অ্যাজমার চিকিৎসা কী?
শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকে চাপ চাপ অনুভূতি হওয়া ইত্যাদি অ্যাজমার লক্ষণ। অ্যাজমার চিকিৎসায় করণীয় বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৯০তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।
ডা. মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বর্তমানে বারডেম জেনারেল হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : অ্যাজমার চিকিৎসায় করণীয় কী?
উত্তর : আসলে অ্যাজমা একটি চিকিৎসাযোগ্য এবং নিয়ন্ত্রণযোগ্য রোগ। অ্যাজমা ছিল এ রকম অনেক ব্যক্তি অলিম্পিক মেডেল জিতেছে। যদি অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাহলে অলিম্পিক মেডেলও জেতা যায়। অ্যাজমাটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যদি আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নেন।
দুই ধরনের ইনহেলার পাওয়া যায়। একটি হলো প্রতিরোধকারী, আরেকটি হলো সমস্যাটা কমিয়ে দেয়। তো মানুষের যখন কাশি হয়, তখন কিন্তু রিলিভার বা সমস্যাটা কমিয়ে দেয়, এমন ইনহেলার ব্যবহার করতে হয়। এটা স্বাভাবিকভাবে তার কষ্ট কমিয়ে দেবে। সে যেহেতু মনে করে কষ্ট কমে গেছে, তাই বার বার ব্যবহার করে। তবে যেই কারণে অ্যাজমা হচ্ছে, প্রতিরোধ করে এমন ইনহেলার ব্যবহার করলে শ্বাসনালীর যে ফোলাটা রয়েছে, সেটি কমিয়ে দেয়। ফোলা কমে গেলে তার কষ্ট কমে যায়।
অ্যাজমার চিকিৎসাকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করব। অ্যাজমা হলো একটি শ্বাসনালির সমস্যা। শ্বাসনালি ফুলে যায়। ফুলে গেলে কাশি, শ্বাসকষ্ট হয়। চিকিৎসার মূল উদ্দেশ্য থাকে ফোলা কমানোর ওষুধ দেওয়া। স্টেরয়েড ইনহেলার যেটি রয়েছে সেটি দেওয়া। এটা নিলে তার ফোলাটা কমে যাবে, কষ্টটা কমে যাবে। যেই জিনিসটি করলে বাড়ে ট্রিগার ফ্যাক্টর, সেটি বের করা এবং বিষয়গুলো এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
এটা নিয়ে একটু কথা বলা দরকার। আমাদের কাছে এসে অনেকে বলে, ‘ডাক্তার সাহেব চিংড়ি মাছ খাব না, ইলিশ মাছ খাব না, কলা খাব না’। এ রকম বলে। বার্তাটা হলো যেটি আপনার ট্রিগার ফেক্টর, সেটি আপনাকেই বুঝতে হবে। সবার একই জিনিসে হয় না। উপদেশ হলো যেটি করলে আপনার সমস্যাটা বাড়ে, সেটি বের করে চিকিৎসা নিতে হবে। তিন নম্বর হলো, এর একটি দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা দরকার। আমরা করি কী? দুই মাস নেওয়ার পর ভালো হয়ে গেছি, ওষুধ বন্ধ করে দেই। আবার চলে আসে। এর ওষুধ দীর্ঘদিন নিতে হয়। স্টেরয়েড ইনহেলার নিতে হয়। নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তিন মাস পরপর রোগীকে দেখে ওষুধ কমিয়ে দেন বা বাড়িয়ে দেন। কমিয়ে দেওয়ার পর আবার তিন মাস পরপর আসতে হয়। ধীরে ধীরে ওষুধটা কমাতে হয়। একপর্যায় ওষুধটা নাও লাগতে পারে। কোনো রোগী যদি ওষুধ ছাড়াই ভালো থাকে, আমরা বলি ঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনোভাবেই ওষুধ বন্ধ করা ঠিক হবে না।
অনেকে ভাবেন, ইনহেলার মানুষের শেষ চিকিৎসা। এটি নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা রয়েছে। ইনহেলার প্রয়োজনে নেবেন। প্রয়োজন শেষ হলে অবশ্যই ছেড়ে দেবেন। কমিয়ে দেওয়া যাবে। আর এটিই শেষ চিকিৎসা নয়। এটি হলো প্রথম চিকিৎসা। ইনহেলারের সুবিধা হলো এতে ওষুধের পরিমাণ কম লাগে। দ্বিতীয়ত, এটি সরাসরি শ্বাসনালিতে ঢুকে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে কাজ করছে। ট্যাবলেট খেলে কী হবে? সঙ্গে সঙ্গে পাকস্থলীতে যাবে। শোষণ হবে, রক্তে যাবে। এরপর শ্বাসনালিতে যাবে, এরপর কাজ করবে। দুই থেকে চার ঘণ্টা। তবে ইনহেলারটা ভালো যদি সঠিকভাবে নিতে পারে।