শিশু বুকের দুধ না পেলে কী করবেন?
শিশু জন্মের পর মায়ের বুকের দুধ পাচ্ছে না, এমন অভিযোগ অনেকেই করেন।এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
এ বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৯২তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. মশিউর রহমান। বর্তমানে তিনি ইউনাইটেড হসপিটালের নবজাতক ও শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয় কী?
উত্তর : মায়েরা শিশুকে দুধ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে পজিশন বা অঙ্গবিন্যাসে ভুল করে। শিশু শুয়ে রয়েছে, মা গিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে। শিশুটিকে অবশ্যই ৪৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ধরে নিয়ে এরপর সম্পূর্ণ নিপল ও ব্রেস্টের কালো যে অংশটি পুরোটাই শিশুর মুখে দিতে হবে। তা না হলে দুধ কম হতে পারে অথবা সমস্যা হতে পারে। শিশুকে যখনই বুকে লাগায়, তখন একটি বার্তা চলে যায় মস্তিষ্কে সেখান থেকে একটি হরমোন আসে একে বলে প্রোল্যাকটি। এই হরমোন মস্তিষ্ক থেকে এসে মায়ের বুকের দুধ তৈরি করে। কাজেই শিশুকে ঘন ঘন বুকে লাগানোটা খুব জরুরি। এই জন্য বলছি যে, অনেক মা রয়েছে যারা ভাবে, বুকে লাগাব না, আমি পাম্প করে নিয়ে খাওয়াব। তাহলে হবে কি শিশু স্পর্শ করলে যে হরমোন বের হতো, সেটি আস্তে আস্তে না হতে হতে হরমোন থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।
আর মায়েদের আমি পরামর্শ দেব, মায়েদের বুকের দুধ বাড়ানোর ক্ষেত্রে কিছু কৌশল রয়েছে। ঘন ঘন শিশুকে বুকে লাগালে বুকের দুধ বাড়ে। আর মায়ের মনে যদি অশান্তি থাকে বা মা যদি অখুশি থাকে, তাহলে একটি হরমোন আসে, যেটি হলো অ্যাডিনাইন। এই অ্যাডিনাইন এসে দুধটা কমিয়ে দেয়। কাজেই মাকে অনেক বেশি হাসি খুশি থাকতে হবে। মায়ের চারপাশে যারা রয়েছে, তারা যেন মায়ের সঙ্গে খুব সুন্দর ব্যবহার করে, মায়ের সমস্যাগুলো সমাধান করে, মাকে আনন্দে রাখে। ভালো একটি পরিবেশ যেন বজায় রাখে। মা যদি স্বস্তির সঙ্গে থাকে তাহলে দুধ বাড়বে। কিছু কিছু খাবার রয়েছে এগুলো খেলে বুকের দুধ আসে। বুকের দুধ হলো একটি তরল পদার্থ। মা যেন অনেক তরল খায়। প্রতিদিন এক থেকে তিন গ্লাস দুধ খেল। সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য তরল খাবার খেল।
স্যুপ, জুস পানীয় এগুলো পান করল। মায়ের যদি নিজেরই শরীরে পানিশূন্যতা থাকে, তাহলে তো দুধ শূন্যতা হয়ে যাবে। কাজেই এই জিনিসটা খেয়াল করতে হবে। আর মায়ের তরল পদার্থ ঠিকমতো পান হচ্ছে কি না, সেটি কিন্তু মায়ের প্রস্রাবের রং দেখলেই বুঝতে পারবে। রংটা যদি হলুদ হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে তরল পদার্থ কম খাচ্ছে। আর রংটা যদি সাদা পানির মতো হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে তার তরল পদার্থের চাহিদা শরীর থেকে মিটে যাচ্ছে। আর লাউ ও কালিজিরার মধ্যে কিছু একটা পদার্থ রয়েছে, যেগুলো খেলে দেখা যায় যে মায়ের বুকের দুধ বাড়ছে। কাজেই সকালে, দুপুরে, রাতে তিন বার/চার বার করে লাউ, কালিজিরা খেতে পারে।
মায়ের বিশ্রামও দরকার। দেখা গেছে, মায়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নয় ঘণ্টা যদি ঘুম না হয়, তাহলে কিন্তু দুধ কমে যায়। মা যেন নয়টা ঘণ্টা অন্তত বিশ্রাম নিতে পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।