টানা গ্যাসট্রিকের ওষুধ সেবনে হতে পারে রক্তস্বল্পতা
রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ আয়রনের ঘাটতি। এ ছাড়া অন্যান্য কারণে রক্তস্বল্পতা হতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাসট্রিকের ওষুধ সেবন করা।
রক্তস্বল্পতার বিভিন্ন কারণের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৮২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. সালমা আফরোজ। বর্তমানে তিনি বারডেম জেনারেল হসপিটালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন ও ক্লিনিক্যাল হেমাটোলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কী কী কারণে রক্তস্বল্পতা হয়?
উত্তর : রক্তস্বল্পতার প্রধান কারণ হলো আয়রনের অভাব। এই আয়রন কম হয়ে যাওয়ার জন্য আবার অনেক কারণ দায়ী। একটি বাচ্চা যখন বড় হচ্ছে, মানুষ যখন বড় হচ্ছে, তখন আগে যতটুকু আয়রন লাগত, এর চেয়ে অনেক বেশি দরকার হয়। কিন্তু খাচ্ছে তো সে আগের মতোই।
আবার পুষ্টির ঘাটতির কারণেও রক্তস্বল্পতা হয়। আমাদের দেশের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক সময় এত খারাপ থাকে যে আমরা হয়তো পরিমিত আয়রন খেতে পারি না।
আয়রনেরও আবার প্রকারভেদ রয়েছে। শাকে আপনি এক ধরনের আয়রন পাবেন। আর মাংসে আপনি আরেক ধরনের আয়রন পাবেন। মাংসের আয়রনটা খুব বেশি কাজে লাগে। তবে সবার পক্ষে মাছ, মাংস বা কলিজা তো খাওয়া সম্ভব নয়।
আমাদের দেশে, তৃতীয় বিশ্বে রক্তস্বল্পতার একটি কারণ হলো অপুষ্টি। আমরা দেখি বাচ্চারা খুব ফাস্টফুড খাচ্ছে। আবার অনেকে ডায়েট করছে, তবে হয়তো জানেই না কী খাচ্ছে, না খাচ্ছে বা কী বাদ দিচ্ছে। কোনো নিয়ম মেনে চলছে না। সঠিক দিকনির্দেশনায় ডায়েট করছে না।
আবার নারীদের কিছু কারণ থাকে। একদম ছোট বাচ্চারা দুধের ওপর মানুষ হয়। অনেকে দুধও খাওয়াতে পারে না। বার্লি জ্বাল দিয়ে খাওয়ায় বা চালের গুঁড়া খাওয়ায়। সেগুলোতে একদমই আয়রন থাকে না। গরুর দুধ থেকে পেতে পারে আয়রন। তবে একটি বয়সের পর থেকে আয়রনসমৃদ্ধ কিছু খাবার খেতে হবে। কারণ, তখন স্বল্পতা রয়েই যায়।
আর আজকাল মায়েদের খুব ব্যস্ত থাকতে হয়। যাঁরা চাকরিজীবী, তাঁরা অফিসে ব্যস্ত থাকেন। আবার বাসায় যে গৃহিণী মা থাকে, তাকেও বাচ্চা নিয়ে ১৪ জায়গায় দৌড়াতে হয়। এর জন্য বাচ্চাকে যে খুব সুন্দর করে খাওয়ানো, সেটি করা যায় না। এসব কারণে আয়রনের ঘাটতি হয়।
আর মেয়েদের বেশি হয়। কারণ, মেয়েদের একদিকে ঋতুস্রাব হচ্ছে প্রতি মাসে। আর আমাদের দেশের মেয়েরা, বিশেষ করে সবার খাওয়ার পরেই খায়। নিজের প্রতি একেবারেই যত্নশীল থাকে না। এ ছাড়া বিভিন্ন অসুখ রয়েছে যার জন্য শরীরে রক্ত তৈরিতে অসুবিধা হয়।
প্রশ্ন : আয়রনের ঘাটতি জনিত রক্তস্বল্পতা ছাড়া কি আর কোনো রক্তস্বল্পতা রয়েছে?
উত্তর : ফলিক এসিড বলে আরেকটি ভিটামিন রয়েছে, বি১২ রয়েছে, এগুলোরও ঘাটতি পাচ্ছি। জিংকের ঘাটতি পাচ্ছি। ফলিক এসিড যেমন মাংসে থাকে, লিভারে থাকে আবার সবুজ শাকসবজিতেও থাকে। সবুজ শাকসবজি আমরা রান্না করতে করতে এমন অবস্থা করি যে এর ৯০ ভাগ পুষ্টিই নষ্ট হয়ে যায়। তখন যেটা খাই, পুষ্টিটা আমাদের ঠিকমতো কাজে লাগে না। একদম ভাজাপোড়া করে রান্না করার দরকার নেই। আমরা তো খুব তেল, মসলা দিয়ে রান্না করি, তখন খাবারের আর তেমন পুষ্টি থাকে না।
খাবারের একটি বিশেষ বিষয় হলো সব রকমের খাবার আপনাকে খেতে হবে। এভাবে যদি আমরা চলি, আর আয়রনজনিত খাবারও যদি খাই, তাহলে সব ধরনের রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা পাব।
আরেকটি বিষয় একটু বলি, যখন সুযোগ পেলাম, অ্যান্টিগ্যাসট্রিকের ওষুধ বেশি দিন খেলে রক্তস্বল্পতা হতে পারে। অনেক রোগীই যত্রতত্র ওষুধ খাচ্ছেন চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে। হয়তো ২০/২৫ বছর ধরে টানা খাচ্ছেন। আবার অনেকে চিকিৎসককে গিয়ে শুরুতেই বলছেন, ‘আমার গ্যাস।’ অনেক চিকিৎসক হয়তো রোগীদের কাছ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য দু-এক সময় ওষুধ দিয়েও দিচ্ছেন।
যখন রোগীর রক্তস্বল্পতা হবে, তখন অবশ্যই খুঁজে বের করা দরকার যে কী কারণে এটি হচ্ছে।