শিশুদের যক্ষ্মায় সচেতনতা জরুরি

Looks like you've blocked notifications!
ডা. সুরাইয়া বেগম

যক্ষ্মা বা টিউবারকলোসিস (টিবি) একটি মাইকোব্যাকটেরিয়াল রোগ। যক্ষ্মায় আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে শিশুর যক্ষ্মা হতে পারে। তাই সচেতনতা খুব জরুরি। আজ বুধবার (২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫) এনটিভির স্বাস্থ্য প্রতিদিন অনুষ্ঠানের ১৯৫৭তম পর্বে এ বিষয়ে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুরাইয়া বেগম।

প্রশ্ন : শিশুদের যক্ষ্মা হওয়ার কারণ কী?

উত্তর : শিশুদের যক্ষ্মা বা টিবি যদি বলি তাহলে আমরা বলব এটি একটি জীবাণুবাহিত (ইনফেকশাস) রোগ। এর জীবাণু যখন শিশুর শরীরে প্রবেশ করবে তখন এই রোগটি হবে। এই জীবাণুটি সাধারণত একটি বায়ুবাহিত রোগ। যার টিবি অথবা যক্ষ্মা আছে তার হাঁচি কাশির মাধ্যমে এই জীবাণু ছড়ায় এবং সেটি শিশুর শরীরে প্রবেশ করে। প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ তৈরি করে।

প্রশ্ন : তার মানে একটি শিশুকে সেইভাবেই রাখা উচিত যাতে শিশু যেন যক্ষ্মাক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসে। এই বিষয়ে আপনার পরামর্শ কী?

উত্তর : সাধারণত শিশুটি আক্রান্ত হয় তার পরিবার, আত্মীয়স্বজন অথবা বাসার লোকজন দ্বারা অথবা পাড়া প্রতিবেশী যাদের যক্ষ্মা থাকে তাদের মাধ্যমে। সেই ক্ষেত্রে যেই বাসায় যক্ষ্মা হয়েছে সেই বাসার লোকদের একটি স্ক্রিনিং করি। যদি পাঁচ বছরের নিচে কোনো শিশু থাকে তাদের আমরা বিশেষ চিকিৎসা দিয়ে থাকি। আর পাঁচ বছরের উপরে যেসব শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একটু কম থাকে তাদের ক্ষেত্রেও আমরা এটি দিয়ে থাকি। এটি শিশুর যক্ষ্মা প্রতিরোধ করার একটি পদ্ধতি।

এ ছাড়া শিশুর জন্মের পর পরই আমরা বিসিজি ভ্যাকসিন দিয়ে দিতে পারি।

    

প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রে কী যক্ষ্মার উপসর্গ বড়দের মতো প্রকাশ পায়?

উত্তর : শিশুদের যক্ষ্মার উপসর্গগুলো বড়দের যক্ষ্মার উপসর্গ থেকে কিছুটা ভিন্ন। যদি দুই সপ্তাহের বেশি জ্বর থাকে, দুই সপ্তাহের বেশি কাশি থাকে, ওজন কমে যায়, গত তিন মাসে তার ওজন বাড়েনি- এগুলো শিশুর যক্ষ্মার কিছু উপসর্গ। সেই ক্ষেত্রে আমরা শিশুর পরীক্ষা করি- যক্ষ্মা আছে কি না এরপর ডায়াগনোসিস করি।

প্রশ্ন : যক্ষ্মা আছে কি না সেটা আপনারা কীভাবে নির্ণয় করেন?

উত্তর : বড়দের ক্ষেত্রে কাশি থাকে। কাশি থেকে কফ পরীক্ষা করে আমরা যক্ষ্মা আছে কি না তা নির্ণয় করি। কিন্তু শিশু এই কাশি বের করতে পারে না। যার  জন্য শিশুদের ক্ষেত্রে যক্ষ্মার ডায়াগনোসিস করা একটু কঠিন। সেই জন্য আমরা কতগুলো ভাগ (ক্রাইটেরিয়া) করি। কিছু লক্ষণ, যেমন : জ্বর দুই সপ্তাহের বেশি, কাশি দুই সপ্তাহের বেশি, ওজন কমে যাওয়া, বাচ্চার খেলাধুলা কম করা- এগুলো যদি থাকে তখন আমরা আবার কিছু চিহ্ন দেখি। যেমন : শিশুর যক্ষ্মা কেবল ফুসফুসে হয় না। ফুসফুস ছাড়া অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোতেও হয়। ফুসফুসে পানি এসেছে কি না, এবডোমিনে পানি এসেছে কি না, জয়েন্ট ফুলে গেল কি না, শিরদাঁড়ায় কোনো সোয়েলিং হলো কি না– এই লক্ষণগুলো যদি আমরা পাই তখন বলি শিশুটির যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা আছে। তারপরও আমরা কিছু টেস্ট করি, সিবিসি, এমটি, এক্সরে চেষ্ট করি। আর যেসব বাচ্চা কফ তৈরি করে তাদের কফ পরীক্ষা করি। আর যদি না পারে গ্র্যাস্টিক লেভেজ (টিউব দিয়ে পাকস্থলি থেকে তরল পদার্থটি নিয়ে পরীক্ষা করা) করি। তবে এটা শিশুদের ক্ষেত্রে একটু কঠিন।

প্রশ্ন : শিশুদের ক্ষেত্রেও বড়দের মতো চিকিৎসা করা হয়?

উত্তর : শিশুর চিকিৎসাটিও মোটামুটি একই রকম। আমরা প্রথম দুই মাস তিন থেকে চারটি ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেই। পরবর্তী চার মাস আমরা দুটো ওষুধ দিয়ে থাকি। এর ব্যাপ্তি হচ্ছে ছয় মাস। তবে মস্তিস্কের ( ব্রেন) টিবি, শিরদাঁড়ায় (স্পাইনাল) টিবি, পেটে (এবডোমিনাল) টিবি এসব ক্ষেত্রে আমাদের সময়টা বেড়ে যায়।

প্রশ্ন : শিশুর যক্ষ্মার চিকিৎসা ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার পরও কি পুনরায় যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সে ক্ষেত্রে হলে কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?

উত্তর : এটি যেকোনো সময় আবার হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আবারও পরীক্ষা করে যক্ষ্মা আছে কি না সেটি দেখব। ছয় মাসের মধ্যে যদি হয় তাহলে আমরা চিন্তা করি ওষুধগুলো কাজ করেনি। আর ছয় মাসের পর যদি হয় তাহলে আগের ওষুধগুলোই দেই। আর ছয় মাসের মধ্যে হলে আরো কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ওইভাবে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

প্রশ্ন : যদি অসাবধানতা বা কোনো কারণে ওষুধের কোর্স শেষ করানো না হয় বা যদি চিকিৎসাই করানো না হয় সে ক্ষেত্রে  কী ধরনের সমস্যা হতে পারে?

উত্তর : যদি ঠিক মতো ওষুধ না খায় তাহলে শিশুটির ড্রাগ রেজিসটেন্স হতে পারে। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যান্য ওষুধ দেওয়া হয়। রোগীর যদি মস্তিস্কের টিবি হয় তখন সে মানসিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হতে পারে। তারপর চোখের সমস্যা, কানের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে। তা ছাড়া মৃত্যুর ঝুঁকিও বেড়ে যায়। আর শিরদাঁড়ায় টিবি হলে পেরালাইসিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে।