিষণ্ণতা, বাইপোলার মুড ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়া, ব্যক্তিত্বের সমস্যা ইত্যাদি।

একজন ব্যক্তি যেন আত্মহত্যাপ্রবণ না হয়ে ওঠে সেই জন্য পরিবারের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। এ বিয়য়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২২৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. চিরঞ্জীব বিশ্বাস। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

প্রশ্ন : এই ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন বা কাছের লোকজনের প্রতি আপনার উপদেশ কী? সন্তানের আচরণের ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিবর্তন দেখলে তাদের সতর্ক হওয়া উচিত হবে?

উত্তর : আমরা যেটি বলি যে ১০ জন যদি আত্মহত্যার চিন্তা করে, তাহলে একজন আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আর যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে তাদের মধ্যে ২৫ ভাগ কিন্তু মারা যায়। সাধারণত আমরা বলি মানসিক রোগই আসলে আত্মহত্যার জন্য দায়ী। ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, যারা আত্মহত্যা করেছে, তারা হয়তো কোনো না কোনো ক্ষেত্রে মানসিক রোগে ভুগছে।  

কেউ হয়তো মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছে। কেউ হয়তো বাইপোলার ডিজ অর্ডার নামে একটি রোগ রয়েছে, সেটিতে ভুগছে। কেউ হয়তো দেখা যাচ্ছে সিজোফ্রেনিয়া নামক রোগে ভুগছে। কেউ ব্যক্তিত্বের রোগে ভুগছে। অনেক ক্ষেত্রে মাদকটাও মন খারাপের ক্ষেত্রে কাজ করে।

পারিবারিক শিক্ষার একটি বিষয় রয়েছে। পরিবারও একটি বড় দায়িত্ব পালন করে, বাচ্চাদের সহ্য ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে। মা-বাবার মধ্যে যদি সহ্য ক্ষমতা কম থাকে বাচ্চাদের মধ্যেও সেটি চলে আসে। অনেক সময় পরিবারের লোকজনের মধ্যে আত্মহত্যা করার চেষ্টা থাকলে ব্যক্তিরও আত্মহত্যা করার প্রবণতা হতে পারে।

মা-বাবা খেয়াল করতে পারেন যে তার মন খারাপের ক্ষেত্রে একটি পরিবর্তন হচ্ছে। কখনো ভালো হয়ে যাচ্ছে খুব দ্রুত, আবার খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। অনেক বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে উঠছে। তারা কারো সঙ্গে কথা বলছে না। তাদের মনের কথাগুলো শেয়ার করছে না। তারা কারো সহযোগিতা নিতে পছন্দ করছে না। বা অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় পরিবারও সহযোগিতা করছে না।

এখন অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় মা-বাবা দুজনেই কর্মজীবী। এ কারণে মা-বাবা বাচ্চাকে সময় দিতে পারে না। অফিস থেকে আসার পর সময় দিয়ে দেখা যায় বাবা পাঁচ বা ১০ মিনিট সময় দেয়। সময়টা গুণগত সময় নয়। যেমন : বাচ্চাদের সঙ্গে বসে সে গল্প করে না। যেগুলো শিশুর অপছন্দের জায়গা সেগুলো নিয়ে কথা বলে। সেগুলো নিয়েই দেখা যায় মা-বাবা গল্প করতে আসে। এতে মা-বাবার সঙ্গে একটি দূরত্ব চলে আসে। মা-বাবার সঙ্গে কিন্তু বাচ্চারা শেয়ার করে না। বাচ্চারা ভাবে মা-বাবাকে যদি আমি সত্যি কথা বলি, তাহলে প্রতিক্রিয়া খারাপ হবে, আমাকে তুচ্ছ- তাচ্ছিল্য করবে।

অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারা বলে, মরে গেলেই মনে হয় ভালো হতো। পরীক্ষা কে আবিষ্কার করল? লেখাপড়া না করে অন্য কিছু করতে পারলে ভালো হতো? – এর মানে কিন্তু তারা শেষ জায়গায় চলে গেছে। তারা পড়ালেখাটা করতে পারছে না। তাই বাচ্চাদের সময় দেওয়াটা জরুরি। তাকে বোঝার চেষ্টা করতে হবে।