বাতজ্বরের কারণে যেসব সমস্যা হয়
অনেকেই বাতজ্বরে ভোগেন। বাতজ্বর থেকে বিভিন্ন সমস্যা হয়। বাতজ্বরের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. মো. লোকমান হোসেন। বর্তমানে তিনি ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে জেষ্ঠ্য পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বাতজ্বরজনিত সমস্যাগুলো কী?
উত্তর : বাতজ্বর এক ধরনের জ্বর। এটি গলা থেকে শুরু হয়। এখানে যে জিনিসগুলো জমা হয়, বের হয়, সেগুলো রক্তে চলে যায়। বাতজ্বরের যে জীবাণু এদের বিভিন্ন জায়গার জন্য ভীষণ আগ্রহ রয়েছে। এটি কী? ওরা প্রথমে হার্টে যদি যায়, হার্টের যে ভাল্ভ রয়েছে, সেখানে গিয়ে সে জমা হয়। সেখানে গিয়ে সে বাসা বাঁধে। আবার কিডনিতে চলে যায়। আবার পায়ে চলে যায়। আরথ্রাইটিস হয়, পা ফুলে যায়। সব কিছু মিলে এরা এভাবে দৌড়াদৌড়ি করে।
প্রশ্ন : হার্টের ক্ষেত্রে আপনারা কী কী করেন?
উত্তর : যারা এ রকম জ্বর নিয়ে আসে, মাইগ্রেডিং পলি আরথ্রাইটিস বলি। হার্টের কার্ডাইটিস হয়। শুরু থেকে যদি আমরা তাদের এটিকুয়েট ট্রিটমেন্ট দিতে পারি, তাহলে ওই জীবাণুগুলো হার্টের ভাল্ভের মধ্যে গিয়ে বাসা বাঁধতে পারে না।
প্রশ্ন : তাহলে চিকিৎসকের কাছে কখন আসা উচিত?
উত্তর : আমি সবসময় বলি, হৃদরোগের চিকিৎসা এবং ভাল্ভের চিকিৎসা, সবসময় অনেক অনেক ব্যয়বহুল। এটি যেন না লাগে সেই জন্য আমাদের পারিপার্শ্বিক সচেতনতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে আমার দেশে এখন শিক্ষিতের হার অনেক। এখন কিন্তু এই ধরনের সোর থ্রোট বা গলা ব্যথা অনেক কমে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। সবাই লেখাপড়া জানে। এখনকার মায়েরা কিন্তু তাদের বাচ্চাদের প্রতি অনেক অনেক যত্নশীল, যেটি আগে ছিল না। আমরা যেমন পাঁচ ভাই, তিন বোন। আমার মা কয়জনের যত্ন নেবেন? এখন কিন্তু দুটো সন্তান হলে সব মা-ই খুব উদ্বিগ্ন থাকে। জ্বর হলে চিকিৎসকের কাছে নিচ্ছে। ভালোভাবে চিকিৎসা দিচ্ছে। এই জন্য কিন্তু এই রোগের প্রবণতা আমাদের দেশে অনেক কমে গেছে। অত্যন্ত আশার কথা এটি।
প্রশ্ন : এরপরও যখন এই সমস্যাগুলো হয়ে যায়, প্রাথমিকভাবে আপনারা কী করেন?
উত্তর : এই ধরনের লক্ষণ যখন থাকে, তখন কার্ডিওলজিস্টের ফলোআপে থাকে। তারা পিরিয়ডিক্যালি এক্স-রে, ইকো করে, ফলোআপ করতে থাকে। যদি সে ব্যবস্থাপনা করে, চিকিৎসকের কথা যদি সে শোনে, এই অবস্থায় সে দীর্ঘদিন পারি দেবে। ভাল্ভের কাজ হচ্ছে একদিকে রক্ত যেতে দেওয়া, আরেকদিকে বন্ধ করা। এই রোগের জন্য দুটো সমস্যা হতে পারে। যেদিকে যায়, একে বন্ধ করে, একে আমরা বলি স্টেনোসিস। আবার যেটিকে আসতে দেয়, সেটি আবার বন্ধ করা, সেটি যদি আবার আসতে না পারে, আবার ফুলে যায়, একে আমরা বলি রিগারজিটেনেশন। একটি রোগীর এই বন্ধ হওয়া এবং ফেরত আসা, রিগারজিটেনেশন ও স্টেনোসিস দুটো নিয়েই আসতে পারে। দুটোই ভাল্ভের সমস্যা। সেই ক্ষেত্রে কার্ডিওলজিস্ট আর ফলোআপে রাখে না। তখন আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেয়। উন্নত দেশের সঙ্গে আমাদের দেশের ভাল্ভের চিকিৎসার কোনো পার্থক্য নেই।
প্রশ্ন : নির্দিষ্ট কোনো বয়স থেকে কি লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়?
উত্তর : এটি বয়োসন্ধিকাল থেকে শুরু হয়। যদি শুরুতে চিকিৎসা হয়, তাহলে তার এই লক্ষণই থাকবে না। আর যদি দ্রুত ওই চিকিৎসাটা না হয়, জীবাণুটা সুপ্ত অবস্থায় থাকে। যখনই সে সুযোগ পাবে, তখন কিন্তু সে আবার বাড়বে।
প্রশ্ন : এটিকুয়েট ট্রিটমেন্ট বলতে কী বোঝাচ্ছেন?
উত্তর : যখন জ্বর নির্ণয় হলো, তার জন্য দীর্ঘ মেয়াদে পেনিসিলিন খেতে হবে। বলা হয়েছে, পাঁচ বছর, না হলে ২৫ বছর পর্যন্ত।
যারা স্যাঁত স্যাঁতে বস্তিতে বাস করে, তাদের হওয়া আশঙ্কা থাকে। মায়েরা এখন অনেক সচেতন, তাই এই সমস্যা কমে গেছে।