কোমরের বাত রোগ কী?
বাত বলতে আমরা ভাবি, গিরা বা জয়েন্টের বাতের কথা। তবে কোমরেও বাত হতে পারে। কোমরের বাতের বিষয়ে এনটিভির নিয়মিত আয়োজন স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ৩২৯৯তম পর্বে কথা বলেছেন ডা. ফয়সাল আহমেদ।
ডা. ফয়সাল আহমেদ বর্তমানে বিআরবি হাসপাতালের রিউমাটোলজি বিভাগের পরামর্শক হিসেবে কর্মরত।
প্রশ্ন : কোমরের বাত রোগ কী? কেন একে শুধু কোমরের বাত রোগ বলা হচ্ছে?
উত্তর : বাত রোগ বলতে শুধু মনে হয় গিরা ধরবে, গিরা ব্যথা করবে। কিন্তু আসলে বাত রোগ তো অনেক রকম রয়েছে। বলা হয়, সিডিসির গাইডলাইন অনুসারে প্রায় সাড়ে ছয়শর বেশি বাত রোগ রয়েছে। এখন বাত রোগ যখন গিরায় ধরে, তখন সেটি গিরার বাত রোগ। যখন এটি কোমরকে ধরে, তখন সেটি কোমরের বাত রোগ। কোমরে অনেক রকম বাত রোগ রয়েছে। প্রদাহজনিত কোমর ব্যথা নিয়ে অনেকে আসে, স্পনডাইলাইটিস আরথ্রাইটিস দল রয়েছে, এরা আসে। এরপর হাড় ক্ষয় বাত রোগ হতে পারে। যেমন : অস্টিওআরথ্রাইটিস। লাম্বার স্পনডাইলাইটিস, লাম্বার স্পনডাইলিসথেসিস। এ ছাড়া কোমরে সংক্রমণ নিয়ে আসতে পারে। কোমরে ক্যানসার নিয়ে আসতে পারে। অনেক ক্যানসার যেমন মাল্টিপল মায়ালোমা নিয়ে আসে বা অন্য একটি ক্যানসার, যেটি কোমরকে আক্রমণ করছে। সেভাবেও আসতে পারে।
আমরা যেহেতু বাত রোগ নিয়ে আলাপ করছি, সেহেতু স্পনডাইলো আরথ্রাইটিস নিয়ে আলাপ করব। এই দলে প্রায় পাঁচ ধরনের বাত রোগ রয়েছে। একটিকে বলা হয়, অ্যাংকাইলোজিং স্পনডিলাইটিস, আরেকটি রয়েছে স্পনডাইলো আরথ্রাইটিস পেরিফেরাল, যেটি অ্যাকটিভ আরথ্রাইটিস। আরেকটিকে বলা হয় সোরিয়াটিক আরথ্রাইটিস। এটি এক ধরনের চর্ম বাত রোগ। কিন্তু সেটা কোমরে ধরে, গিরাও ধরতে পারে। আরো এক ধরনের বাত রোগ, যাকে বলে আনডিফারেন সিয়েটেট আরথ্রাইটিস। কোনোভাবে এর কারণ বের করা যায় না। কিন্তু এটি কোমরে ধরতে পারে, গিরায়ও ধরতে পারে। স্পনডাইলোআরথ্রাইটিসের মধ্যে বলা হয় এটা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ রোগীর হয়ে থাকে। এটি খুব প্রচলিত বাত রোগ।
অ্যাংকাইলোজিং স্পনডিলাইকোজিং নিয়ে যদি আলাপ করি, এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোমরকে আক্রমণ করে। সাধারণত এটি পুরষদের বেশি হয়ে থাকে। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী পুরুষদের এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে। এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বয়স। এই বয়সে আমাদের কাজ করার সময়। এই বয়সেই এই বাত রোগটা ধরে। এটা যখন কোমরকে আক্রমণ করে, তখন কোমরে ব্যথা থাকে। ব্যথাটা একটু অন্যরকম। ভোর রাতের দিকে, সকালবেলা, কোমরটা শক্ত থাকে। ভোরবেলা ব্যথাটা বেশি হবে। হাঁটাহাঁটি করলে বা কাজ করলে ব্যথাটা কমে যাবে। একই সঙ্গে এরা অন্য গিরায়ও ধরতে পারে। এই বাত রোগ আবার অনেক সময় চোখে ধরে। চোখ ধরা অ্যাংকাইলোজিং স্পনডিলাইটিসে হয়। তাদের চোখ লাল হয়ে যায়। চোখে ব্যথা করে এবং চোখ দিয়ে পানি পড়তে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এই রোগটি যখন দীর্ঘদিন হয়ে যায়, ১০ বছরের বেশি, তাদের হার্টের ভাল্ভ ধরতে পারে। হার্টের যে অ্যাওটা সেই ভাল্ভকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এটি অপ্রচলিত হয়। এটি কিডনিতে ধরে।