পেটের যেসব রোগের চিকিৎসায় ল্যাপারোস্কোপি করা হয়
ল্যাপারোস্কোপি বর্তমানে প্রচলিত একটি সার্জারি। পেট না কেটে কেবল কয়েকটি ফুটো করে ক্যামেরার সাহায্যে এই সার্জারি করা হয়। অ্যাপেনডিসাইটিস, পিত্তথলির পাথর ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের অস্ত্রোপচারে ল্যাপারোস্কোপি এখন বেশ জনপ্রিয়।
পেটের কোন কোন রোগে ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করা হয়, এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৭১তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. এ এম শহীদুল্লাহ। বর্তমানে তিনি বিআরবি হাসপাতালের সার্জারি ও ল্যাপারোস্কোপি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : পেটে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে ল্যাপারোস্কোপি কী ভূমিকা পালন করে?
উত্তর : রোগীর পেট ফুটো করে রোগ নির্ণয় করা এবং চিকিৎসা করা, আগে কখনো এই পদ্ধতিটা ছিল না।
কিছু রোগের খুব দ্রুত চিকিৎসা করা যায়। যেমন : পারফুয়েশন অব দ্য ডিওডেনাম। এই রোগ যদি আমরা পেয়ে যাই, রোগীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি করে, যদি জেনারেল অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া যায়, এই ক্ষেত্রে আমরা দুটো বা তিনটি ছিদ্র দিয়ে সমস্যাটা ঠিক করে দিতে পারি। ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে এটি খুব সহজে করা যায়।
আবার পিত্তথলির পাথর নিয়ে, মারাত্মক ব্যথা নিয়ে আমাদের কাছে এলো, আমরা আলট্রাসনোগ্রাফি করে দেখলাম যে তার পিত্তথলিতে পাথর রয়েছে। ইচ্ছা করলে আমরা তিন দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচারে যেতে পারি। এটাও ছিদ্র করে করা যেতে পারে। এরপর আমরা যদি দেখি যে ব্লাস্ট হয়ে গেছে, পিত্তথলিটা ফেটে গেছে, সে ক্ষেত্রেও আমরা ফুটো করে চেষ্টা করতে পারি। তবে এই ক্ষেত্রে রোগীকে একটু বলে নিতে হবে যে ভাই অকার্যকর হলে কিন্তু আমি খুলে নেব, আপনার নিরাপত্তার জন্য। আমরা ল্যাপারোস্কোপি দিয়ে এটি করতে পারব।
এরপর অনেক সময় দেখা যায়, কৃমি ঢুকে যায় পিত্তথলির মধ্যে। এই রোগীগুলো খুব যন্ত্রণা দেয়। সেই ক্ষেত্রে পিত্তথলিটা ফেলে দেওয়াই ভালো। তা না হলে সেটি থেকে পাথর হয়ে যেতে পারে। তখন ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে পিত্তথলিটা আমরা ফেলে দিয়ে রোগীকে রক্ষা করতে পারি।
মধ্য পেটে যদি নাড়ি প্যাঁচ খায়, সে ক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি? সে ক্ষেত্রে আমরা প্রথমে দেখে নিলাম, ল্যাপারোস্কোপি করে যে তার নাড়ি প্যাঁচ খেয়ে গেছে। প্যাঁচ যদি ছুটিয়ে দিতে পারি, তাহলে ভালো। আর যদি না পারি যে এমন একটি ক্ষেত্র আসল, যে পচে গেল নাড়িটা, সেটি আমরা অ্যাম্বিলিকাস দিয়ে বের করে, আবার ঠিক করে ঢুকিয়ে দিতে পারি। এই পুরো প্রক্রিয়াটা ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে করা যায়। আমাদের আর কিছু কাটাকাটি লাগল না। এত বড় একটি কাটা থেকে আমরা বাঁচতে পারলাম।
একিউট অ্যাপেনডিসাইটিকস, যেটি খুব প্রচলিত, সেটি ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে করা যায়। এটি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে করা যায়।
প্রশ্ন : ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির পর দৈনন্দিন জীবনে ফিরে আসতে কতটুকু সময় লাগে?
উত্তর : এক থেকে দুই দিন। ওভারিয়ান সিস্ট যদি পাক খেয়ে যায়, তাও আমরা বের করতে পারি। আরেকটি বিষয় হলো ইউরেটারি কলিক। আমরা অনেক সময় দেখি যে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে রোগী আসছে। এসব জরুরি অবস্থাগুলোতে আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার পাথরটা বের করতে পারি ল্যাপারোস্কোপির মাধ্যমে।